দেশের পর্যটন খাত উন্নয়নের লক্ষ্যে কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন গাইডলাইন করেছে সরকার। বেসামরিক বিমান, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এ ‘কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন গাইডলাইন, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে। এ গাইডলাইন করার প্রেক্ষাপটে জানানো হয়, পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় স্থান বা এর আশপাশে বসবাসকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না হলে স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতি, প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস, সামাজিক মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্ষুণœ হতে পারে। কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি, পর্যটনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস এবং পর্যটন সাইটগুলোর প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে পারে, যা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেক দেশ কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্তরে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, কারণ তারা কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন উদ্যোগকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবিকা নির্বাহের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা তৃণমূল পর্যায়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিস), বিশেষত লক্ষ্য ৮ (শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি), লক্ষ্য ১১ (টেকসই শহর ও সম্প্রদায়) এবং লক্ষ্য ১২ (দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন) অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন বাংলাদেশে একটি সময়োপযোগী ও কার্যকর মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন গাইডলাইনে বাংলাদেশের কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান, আগ্রহী পরিবার এবং সম্ভাব্য বাজার চিহ্নিতকরণ, উন্নয়ন, বিপণন ও প্রসারের পদ্ধতির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানে কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন কার্যক্রম চালু, উন্নয়ন ও বিকাশ সাধন এবং এর স্থায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এই গাইডলাইনেরই মূল উদ্দেশ্য।
এ ছাড়া দেশে বিপুল জনপ্রিয় এবং অতিব্যবহারে যেসব পর্যটন স্পটে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সারা দেশে বৈচিত্র্যময় জীবনধারাকে পর্যটনের আওতায় আনার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে রূপান্তরিত করাই কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের উদ্দেশ্য বলেও গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিউনিটি পর্যটনের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিতকরণ, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের বাজার সম্ভাবনা চিহ্নিতকরণ, কমিউনিটি পর্যটন বিকাশের জন্য প্রতিপালনযোগ্য বিষয়গুলো, স্বাস্থ্য পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা, মান ও সেবার মানদ-, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন উন্নয়নের সহযোগিতা এবং সমন্বয়, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের অংশীজন সম্পৃক্তকরণ, প্রভাব নিয়ন্ত্রণ, কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণ, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন প্রচারের পদ্ধতি, পর্যটক প্রাপ্তির চ্যানেল (প্রচলিত চ্যানেল ও ডিজিটাল চ্যানেল), প্রচারণা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের জন্য কমিটি (জাতীয় কমিউনিটি পর্যটন স্টিয়ারিং কমিটি ও জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি), তহবিলের উৎস বা বাজেট প্রণয়ন গাইডলাইনে এসব বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন