যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে আরও ৩০ ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার মরদেহগুলো গাজার খান ইউনিসের আল নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেয় রেডক্রস।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে দুই ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত পাঠায় হামাস। গত ১৩ অক্টোবর দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। এতে বলা হয়েছিল, একজন জিম্মির মরদেহ দিলে ইসরায়েল ১৫টি মরদেহ ফেরত দেবে।
গতকাল হামাস ২ জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ায় ইসরায়েল ফেরত দিয়েছে ৩০ ফিলিস্তিনির নিথর দেহ।
মরদেহগুলো পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে আল নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছে, ‘বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে ৩০ ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ইসরায়েল থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর দখলদাররা এখন পর্যন্ত ২২৫ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে। ইসরায়েলের কাছে এখনো অনেক ফিলিস্তিনির মরদেহ আছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দিনই ২০ জীবিত জিম্মিকে ফেরত দেয় হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী। এরপর ধীরে ধীরে মৃত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া শুরু করে তারা। হামাস মৃত জিম্মিদের মরদেহ যেসব জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল সেগুলো কয়েকটি ধ্বংসস্তূপের নিচের চাপা পড়েছে। এগুলো উদ্ধার করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
ইসরায়েল দাবি করছে, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে মরদেহ হস্তান্তরে দেরি করছে। গাজার মধ্যাঞ্চল আজ-জুয়ায়দা থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম জানান, ধ্বংসস্তূপে মরদেহ উদ্ধারে হামাস লজিস্টিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়েছে। হামাস ভারী যন্ত্রপাতি ও বুলডোজার প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল এখনো তা অনুমোদন দেয়নি।
এই মরদেহ ফেরত ইস্যুই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলেছে। গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবিÑ এ দুটি বিষয়ও এখন বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
এদিকে, গত বুধবার রাতে ইসরায়েলি বিমান দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে ১০ দফা হামলা চালায়। একই সময়ে উত্তর গাজা সিটিতেও ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ‘নির্দিষ্ট’ হামলা চালিয়েছে সেসব এলাকায় যেখানে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার টনের বেশি জাতিসংঘের ত্রাণ গাজায় পৌঁছেছে। তিনি আরও বলেন, ত্রাণ বিতরণে এনজিওগুলোর অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে হবে। যুদ্ধবিরতির আগের তুলনায় এখন ত্রাণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তবু তহবিল সংকট এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা বড় বাধা হয়ে আছে। সীমান্ত পারাপারও প্রায় বন্ধ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক সামের আবদেল জাবের বলেন, যুদ্ধবিরতির পর ২০ দিনে তারা গাজায় প্রায় ২০ হাজার টন খাদ্য সংগ্রহ করেছেন। জাতিসংঘের সমন্বয় কর্মকর্তা আলাকবারভ জানান, যুদ্ধবিরতির ২০ দফা পরিকল্পনা পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় সম্ভব নয়।
তিনি ইসরায়েলকে আরও এনজিওকে গাজায় কাজের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান। কারণ, ইসরায়েল অনেক সংস্থাকে নিষিদ্ধ করেছে। তাঁর ভাষায়, ‘এনজিও নিবন্ধনের জটিলতা বড় বাধা হয়ে আছে। আমরা বারবার বলছি, মানবিক কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় এনজিওর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ইসরায়েলি হামলায় গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে একাধিকবার স্থান বদল করতে বাধ্য হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপে ফেরা সাহস পাচ্ছে না। কারণ তারা আশঙ্কা করছে, ফেরার পর আবারও হামলা হতে পারে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির পূর্বে তুফাহ ও শুজাইয়া এলাকায় ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে। এ মাসের শুরু থেকে সেখানে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টাÑ পুরো পাড়া-মহল্লা ধ্বংস করে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলা। বুলডোজারে রাস্তা, বাড়িঘর, অবকাঠামোÑ সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যতক্ষণ না গাজা সিটির পূর্বাঞ্চল পুরোপুরি দখলে আসে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন