ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণদ-ের রায়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষের গণআকাক্সক্ষা পূরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে গতকাল সোমবার শেখ হাসিনার মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। জামায়াত ছাড়াও গণঅধিকার, এবি পার্টি, জেএসডিসহ বিভিন্ন দল রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষের যে গণআকাক্সক্ষা ছিল এই রায়, ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের আগে করে যাবেন, এটা আমাদের দাবি ছিল। সেটি পূরণ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের রায় বাংলাদেশের বিচার ও রাজনৈতিক ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ, এ দেশে কোনো সরকারপ্রধানের সর্বোচ্চ শাস্তির ঘটনাÑ এটাই প্রথম। সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তিই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তা এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। স্বৈরশাাসক শেখ হাসিনার সরকার চৌদ্দ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে এবং প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষকে গুরুতরভাবে আহত করেছে। এদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে এবং বহু ছাত্র-জনতা চোখ ও হাত-পা হারিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিলÑ তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।’
জামায়াত নেতাদের বিচার প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা ও সাজানো মামলা এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই বিচার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের ছিল না; দেশ-বিদেশে সর্বত্রই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আদালত থেকে সাক্ষী গুম করে এবং স্কাইপ কেলেঙ্কারি ও বিদেশ থেকে রায় লিখে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর যেসব নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের আমরা আর কখনো ফিরে পাব নাÑ এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক।’
তিনি অভিযোগ করেন, এই রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শাটডাউন ঘোষণা করে সারা দেশে ককটেল-বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে জনগণের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা কোথাও দাঁড়াতেই পারেনি।
প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী ভারত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে অপরাধীর পক্ষাবলম্বন করেছে এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থি অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মেনে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আইনের কাছে সোপর্দ করার জন্য আমরা ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এই রায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এটি মনে করিয়ে দিয়েছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ ‘এ রায় গণঅভ্যুত্থান-উত্তর আইনের শাসনভিত্তিক কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি। বিশেষত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় নির্ধারণ জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে স্বীকৃতি দিয়েছে’ বলেন তিনি।
মৃত্যুদ-ের রায়কে স্বাগত জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘শুধু এই দুজনের বিচার হলে তা অসম্পূর্ণ বিচার হবে। আরও অনেক অপরাধী রয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে পলাতক। আমরা দাবি জানাচ্ছি, সব অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়কে শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের বিজয়ের ইতিহাসের পূর্ণ সত্যায়ন হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এক বিবৃতিতে দরটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উচ্চারিত বহু নীতিবাক্য আবারও বাস্তবতার পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অহংকার পতনের মূল’ এ ধরনের বাণীগুলো অনেকেই শুধু নীতিবাক্য বা প্রবোধের শব্দগুচ্ছ হিসেবে দেখে এসেছেন। কিন্তু সময় ও ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে, এগুলো কেবল অতীতের জালেমদের জন্য নয়, ভবিষ্যতে কেউ জালেম হলে তাদের জন্যও একইভাবে সত্য হয়ে ফিরে আসে।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। এ মামলার তিন আসামির মধ্যে সেই সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। সে জন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে লঘুদ- হিসেবে ৫ বছরের কারাদ- দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন