ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে শিগগিরই নিজেদের অবস্থান জানাবেন তারা।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জাল গত বৃহস্পতিবার আলজাজিরা অ্যারাবিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
নাজ্জাল বলেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থে তাদের মতামত প্রকাশ করার অধিকার রাখে হামাস।
হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি ২০ দফাবিশিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে সরে যাওয়া, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন।
গত মঙ্গলবার এ পরিকল্পনার ব্যাপারে সম্মত হতে হামাসকে তিন-চার দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প।
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তবে ফিলিস্তিনের অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ইসরায়েলকেই বেশি সুবিধা দেবে।
আগের আলোচনাগুলোর সময় হামাস দাবি করেছিল, ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরিভাবে গাজা থেকে সরে যেতে হবে। তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি করেছিল, যেন গাজা উপত্যকা, বিশেষ করে গাজার উত্তরাংশ থেকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। সেখানে জোরেশোরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গতকাল সকালে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বলেন, কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে মিলে তার দেশের সরকার হামাসকে ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন।
গতকাল প্যারিসের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে বক্তব্য দিতে গিয়ে বদর আবদেলাত্তি আরও বলেন, এটা পরিষ্কার যে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং ইসরায়েলকে গাজায় হামলা চালানোর মতো কোনো অজুহাত তৈরির সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর তিন গুণও হতে পারে।
আবদেলাত্তি বলেন, ‘এটা প্রতিশোধকে ছাপিয়ে গেছে। এটা স্পষ্টত জাতিগত নিধন। যথেষ্ট হয়েছে।’
দুই গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর মনে করে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ৫৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ২০ জন। এ ছাড়া এখনো যারা গাজা সিটিতে বসবাস করছেন, তাদেরকেও হুমকি দিয়েছে দখলদাররা। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজা সিটিতে এখনো যারা আছেন, এটি তাদের শেষ সুযোগ সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক্সে বলেছেন, যারা থেকে যাবেন তারা ‘সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসের সমর্থক’ বলে বিবেচিত হবেন।
ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ২২৫ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৮ জন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন