বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:১০ এএম

বাঁশির সুরে সংসার চলে কৃষ্ণ দাসের

মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:১০ এএম

বাঁশির সুরে সংসার চলে কৃষ্ণ দাসের

বাঁশিতে সুরের মূর্ছনায় শ্রোতারা মুগ্ধ হন। সুরে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি যখন সবুজে ঘেরা চা-বাগানের মাঝে লেকের (হ্রদের) পাড়ে বাঁশি বাজান, তখন শ্রোতারা প্রকৃতির মাঝে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যান। ৪৫ বছর বয়সি চা-শ্রমিকের সন্তান কৃষ্ণ দাস মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুরের বাসিন্দা।

শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। মাধবপুর চা-বাগান লেকে সুরের জাদুতে তাকে ঘিরে জমে পর্যটকদের ভিড়। থাকে প্রিয় গানের সুর তোলার আবদার। বাঁশির সুরেই জীবন চলে কৃষ্ণ দাসের। মনমাতানো শ্রুতিমধুর সুর-ছন্দে বাজানো বাঁশের বাঁশি প্রাচীন একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। বিনোদনপ্রেমী বাঙালির সুস্থ বিনোদনধারার এটি একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। বাঁশি দিয়েই মরমি সুরের দোলায় গানের বাণীকে ফুটিয়ে তোলা যায়।

পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব-অনটনের মাঝে বাঁশিপ্রেমিক কৃষ্ণ দাসের জন্ম। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তার। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি। তবে ছোটবেলা থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা কৃষ্ণ দাসের।

মাধবপুর চা-বাগান লেকের ধারে দেখা যায়, বাঁশিতে তিনি তুলছেন নানা সুর। বাঁশির সুর লেকে আসা পর্যটকদের বিমোহিত করে তোলে। এ সময় সুরপাগল নানা বয়সি মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং বাঁশির সুরে মুগ্ধ হন।

স্থানীয়রা জানান, শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তার জীবন। শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে তাকে আর্থিক সহায়তা করেন। তা দিয়েই চলে তার জীবনযাপন। পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, বিয়েবাড়ি, লেকের পাড়ে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান কৃষ্ণ দাস। বিশেষ করে পর্যটন এলাকায় চোখে পড়ে তাকে। গভীর রাতে যখন তিনি বাঁশি বাজান, তখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবনসংগ্রামে তার এই সৃজনশীলতা নিয়ে গর্ব করাই যায়।

ঢাকা থেকে ঘুরতে মাধবপুর লেকে আসা মহিমা পাল জানান, ‘অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। বাঁশির সুর যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পর্যটন এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্ছনা। শখের বসে শেখা বাঁশির সুরেই চলে তার সংসার।’

এ বিষয়ে কৃষ্ণ দাস জানান, ‘আমার জন্ম ভারতের কলকাতায়। সেখানেই বাঁশি বাজানো শেখা। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ছোটকালে বাংলাদেশে চলে আসি। বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা-বাগানে বসবাস করছি। ছেলে ও মেয়ে নিয়ে এখন আর চলতে পারি না। আগে বাঁশির সুর শুনে মানুষ টাকা দিত, এখন তেমন একটা দেয় না। তার পরও বাঁশি বাজানো আমার বন্ধ হবে না। আত্মার সঙ্গে এই সুর মিশে গেছে। তবে এই বাঁশির সুরে এখন আর জীবন যেন চলছে না।’

তিনি বলেন, মানুষ বাঁশের বাঁশির সুর শুনতে চায়। তারা মন দিয়ে শোনে, এটাই আমার তৃপ্তি। যাওয়ার বেলায় ১০-২০ টাকা দেয়, সেই টাকায় সংসার চলে।’

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘বাঁশির সুর উপমহাদেশের সংগীতে একটি অনন্য সংযোজন। একসময়ের জনজীবনে বেশ চর্চা থাকলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশির সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ সুরের মোহনা ছড়ানো এই বাঁশিশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সবার আরও আন্তরিক হওয়া উচিত। বংশীবাদক কৃষ্ণদাসকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!