রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

আন্ডারওয়ার্ল্ড অন ফায়ার

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড। চলছে নতুন হিসাব-নিকাশ। অপরাধ জগতে কদর বেড়েছে নয়া অপরাধীদেরও। প্রতিদিনই অপরাধ জগতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। আধুনিক অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডারে ভারি হয়ে উঠছে জুলাই-আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ।

সম্প্রতি রাজধানীর অপরাধ জগতে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুন হন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন। পুলিশ বলছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যার মূল পরিকল্পনাকারী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি। আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস রনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, নির্বাচন কাছাকাছি এলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, কঠোর হাতে দমন করা হবে সন্ত্রাসী তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘জনগণের জানমাল নিশ্চিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে র‌্যাব প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে। অপরাধীর অন্য কোনো পরিচয় র‌্যাবের কাছে ধর্তব্য নয়। বিগত দিনে র‌্যাবের সফলতা সাধারণ মানুষ দেখেছে। অবৈধ অস্ত্রের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে র‌্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বে খুন হন মামুন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন ত্রাস রনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের অপরাধীরা নতুন হিসাব-নিকাশ করে কাজ করছে। সবকিছু মাথায় রেখে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সমগ্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।’

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তার আর দখলযুদ্ধে নেমেছে। এর থেকে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে-পরে এদের তৎপরতা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বলা যায়, মামুন হত্যার পর অপরাধ জগতে কদর বেড়েছে নয়া সন্ত্রাসীদের। এ যেন চারদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অস্ত্রভান্ডারের ঝনঝনানিতে ভারি হয়ে উঠছে জুলাই-আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো যেন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সহযোগিতা না দেয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের ধরতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

আওয়ামী লীগের ইন্ধনসহ আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বে বাড়ছে খুন

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুসারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডিসেম্বর মাসের যেকোনো দিন নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার কথা রয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রার্থীদের প্রচার শুরু হয়েছে সারা দেশেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করছেন। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সরকারের হাইকমান্ড। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে হত্যাকাণ্ড ও গুলির ঘটনার পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম উঠে এসেছে। ব্যক্তিগত ও এলাকাভিত্তিক আধিপত্যের পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগের ইন্ধন থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের নাম উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। তবে সম্প্রতি ৩০টির বেশি খুনের ঘটনায় গোয়েন্দারা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ডে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জড়িত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বেই মূলত বাড়ছে খুন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আদালতে যাওয়ার সময় পুরান ঢাকায় সাবেক ছাত্রদল নেতা তারিক সাইফ মামুনকে কমান্ডো স্টাইলে কয়েকশ লোকের সামনে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে বীরদর্পে চলে গেছে খুনিরা। এই ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন গ্রুপ সম্পৃক্ত বলে নিহতের পরিবার দাবি করছে।

পুলিশ বলছে, মামুন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করলেও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অপরাধে যুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও অপরাধ জগৎ ‘গরম’ করার পাঁয়তারা করছে। তাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে বলে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুরে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে ভয়ংকর গ্রুপ

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শুধু মিরপুর জোনে হত্যার শিকার হয়েছে অন্তত ৪০ জন। এর মধ্যে শুধু পল্লবীতেই খুন হয়েছে ১৫ জন। মিরপুর মডেল থানা ৯টি, দারুস সালাম থানা ৭টি, কাফরুলে ৩টি, ভাষানটেকে ২টি, শাহআলী থানায় ২টি, রূপনগর থানায় ২টি হত্যা হয় বলে জানা গেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে ফোর স্টার ও বিকাশ-প্রকাশের নাম আসছে তদন্তে। মামুনের নিয়ন্ত্রণে মিরপুর-১২, পল্লবী, বাউনিয়া ও সাগুফতা; ইব্রাহিমের নিয়ন্ত্রণে মিরপুর-১৩, ১৪, ভাষানটেক ও কালশী; শাহাদাতের নিয়ন্ত্রণে মিরপুর-১, ২, ৬ ও ৭; সর্বশেষ মুক্তারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মিরপুর-১০ ও ১১। এসব এলাকার চাঁদাবাজি, মাদক কারবার থেকে শুরু করে হেন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। যদিও এসব নিয়ে ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না।

মামুন গ্রুপের হয়ে তার অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তারই বড় ভাই জামিল, ছোট ভাই মশিউর, রফিকুল, শহিদুল, নাটা আলমগীর, কালা মোতালেব, দেলোয়ার হোসেন রুবেল, রাজন, সানি, ভাগ্নে মামুন, সোহেল ও কায়েস। কিলার ইব্রাহিমের হয়ে কাজ করছে- যুবরাজ, সাবু, শাকিল, ভাগ্নে সোহেল, কালা ইব্রাহিম ও জনি। শাহাদাতের হয়ে টিপু সুমন, ফিটিং শিশির, বিহারি নিলা, প্রচার সাইফুল, পিচ্চি আলামিন ও শামিম।

সূত্র জানায়, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে দীর্ঘদিন ধরে দাপট দেখানো শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ইমনের হয়ে মাঠে কাজ করছে তার ঘনিষ্ঠ চাচা জাহিদ, আলমগীর, প্রিন্স ও ভাগলপুরের সুমন। গত ডিসেম্বর থেকেই ইমন কখনো মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায় অবস্থান করছেন। মালয়েশিয়ার একটি তামিল গ্যাংয়ের সহায়তায় তিনি শিগগিরই লাওসের পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। সেখানে থেকেই তিনি কানাডায় পাড়ি জমানোর সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, গত ছয় মাস আগেই মন্ট্রিলে তিনি অভিজাত বাড়ি কিনেছেন। মালয়েশিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত ইমনের যোগাযোগ। রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও হাজারীবাগে তার নির্দেশেই চলছে চাঁদাবাজি, দখলবাজি আর খুনোখুনি।

অনুসন্ধান বলছে, রাজধানীর মিরপুরে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে ভয়ংকর গ্রুপ ‘ফোর স্টার’। এ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে মামুন, ইব্রাহিম, শাহাদাত ও মুক্তার। তাদের গডফাদাররা বিদেশে থাকলেও দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে শতাধিক তরুণ সন্ত্রাসী। বেশির ভাগই কিশোর গ্যাং সদস্য। এ গ্রুপের দাপটে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মিরপুরবাসী। মিরপুরে ফোর স্টার গ্রুপের অন্যতম মুক্তারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দুবাই থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তদারকি করছে। তবে দেশে তার এলাকার অপরাধকাণ্ড পরিচালনা করছে তপু, সাদা শরীফ, ফাইটার রাসেল, পিচ্চি আশিক। ‘ঢ’ ব্লকের মামুনের হয়ে মাঠে পিচ্চি মাসুম, অপু।

সম্প্রতি ৫ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে পল্লবীর সাগুফতা এলাকায় একে বিল্ডার্সে হামলা চালায় মামুন বাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে ভাষানটেকে তাণ্ডব চালায় কিলার ইব্রাহিম গ্রুপ। আগারগাঁও ও কাজিপাড়ায়ও বিকাশ-প্রকাশ বাহিনীর নামে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেল থেকে মুক্তি পান সানজিদুল ইসলাম ইমন, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, খোরশেদ আলম ওরফে ফ্রিডম রাসু, আরমানসহ অনেকে। ভারত থেকে ফেরেন মোল্লা মাসুদ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরেন আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর।

তবে বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং জেল ফেরত আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দেখা দিয়েছে মারাত্মক দ্বন্দ্ব। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

Link copied!