ফানুস উৎসবে আকাশ রাঙানোর পর এবার প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে কল্পজাহাজ ভাসানোর উৎসবে মেতেছেন কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়। ২০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসা এই উৎসব দেখতে জড়ো হন হাজারো মানুষ। জাহাজগুলো যাচ্ছে নদীর এপার থেকে ওপারে। সেই জাহাজে চলছে শত শত প্রাণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। শুধু তাই নয়, নদীর দুই পাড়েও উৎসবে আনন্দে মেতেছে হাজারও নর-নারী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকমল বড়ুয়া, জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মো. সাইফ উদ্দীন শাহীন ও কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল।
কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলা সদর পার হয়েই বাঁকখালী নদীর ঘাট। রঙিন আলো আর উৎসবের উচ্ছ্বাসে মুখর রামুর বাঁকখালী নদীর তীর। প্রবারণা পূর্ণিমা উপললেমঘ প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কল্পজাহাজ ভাসানোর উৎসব।
বাঁশ, কাঠ, বেত আর রঙিন কাগজে তৈরি একেকটি কল্পজাহাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হাতি, ময়ূর, হাঁসসহ নানা প্রাণীর অবয়ব। কারুকার্যে দৃষ্টিনন্দন এসব জাহাজ ভাসানো হচ্ছে নদীতেÑ এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে।
চমৎকার নির্মাণশৈলী আর বৈচিত্র্যে ভরা প্রতিটি জাহাজেরই রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখে মনে হবে এখনই যেন বাঁধ ভাঙবে! এসব ভাসমান জাহাজে চলছে বৌদ্ধকীর্তন। কেউ নাচছেন, কেউ গাইছেন আবার কেউ ঢোল, কাঁসাসহ নানা বাদ্য বাজাচ্ছেন। গান, কীর্তন, ঢোল, কাঁসার তালে নাচে-গানে মেতে ওঠে উৎসবে অংশ নেওয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষও এতে অংশ নেয়।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অংশগ্রহণকারী জাহাজের সংখ্যা কম। সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়ে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। যে কারণে অনেক গ্রামে এবার জাহাজ তৈরি করা হয়নি।
দুপুর থেকে বিকেল গড়াতেই নদীর দুই পাড়ে জমে ওঠে মানুষের ঢল। কেউ জাহাজ ভাসাচ্ছেন, কেউ আকাশে ওড়াচ্ছেন ফানুস। রঙিন আলো আর সংগীতে মুখরিত চারপাশ।
২০০ বছরের ঐতিহ্য আর ধর্মীয় বিশ্বাসের মেলবন্ধনে কল্পজাহাজ ভাসানোর এই উৎসব এখন কেবল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নয়, হয়ে উঠেছে রামুবাসীর মিলনমেলা। শান্তি আর সৌহার্দ্যরে বার্তা ছড়িয়ে আকাশে মিশে যাবে এসব রঙিন কল্পজাহাজ, এমনটাই আশা সবার।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন