আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর আগে গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা দেয় দলটি। ৩০০ আসনের মধ্যে এখন বাকি থাকল মাত্র ২৭টি আসন। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এত কম আসন দিয়ে শরিকদের ম্যানেজ করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে বিএনপির জন্য। কারণ শরিক দলের অনেক নেতা মনোনয়ন না পেলে বেঁকে বসতে পারেন। এমনকি জোটের সঙ্গীদের সঙ্গে বাড়তে পারে দূরত্ব। বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
একাধিক শরিক দলের নেতারা জানান, জোটের জন্য মাত্র ২৭টি আসন রাখছে বিএনপি, এটা মনমতো নয়। অনেকেই বিএনপির প্রতি অসন্তুষ্ট। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক শরিক দলের এক নেতা জানান, নরমাল হলেও বিএনপির উচিত ছিল শরিকদের জন্য ৪০ থেকে ৫০ আসন ফাঁকা রাখা। সেটা না করেই নিজেদের দলের নেতাদের মধ্যে আসনগুলো বণ্টন করে দিয়েছে, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শরিকদের অসন্তুষ্ট রাখা বিএনপির ঠিক হয়নি।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, জোট শরিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪০টি আসনের কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল হিসাব-নিকাশে ২৭টির মতো শরিকদের জন্য রাখা হয়। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনি জোট হলেও নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করতে হবে। তাই জোটের শরিক দলগুলোকে আসন ছাড় দিলেও তারা নির্বাচিত হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আবার শরিক দলগুলো যেসব আসন চায়, সেখানে বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থী আছেন। তারা দীর্ঘদিন হামলা, মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাদের ত্যাগের বিষয়টিও বিবেচনা করছে বিএনপি। ফলে এখনো প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া ২৭টি আসন ঘিরেই সবার দৃষ্টি। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসব প্রার্থী তালিকায় আসতে পারে পরিবর্তন। কারণ কিছু আসনে এমনিতেই প্রার্থী নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির গুলশান অফিসে বসে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। আসনগুলো হচ্ছেÑ ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, যশোর-৫, নড়াইল-২, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-৪, কিশোরগঞ্জ-১, কিশোরগঞ্জ-৫, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সীগঞ্জ-৩, ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১৮, গাজীপুর-১, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-২, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৪, সিলেট-৪, হবিগঞ্জ-১, কুমিল্লা-২, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১৫ ও কক্সবাজার-২। ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ডা. আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ এ কে এম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ জাহিদুল ইসলাম ধলু, সিরাজগঞ্জ-১ সেলিম রেজা, যশোর-৫ এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আমির এজাজ খান, বরিশাল-৩ জয়নাল আবেদিন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) নাজমুল মোস্তফা আমিন এবং চট্টগ্রাম-৯ আবু সুফিয়ান।
এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আগেই ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলাম। গতকাল আমরা আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছি। ৩০০ আসনের মধ্যে আরও অনেকগুলো থেকে যাচ্ছে, বোধহয় ২৪/২৫টির মতো থেকে যাবে। আমরা আমাদের যে অ্যালায়েন্স (শরিক) রয়েছে, এসব তাদের জন্য রেখেছি। তা ছাড়া আমাদের দু-একটি আসনে সামনে ডিসিশন (প্রার্থী পরিবর্তন) হবে। সেগুলো আমরা পরে ঘোষণা করব।’ এর আগে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে। বাকি ৬৪টি আসনের মধ্যে জোট শরিকদের জন্য ৪০টি আসন ছেড়ে দেওয়া নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। এতে বিএনপি জোটে আলোচনায় আছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। যদি এনসিপি জোটে আসে, তাহলে হিসাব-নিকাশে অন্যরকম পরিবর্তন হতে পারে।
এনসিপির জন্য বিএনপির ঘোষণা করা দু-একটি আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এ অবস্থায় বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জোটের আসন ছাড় নিয়ে করছেন কঠিন হিসাব-নিকাশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, সেসব শরিক দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। এখনো যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলো শরিক দলগুলোকে দেওয়া হবে। তবে সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে, আমরা শিগগিরই ঘোষণার চেষ্টা করব।’
বিএনপি নেতারা আরও জানান, নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করতে হবে বলে জোটের জন্য আসন ছাড় নিয়ে আরও বেশি ভাবতে হচ্ছে। আর শরিক দলের প্রার্থীদের আসন ছাড় দেওয়ার পর যদি ওই এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদের পক্ষে জোরালোভাবে মাঠে না নামেন তাহলে তাদের পক্ষে জিতে আসা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে জোটের আসনসংখ্যা কমার সম্ভাবনাও রয়েছে। যদি এনসিপির সঙ্গে জোট হয় তাহলে বিএনপি জোটে সবচেয়ে বেশি আসন তাদেরই ছাড় দেওয়া হবে। তবে জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আরও সময় লাগবে।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘জোটের ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তবে এর জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। কারণ আমরা আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করব। তারপর বিএনপির সঙ্গে নেগোসিয়েশন হবে। লম্বা একটা প্রক্রিয়া। তবে আমরা আমাদের গরুর গাড়ি মার্কায় সারা দেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই আমরা প্রার্থী ঘোষণা করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন