স্বপ্নের কোনো বয়স হয় না; এটা আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু স্বপ্নের কি কোনো আকার-আকৃতি হয়? বড় স্বপ্ন দেখতে কি বড় হওয়া লাগে? ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন স্টুডিওর মজার ও অনুপ্রেরণাদায়ক মুভি ‘টার্বো’ ঠিক এই প্রশ্নগুলোরই সহজ উত্তর তৈরি করেছে। এক বাগানের ছোট্ট শামুক কীভাবে এক অসম্ভব স্বপ্নকে সত্যি করে তোলে, তা দেখে মুগ্ধ হবে ছোট-বড় সবার মন।
টার্বো আসলে একটি সাধারণ বাগানের শামুকের নাম। তার ভাই চেটসহ অন্য শামুকেরা একটি বাগানে থাকে, তারা সারাদিন পাতা চিবোয়, সকাল-সন্ধ্যা ধীরে ধীরে সারি বেঁধে হাঁটে। তাদের কাছে দুনিয়া মানে এই বাগান ও এর চারপাশ। কিন্তু টার্বো সবার থেকে আলাদা। সে মানুষের গাড়ির রেস পছন্দ করে। ইন্ডি ৫০০ নামে এমন একটি গাড়ির রেস তাকে এতটাই মুগ্ধ করে যে, সে ভাবে একদিন সে-ও রেসে অংশ নেবে!
একটা শামুকের এমন স্বপ্ন শুনলে অন্যরা তো হাসার কথা, তাই না? হলোও তাই। সবাই ভাবল টার্বো দিবাস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু আমাদের ছোট্ট শামুকটি সে কথা কানে তোলে না। তার মন শুধু ছুটতে চায়Ñ যত দ্রুত সম্ভব।
এভাবে চলতে চলতে এক রাতে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। টার্বো ভুল করে একটি রেসিং কারের ইঞ্জিনের ভেতর ঢুকে পড়ে। সেখানে নাইট্রাস অক্সাইডের বিশেষ শক্তি তার শরীরে এমনভাবে কাজ করে যে টার্বো হঠাৎ করেই সুপার-ফাস্ট হয়ে যায়! বিষয়টা কিছুটা সুপার হিরোর মতো। টার্বো এখন আর সাধারণ শামুক নেই, সে চোখের পলকে দৌড়াতে পারে, তার খোলসে গাড়ির মতো আলো জ্বলে। টার্বোর জীবনে যেন এক নতুন সকাল জন্ম নেয়। কিন্তু এ গতির শক্তি কি সাময়িক স্বপ্ন? নাকি তাকে নিয়ে যাবে তার স্বপ্নের আরও কাছে?
টার্বো তার নতুন ক্ষমতা নিয়ে বাগান থেকে বেরিয়ে পড়ে দুনিয়ার পথে। পথে পরিচয় হয় আরও কিছু চরিত্রের সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছে টিটো। সেই টার্বোর প্রতিভা প্রথম লক্ষ্য করে। এ ছাড়া হোয়াইট শ্যাডো, সু-শেল, বার্নারসহ আরও কয়েকজন দ্রুতগতির অদ্ভুত স্বভাবের শামুকের সঙ্গেও তার বন্ধুত্ব হয়; যারা টার্বোর রেসিং টিমের সদস্য হয়ে ওঠে। এই দলই টার্বোকে সাহস দেয়, তাকে নিজের ওপর বিশ্বাস করতে শেখায়। তারাই টার্বোকে নিয়ে এগিয়ে চলে তার স্বপ্নের চূড়ান্ত গন্তব্যে- ইন্ডি ৫০০ রেসের দিকে। ইন্ডি ৫০০ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত গাড়ি দৌড়। সেখানে অংশ নেয় বিশ্বের সেরা রেস কার চালকরা। এত বড় ইভেন্টে একটা শামুক দৌড়াবে- এটা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। অনেকে ভেবেই নেয় যে এটা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু টার্বো জানে, যদি সে মনে করে সে পারবে, তবে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তার সেই বিশ্বাসের কাছে বাধাও হার মানে। দৌড় শুরু হওয়ার পর পর্দার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দর্শকের মনেও। রেস ট্র্যাকে শক্তিশালী গাড়িগুলোর মাঝে টার্বোকে দেখা যায় একেবারে ছোট্ট বিন্দুর মতো। এত ভিড়ের মধ্যে সে ধাক্কা খায়, ব্যথা পায়, পিছিয়ে পড়ে; কিন্তু থেমে যায় না। সে আবার উঠে দাঁড়ায়, আবার এগিয়ে যায়; কারণ মনে পোষা স্বপ্ন তাকে চালিয়ে নিয়ে যায় সামনে। তবে শেষ পর্যন্ত কি সে জিততে পারে? এটাই মুভির সবচেয়ে মধুর অংশ; যা সবাইকে শেখায় বিশ্বাস, দৃঢ়তা ও পরিশ্রমের জয়গান। নিজেকে বিশ্বাস করে সে অনুযায়ী পরিশ্রম করলে, কেউ তাকে থামাতে পারে না। টার্বো মুভিটি যেন এটাই শিক্ষা দেয়।
মুভিটি তৈরি করেছিল ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন। তাদের অ্যানিমেশনের সঙ্গে আমরা আগে থেকেই পরিচিত। প্রতিটি মুভিতেই তাদের এনিমেশন মানেই রঙিন, প্রাণবন্ত ও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলি। টার্বোও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিটি সীন মন ভরিয়ে দেয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন