মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:২৫ এএম

ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ

আসামিদের যোগসাজশে পরিকল্পিত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:২৫ এএম

আসামিদের যোগসাজশে পরিকল্পিত  মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে

আসামিদের যোগসাজশে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় পরিকল্পিত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের অপরাধও প্রমাণিত। অপরাধের শাস্তি হিসেবে শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদ- হলেও মামুন জাতি এবং আদালতের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় তার শাস্তি কম হবে।

গতকাল সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

মামলার তিন আসামি হলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাদের মধ্যে দুজন পলাতক ও ভারতে অবস্থান করছেন। মামুন কারাবন্দি।

রায় ঘোষণার সময় ৭৮ বছর বয়সি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে ওঠেন। এখনো সেখানেই রয়েছেন তিনি। পলাতক থাকায় এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না বলে ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সেগুলো হলো : উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা; আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, জুলাইয়ে কোটা বাতিলে শিক্ষার্থীদের দাবি না মেনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেন। আন্দোলনকে অবজ্ঞা করে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন তিনি। এটি পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। আন্দোলনকারীদের হত্যার উসকানি দেন তিনি। উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার শাস্তি হয়েছে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হওয়ায়।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনে এসব বিষয়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। মারণাস্ত্র ব্যবহার, ড্রোন ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ে আন্দোলন দমনেও শেখ হাসিনার কথোপকথন প্রমাণিত হয়েছে। ১৮ জুলাই সাবেক মেয়র তাপসের সঙ্গেও শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনার কথোপকথনে প্রমাণিত হয়েছে। ড্র্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি, প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল এবং চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার অপরাধেও তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে।

চাঁনখারপুলে ছয় হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে কামালকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-। আর মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে তথ্য দিয়ে অপরাধ প্রমাণে সহযোগিতা করায় তাকে ৫ বছরের কারাদ- লঘুদ- দেওয়া হয়েছে।

আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তিনি জবানবন্দিতে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তিনি পেয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে।

ট্রাইব্যুনালে রায় পড়া শুরু হয় দুপুর ১২টার দিকে। রায়ের সময় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের অপরাধের প্রমাণ হিসেবে আমলে নেওয়া ফোনালাপের রেকর্ড শোনানো হয়, জুলাই সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়।

রায়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি জুলাই শহিদদের পরিবারকে এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতেও বলা হয় রায়ে।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার আসামিদের সাজা ঘোষণা করে বলেন, ‘১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ২০ (৩) ধারা অনুযায়ী, প্রচলিত রেওয়াজ মাফিক কার্যকর করা হবে।’ বাংলাদেশের রেওয়াজ অনুযায়ী, বেসামরিক আদালতের রায়ে আসামিকে আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করারও সুযোগ পাবেন। তবে হাসিনা ও কামাল পলাতক থাকায় আপিল করতে চাইলে তাদের ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে এক মাসের মধ্যে আপিল করতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!