শেরপুরে কৃষি প্রণোদনার তালিকায় নিজের পছন্দের লোকদের নাম না থাকায় নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একই উপজেলার ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমের বিরুদ্ধে। এর আগে গত বুধবার দুপুরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর কক্ষে কাইয়ুম ও ফজলুর সাথে এ ঘটনা ঘটে। রাহাত হাসান কাইয়ুম নকলা উপজেলার ধুকুরিয়া গ্রামের সুরুজ মোওলার ছেলে এবং ফজলু একই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে।
এ ঘটনার পর রাতেই নকলা থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ছাত্রদল নেতা রাহাত হাসান কাইয়ুম ও সহযোগী ফজলুকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে, রাতেই কৃষি কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করে নকলা শহরে মিছিল করে রাহাতের অনুসারীরা। অপরদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা সোয়া ২টার দিকে রাহাত ও ফজলু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে জানতে চান, কৃষি কর্মকর্তা কেন এখনো বদলি হচ্ছেন না, কারা কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন এবং নেতাদের ভাগ কত। এরপর তারা ছাত্রদলের ভাগ দিতে হবে বলে দাবি করেন। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকদের জন্য। রাজনৈতিকভাবে কাউকে ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। কৃষি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমকে জানালে রাহাত আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সহকারী ফজলুকে নিয়ে অফিসের ভেতরেই কর্মকর্তাকে মারধর শুরু করেন।
ঘটনার সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর কক্ষে প্রবেশ করে আলোচনা করছেন রাহাত। এ সময় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে থাপ্পড় মারেন রাহাত। পরে আবার ওই কর্মকর্তাকে হামলা করলে বাইরে থাকা লোকজন তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।
কৃষি কর্মকর্তা শাহারিয়ার মুরসালিন বলেন, ‘বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে রাহাত ও ফজলু আমার অফিসে এসে জানতে চান, আমি এখনো কেন বদলি হচ্ছি না, কারা কৃষি প্রণোদনা পেয়েছে এবং নেতাদের ভাগ কত। এরপর তারা বলেন, ছাত্রদলের ভাগ তাদের দিতে হবে। আমি জানাই, সরকারি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকদের জন্য, রাজনৈতিকভাবে কারো ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমকে জানাই। পরে রাহাত আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সহকারী ফজলুকে নিয়ে আমাকে অফিসের ভেতরেই মারধর করেন। পরে আমি চিৎকার করলে তারা দ্রুত পালিয়ে যান।’
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম হাসান উজ্জ্বল বলেন, ঘটনাটি শুরুতে জানতাম না। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিস্তারিত জেনেছি। একজন কর্মরত কর্মকর্তার গায়ে হাত তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাহাত হাসান কাইয়ুমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসেম সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রদল একটি সুসংগঠিত দল। এখানে কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নকলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাহাত উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব। কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোনে বিষয়টি জানান। আমি রাহাতের জেঠাতো ভাই যুবদল নেতা লোটাসকে বিষয়টি বললে, তিনি রাহাতকে ফোনে ধমক দেন। তারপরও তিনি এমন কা- ঘটিয়েছেন।’
তবে অভিযুক্ত ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনা দ্রুত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মারফত অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা রাহাতকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

