বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

বললেন সায়েদুর রহমান

প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায়  যুক্ত হচ্ছে মেডিকেল অক্সিজেন

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায়  যুক্ত হচ্ছে মেডিকেল অক্সিজেন

দেশে মেডিকেল অক্সিজেনকে শিগগিরই অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, অক্সিজেন একটা ওষুধ তাই এর ওই গুরুত্বটা পাওয়া দরকার। এটা জরুরি ওষুধের তালিকায় যুক্ত হওয়া দরকার। গতকাল মঙ্গলবার দেশের প্রথম ‘অক্সিজেন সামিট’-এ তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করে আইসিডিডিআরবি, দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ, এভরি ব্রেথ কাউন্টস ও ইউনিটএইড।

এ সময় অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘রোগীর প্রয়োজনে অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা দরকার। অক্সিজেনের প্রাপ্যতায় বৈষম্য আছে এখনো। এটা অ্যাফোর্ডেবল কি না, সেটি জটিল প্রশ্ন। আমরা যদি ঢাকার বুড়িগঙ্গার পাড় থেকে উত্তরা পর্যন্ত যাই, অক্সিজেনের দাম হাসপাতাল অনুযায়ী ভেরি করতে থাকবে, একেক হাসপাতালে একেক দাম। সেটা একই মানের অক্সিজেন হলেও। আমরা এটাকে এসেনসিয়াল মেডিসিন হিসেবে ডিক্লেয়ার করব এবার। এটা হলে দাম নিয়ন্ত্রণ এবং অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালায়ের বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৯টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট কার্যকর আছে। আর প্রায় ৭০টির মতো প্ল্যান্ট অকার্যকর। এসব অকেজো প্ল্যান্ট সচল করার জন্য ন্যাশনাল অক্সিজেন নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে বলা হচ্ছে, দেশের সব উপজেলায় মনে হয় অক্সিজেন অ্যাভেইলেবল, এটা আসলে সত্য না। এই সত্যটা মেনে আমরা চেষ্টা করব দেশের যত উপজেলা হাসপাতাল আছে সবখানে অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে।

আমাদের লক্ষ্য অকার্যকর প্লান্ট এবং সরবরাহ ব্যবস্থা এগুলোর একটু রিলোকেট করা।’ সরকার দেশেই অক্সিজেন তৈরির ওপর খুব গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে বিশেষ সহকারী সায়েদুর বলেন, ‘এটা একটা সিকিউরিটি কনসার্ন। আমাদের সরকার কয়েকটা বিষয় নিয়ে কথা বলছি, এগুলোকে সার্বভৌমত্বের অংশ হিসেবে দেখা দরকার। তার মধ্যে একটা হচ্ছে অক্সিজেন, একটা হচ্ছে ভ্যাকসিন। আমরা কয়েক দিন ধরে খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি অ্যান্টিভেনোমের কথা, অ্যান্টি র‌্যাবিসের কথা। এর মানে হচ্ছে বিষয়গুলোর অনুপস্থিতি রাষ্ট্রকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। রাষ্ট্রের পরনির্ভরশীলতা (জরুরি এসব জিনিসের জন্য) এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্য বা প্রাণের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। 

সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে ৮৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ৭০ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনের সময় মেডিকেল অক্সিজেন পায় না।

হাসপাতালে অক্সিজেন স্বল্পতা রয়েছে, এর দায় সরকারের : স্বাস্থ্য সচিব
হাসপাতালে অক্সিজেনের স্বল্পতা এবং সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এর দায় সরকারের। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সময়মতো অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং পৌঁছানো করোনার সময় সমস্যা ছিল। তখন সরকার ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বিপদ চলে গেলে সেটি আর অব্যাহত রাখা হয়নি। এ বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআরবি আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশে অক্সিজেনের চাহিদা, প্রাপ্যতা, নীতিমালা, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও গবেষণার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকেন্দ্রিক গবেষণা উপস্থাপনার পাশাপাশি ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশন প্রতিবেদন ও মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটির অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত বৈশ্বিক তথ্য-প্রমাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও উপস্থাপিত হয়। স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘আমাদের জনবলের ঘাটতি আছে, সেটি পূরণ করতে হবে। সব রোগী যেন অক্সিজেন পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পুরোনো এবং নতুন সব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।’

সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর, পরিচালক (হাসপাতাল) এ এইচ এম মইনুল আহসানসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।

আয়োজকরা বলছেন, মেডিকেল অক্সিজেন এক অপরিহার্য জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী, কিন্তু এর নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সব বয়সি মানুষের জন্যই অক্সিজেন কতটা জরুরি তা বোঝা গেছে। কিন্তু এ জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেনের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঘাটতি ও বৈষম্য লক্ষণীয়।

গবেষণার চিত্র:

গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিকেলে অক্সিজেনের প্রয়োজন প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু এর সরবরাহ অপর্যাপ্ত। তাই পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং অক্সিজেন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোগী ও স্বজনদের সাক্ষ্য থেকে দেখা যায়, অক্সিজেন সেবা ও পালস অক্সিমিটার ব্যবহারে এখনো বিপুল পরিমাণ ব্যয় বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাই সরকারকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় পালস অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সেবা অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ব্যবহার ফি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সমন্বয় অপরিহার্য:

প্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিকেল অক্সিজেন শিল্প খাত এখন জনস্বাস্থ্য ও মহামারি প্রস্তুতি ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারের দায়িত্ব হলো বাজারের নিরাপত্তা, প্রতিযোগিতা ও মূল্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক ফার্মাকোপিয়ার (নির্দেশিকা) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অক্সিজেনের মান ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা।

এ ছাড়া অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট ‘অক্সিজেন অ্যাক্সেস টার্গেট’ নির্ধারণ করে তা প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে এ খাতের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হবে, যেমনটি তারা ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রে করে থাকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও দাতাদের উচিত অক্সিজেন প্রাপ্তিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অগ্রাধিকারে রাখা, বৈশ্বিক অক্সিজেন অ্যালায়েন্সকে সহায়তা করা এবং বৈশ্বিক তহবিলের অর্থায়নে অক্সিজেন প্রাপ্তিকে একটি শক্তিশালী অঙ্গীকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।

নির্ভুল ও সময়োপযোগী তথ্য:

লানসেটের গবেষণা বলছে, বর্তমানে অক্সিজেন কভারেজ, ব্যয়-সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা এবং রোগীভিত্তিক সেবার তথ্যের ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে দুটি নতুন সরঞ্জাম প্রস্তাব করা হয়েছে- ‘১০টি অক্সিজেন কভারেজ সূচক’ ও ‘জাতীয় অক্সিজেন অ্যাক্সেস স্কোরকার্ড’। এগুলো ব্যবহার করে সরকার জাতীয় অক্সিজেন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে পারবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তী বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কাঠামোয় সমতা ও টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত ও শক্তি-সাশ্রয়ী অক্সিজেন যন্ত্র ব্যবহার এবং স্থানীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা হলে ব্যয় কমবে, পরিবেশ রক্ষা হবে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাও হবে আরও শক্তিশালী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই বিনিয়োগ ও পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে জাতীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা শুধু রোগীর জীবন রক্ষায় নয়, বরং ভবিষ্যতের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায়ও নেতৃত্ব দিতে পারে।

এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বক্তব্য দেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!