- শেখ হাসিনার মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু
- অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা
- বিচারকদেরও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা দরকার: ট্রাইব্যুনালের অভিমত
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা হয়েছে। পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচারের সময় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার অ্যাটাক (হামলা) হয়। ফেসবুক পেজটি সাময়িকভাবে ডিজেবল (নিষ্ক্রিয়) করে দিয়েছিল হামলাকারীরা। পরে সেটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘তারা (হামলাকারীরা) যে আমাদের ভয় পায়, এই যে যুক্তিতর্ক, এটার যে এভিডেন্স, তাদের যে নিষ্ঠুরতার বর্ণনা, এটা যাতে দুনিয়াবাসী জানতে না পারে, তাদের জানতে দিতে এই অপরাধীরা চায় না। সে জন্য আমাদের ফেসবুক পেজের ওপর তারা সাইবার হামলা চালিয়েছে।’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের প্রতি বার্তা, অপরাধ করে কখনো পার পাওয়া যাবে না। অপরাধীকে রক্ষা করার কোনো চেষ্টা কোনো দিন বাংলাদেশে সফল হবে না।’
ঐতিহাসিক এই মামলায় গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহিদ আবু সাঈদের পিতাসহ অন্য শহিদদের পরিবারের সদস্যরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া, স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন। গত বুধবার এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সেদিন মামলার ৫৪তম সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি পরিচালনা করেন। আর এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। পরে এই মামলায় তিনি রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন।
এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকা-ের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচারকাজ চলছে।
বিচারকদেরও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা দরকার: অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
যারা বিচার করেন, ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এ মত দেন।
গতকাল ট্রাইব্যুনালে বক্তব্যের একপর্যায়ে তাজুল ইসলাম সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার বলেন, ‘যারা বিচার করেন, তাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটির ব্যবস্থা থাকা দরকার।’ পরে মধ্যাহ্ন বিরতিতে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলার রায়ে ওপেন কোর্টে তিনি একটি রায় দিয়েছিলেন, পরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা পরিবর্তন করেন। এ প্রসঙ্গটি ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করা হলে ট্রাইব্যুনালের মাননীয় চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন