বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

চাষ করুন শাক-সবজি

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০১:৩৭ এএম

চাষ করুন শাক-সবজি

বাংলাদেশের কৃষিপ্রধান জীবনে নভেম্বর মাস একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়। গরম কমে গিয়ে হালকা শীতের আবহ তৈরি হয়, যা শাক-সবজি, মসলা ও তেলবীজ ফসলের চাষের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। মাঠে এই সময় থাকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা, পানি নিষ্কাশনের সুবিধা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে এ মাসে কৃষকরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, রসুন, আলু, মিষ্টি আলু, উচ্ছে, মুলা, ছোলা, তিসি, ভুট্টা, শিম, মটরশুটি, স্ট্রবেরি, তরমুজ ও মেলনসহ নানা ফসলের চাষে ব্যস্ত সময় কাটান। কৃষি তথ্য সার্ভিস ( এআইএস )-এর তথ্য অনুযায়ী এসব ফসলের চাষপদ্ধতি দেওয়া হলো।

ফুলকপি ও বাঁধাকপি

নভেম্বর মাস এই দুই সবজির জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। উঁচু বা মাঝারি উঁচু দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জমি ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে সমতল করে প্রতি শতকে ৮-১০ কেজি পচা গোবর মিশিয়ে নিতে হয়। বীজতলায় ২৫-৩০ দিন বয়সি চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করতে হয়। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব রাখতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং সারি থেকে সারি ৬০ সেন্টিমিটার। রোপণের পর ৫-৭ দিন পর সেচ দিতে হয়। গাছ বড় হলে হালকা মাটিচাপা দেওয়া দরকার যাতে মূল শক্ত হয়। নাইট্রোজেন, টিএসপি ও এমওপি সার তিন ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করা ভালো। পোকামাকড় দমন ও ফুল পচন রোধে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি। ফুল বাঁধা শুরু হলে অতিরিক্ত পানি ও সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

রসুন

রসুন নভেম্বর মাসে বপন করলে মার্চ নাগাদ সংগ্রহ করা যায়। হালকা দোআঁশ ও পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে। প্রতি শতকে ৮-১০ কেজি পচা গোবর মিশিয়ে জমি ৩-৪ বার চাষ করতে হয়। বড় ও স্বাস্থ্যবান কোয়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। প্রতি কোয়া ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরে বসিয়ে সারি থেকে সারি ২০ সেন্টিমিটার ও গাছ থেকে গাছ ১০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে। গজানো শেষে ১৫ দিন অন্তর হালকা সেচ দিতে হয়। আগাছা দেখা দিলে তা তুলে ফেলা দরকার। পাতা হলুদ হতে শুরু করলে বুঝতে হবে ফসল তোলার সময় হয়েছে।

আলু ও মিষ্টি আলু

নভেম্বর আলু চাষের সঠিক সময়। দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য আদর্শ। জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে সমতল করে বীজ আলু রোপণ করতে হয়। গর্তে ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ আলু বসিয়ে উপরে মাটি চাপা দিতে হয়। সার প্রয়োগে প্রতি শতকে ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হয়। রোপণের ২০-২৫ দিন পর মাটিচাপা দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। রোগ-পোকা দমনে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। মিষ্টি আলু সাধারণত লতা থেকে চাষ হয়। লতার ৩-৪টি গাঁট রেখে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা কাটি জমিতে লাগাতে হয়। হালকা দোআঁশ মাটিতে সাপ্তাহিক একবার সেচ দিলেই যথেষ্ট। ৪ মাসে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

উচ্ছে ও মুলা

উচ্ছে নভেম্বর মাসে চাষ করলে জানুয়ারির মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। উঁচু ও পানি নিষ্কাশনযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। বীজ সরাসরি জমিতে বপন করে ২-৩টি বীজ একসঙ্গে দিতে হয়। চারা গজানোর পর সুস্থ একটি গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। মাচা তৈরি করে লতা ওঠানো উচিত। নিয়মিত সেচ ও আগাছা দমন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। মুলা হালকা দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। বীজ বপনের ৩-৫ দিনের মধ্যেই অঙ্কুরোদ্গম হয়। গাছ বড় হলে পাতলা করে দিতে হয়। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে মুলা সংগ্রহযোগ্য হয়ে যায়। অতিরিক্ত সার প্রয়োগে মুলা ফেটে যেতে পারে, তাই পরিমিত সার ব্যবহার করতে হবে।

ছোলা, তিসি ও ভুট্টা

ছোলা মাঝারি উঁচু জমিতে ভালো ফলন দেয়। বীজ বপনের আগে রাইজোবিয়াম ইনোকুলেন্ট দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করলে ফলন বাড়ে। প্রতি শতকে ২০০-২৫০ গ্রাম বীজ যথেষ্ট। জমি একবার চাষ করেই বপন করা যায়, অতিরিক্ত সেচের প্রয়োজন নেই। তিসি হালকা দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। নভেম্বর মাসে বীজ বপন করে মার্চে ফসল সংগ্রহ করা যায়। সারিতে বপন করলে পরিচর্যা সহজ হয়। গাছ ফুল ধরার সময় হালকা সেচ দিলে দানার গঠন ভালো হয়। ভুট্টা নভেম্বর মাসে বপন করলে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ফসল তোলা যায়। সারি থেকে সারি ৪৫ সেন্টিমিটার ও গাছ থেকে গাছ ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয়। প্রতি শতকে প্রায় ৪০০-৫০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। পর্যাপ্ত আলো ও সময়মতো সেচ ভুট্টার ফলন বাড়ায়।

শিম ও মটরশুটি

শিম ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভালো ফলন দেয়। জমি ৩-৪ বার চাষ করে জৈব সার মিশিয়ে নিতে হয়। প্রতি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করতে হয় এবং চারা গজালে মাচা তৈরি করতে হয়। ফুল ও ফল গঠনের সময় নিয়মিত সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার জরুরি। মটরশুটি বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। বীজ বপনের সময় গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ সেন্টিমিটার এবং সারি থেকে সারি ৩০ সেন্টিমিটার রাখতে হয়। গাছ ফুল আসার সময় সেচ দিলে ফলের পরিমাণ বাড়ে। ফসল ৬০-৭০ দিনের মধ্যে সংগ্রহযোগ্য হয়।

স্ট্রবেরি, তরমুজ ও মেলন

স্ট্রবেরি উঁচু ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে নভেম্বর মাসে রোপণ করা যায়। চারা ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। প্রতি গাছে সামান্য জৈব সার প্রয়োগ ও নিয়মিত সেচ প্রয়োজন। ফুল ফোটার সময় পরাগায়ন সহায়তা করলে ফলন বৃদ্ধি পায়। তরমুজ ও মেলনও নভেম্বরেই বপন করা যায়। জমিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকা দরকার। বীজ ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করতে হয় এবং প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ দেওয়া যায়। ফল ধরার সময় অতিরিক্ত পানি দেওয়া উচিত নয়। পরাগায়ন ঠিকভাবে হলে ফলের আকার ও গুণমান ভালো হয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!