রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

টাইফয়েড মুক্তির পথে যাত্রা শুরু

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

টাইফয়েড মুক্তির পথে যাত্রা শুরু

একটা সময় দুঃস্বপ্নের মতো ছিল পোলিও রোগটি। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যতম সফলতার অংশ হিসেবে টিকাদানের মাধ্যমে ২০১৪ সালে বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় দেশকে টাইফয়েডমুক্ত করতে আজ রোববার থেকে যাত্রা শুরু করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

‘টাইফয়েড কনজুগেট টিকা’ নামে পরিচিত এই টিকাটিকে খুবই নিরাপদ ও কার্যকরী উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক যাচাইকৃত। প্রোটিন আর শর্করায় ভরপুর এই টিকাটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রমাণিত হওয়ার পরই ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সারা দেশে একযোগে শুরু হচ্ছে এ কর্মসূচি। আগামী এক মাসে দেশের ৫ কোটি শিশুকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করবে সরকার। টিকার সফলতা পরীক্ষা করে পর্যায়ক্রমে এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আক্রান্ত ও মৃতদের বেশির ভাগই দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় বসবাসকারী মানুষ। সংস্থাটির মতে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কম হলেও বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি।

দ্য গ্লোবাল বারডেন অব ডিসেজের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার জন টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয় এবং ৮ হাজার জন্য মৃত্যুবরণ করে। যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই শিশু। 

জীবাণুঘটিত রোগটি যা আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা করালে আশংকার কিছু নেই। কোনো কারণে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। রোগটি সালমোনেলা টাইফি নাম ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ছড়ায়। তা ছাড়া কাছাকাছি প্রজাতির সালমোনেলা প্যারাটাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্যারাটাইফয়েড ছড়ায়। প্যারাটাইফয়েড টাইফয়েডের মৃদু প্রকাশ। সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি দূষিত পানি, দুধ ও খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। যেসব এলাকায় টাইফয়েড রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সেসব এলাকায় ভ্রমণ করলে রোগটি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে বা তাদের হাতে তৈরি খাবার খেলেও রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। 

সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষয় সেটি হলোÑ এটিতে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পর্যন্ত স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না। জ্বর এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলেও কখনো বাড়তে বা কমতে পারে তবে ছেড়ে যায় না। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত টানা জ্বর থাকতে পারে। প্রচ- মাথাব্যথা, পেটব্যথা, শরীর ব্যথা, গলাব্যথা হতে পারে, শরীর দুর্বলতা, অস্বস্তি, শরীর ঝিমঝিম করা, কফ, কাশি দেখা দেয়, চামড়ার নিচে লালচে দানা দেখা দেয়, শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, বমি হতে পারে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে।

এসব ছোটখাটো জটিলতার পাশাপাশি মারাত্মক ধরণের শারীরিক ক্ষতিও হয় এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের। যেমন, রোগী অচেতন ও বিকারগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে, পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ, এমনকি ছিদ্র পর্যন্ত হতে পারে, মস্তিস্ক, অগ্ন্যাশয়, পিওথলি, মেরুদ-ে প্রদাহ হতে পারে, নিউমোনিয়া, শরীরের ত্বকে ফোঁড়া, ¯œায়বিক দুর্বলতা, কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও অস্থি ও অস্থিসন্ধির প্রদাহ প্রভৃতি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। 

এতদিন শুধু জ্বর কমানোর জন্য ওষুধেই এর চিকিৎসা হলেও এবার থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য স্বস্তির উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এতদিন ছন্নছাড়াভাবে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিলেও এবারই প্রথম এটি ক্যাম্পেইন আকারে করা হচ্ছে। এক মাসের এই কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রায় ৫ কোটি শিশুকে বিনা মূল্যে দেওয়া হবে এই টিকা। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই টিকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।

ইতিমধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে। কোনো দেশেই বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তিনি জানান, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এই টিকা, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহযোগিতায়।  

আজ রোববার আজিমপুরের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্রে উদ্বোধন হবে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫-এর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। জন্মসনদবিহীন শিশুরাও এই টিকার আওতায় থাকবে যাতে কেউ বাদ না পড়ে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় এই টিকা পাবে। এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি অন্যান্য শিশুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা পাবে। শহরের পথশিশুদের টিকাদানের দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও। সরকারের লক্ষ্য এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া। ইতিমধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু নিবন্ধন করেছে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো চালু রয়েছে। জন্মসনদ না থাকলেও নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করা যাবে।

অভিভাবকেরা সন্তানদের নিবন্ধনের জন্য যঃঃঢ়ং://াধীবঢ়র.মড়া.নফ/ৎবমরংঃৎধঃরড়হ/ঃপা ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। নিবন্ধনের পর সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে। ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে এবং পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রম চলবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই ক্যাম্পেইন সফল হলে টাইফয়েড প্রতিরোধে বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করবে। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এ ব্যাধি থেকে শিশুদের সুরক্ষায় এটি হবে সরকারের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

টিকা গ্রহণের পূর্বে ও পরে করণীয় হিসেবে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, টিকা গ্রহণের পূর্বে সকালের নাস্তা খেয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ খালি পেটে টিকা নেওয়া যাবে না। টিকা গ্রহণের পর অন্তত ৩০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে বসে থাকতে হবে।

এই টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই টিকা নতুন হলেও অন্যান্য টিকার মতোই সামান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন টিকা দেওয়ার স্থানে চামড়া লাল হওয়া, সামান্য ব্যথা, অল্প জ¦র, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ভাব এবং মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। যা এমনিতে ভালো হয়ে যায়।

তিনি জানান, সরকারের উদ্যোগে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় এই ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি সব শিশু, প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীরা ১ ডোজ টিকা পাবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!