শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুনাওয়ার হোসাইন মইনুল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

রূপালী বাংলাদেশের এক বছর : নবজাগরণের পদচিহ্ন

মুনাওয়ার হোসাইন মইনুল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

রূপালী বাংলাদেশের এক বছর : নবজাগরণের পদচিহ্ন

সময় থেমে থাকে না। সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলে মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র। সেই গতিধারায় সাংবাদিকতাও বদলায়, সংবাদমাধ্যমও পাল্টে নেয় তার রূপ ও গতি। গত এক বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে যে কয়েকটি নতুন নাম মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে, ‘দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ’ তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ যখন এই পত্রিকাটি তার প্রথম বর্ষপূর্তি উদ্?যাপন করছে, তখন আমাদের কাছে এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়Ñ এটি হয়ে উঠেছে সময়ের সাক্ষী, সত্যের আলোকবর্তিকা এবং দেশপ্রেমের এক নতুন প্রতীক।

সূচনার প্রেরণা

বাংলাদেশের এক উত্তাল রাজনৈতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে আত্মপ্রকাশ করেছে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ।

কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে একদফা আন্দোলনের ঢেউয়ে দেশজুড়ে গর্জে ওঠে ছাত্র ও জনতার ঐক্য। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তীব্র আন্দোলনে দেশ অস্থির হয়ে পড়ে, আর সেই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগে বাধ্য হন (৫ আগস্ট ২০২৪)। ঠিক সেই ঐতিহাসিক সময়ে, পরিবর্তনের আবহে, নব আশার বার্তা নিয়ে এবং ‘মুক্ত চিন্তার দুরন্ত প্রকাশ’ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে যাত্রা শুরু করে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ।

একটি দৈনিক পত্রিকা শুরু করা মানে শুধু একটি প্রকাশনা নয়, বরং এক নতুন দায়বদ্ধতার জন্ম। ‘রূপালী বাংলাদেশ’ যেদিন প্রথম প্রকাশ হয়েছিল, সেদিন থেকেই এর সম্পাদকীয় নীতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিলÑ এই পত্রিকার অঙ্গীকার ‘সত্য, সাহস ও মানবতার পক্ষে’।

এই প্রতিশ্রুতি শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং এটি একটি মানসিক অবস্থানÑ যা আজকের বিভ্রান্ত ও মেরুকৃত তথ্যবিশে^ আলাদা করে চেনায় এই পত্রিকাকে।

বাংলাদেশের পত্রিকা জগতে প্রতিদিন নতুন নতুন নাম আসে, আবার অনেকেই হারিয়ে যায়। কিন্তু যারা টিকে থাকে, তারা কেবল সংবাদ ছাপায় নাÑ তারা পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। এই এক বছরে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ সেই জায়গাটা তৈরি করেছে। রাজধানী থেকে মফস্বল, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি, অর্থনীতি থেকে কৃষিÑ সব ক্ষেত্রেই সংবাদ ও বিশ্লেষণের মান দিয়ে পত্রিকাটি প্রমাণ করেছে, তারা এসেছে স্থায়ী হতে।

সাংবাদিকতার মান ও দায়বদ্ধতা

বর্তমান সময়ে সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ^াসযোগ্যতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্রুত তথ্যবন্যার মধ্যে মানুষ এখন বিভ্রান্তির শিকার হয় প্রতিনিয়ত। সেই প্রেক্ষাপটে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ নির্ভুল, তথ্যভিত্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকের আস্থা অর্জন করেছে।

এই আস্থা তৈরির পেছনে রয়েছে পত্রিকার সম্পাদকম-লী, সংবাদকর্মী, প্রতিবেদক, ফটোসাংবাদিক, ও উপদেষ্টাদের অক্লান্ত পরিশ্রম।

এ পত্রিকার প্রতিবেদনে শুধু খবর থাকে নাÑ থাকে ব্যাখ্যা, প্রেক্ষাপট ও দায়িত্ববোধ। রাজনৈতিক সংবাদে দলীয় পক্ষপাতমুক্ত বিশ্লেষণ, অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে তথ্যের গভীরতা, সামাজিক ইস্যুতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিÑ সব মিলিয়ে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ এক নতুন ধারা তৈরি করেছে।

জনগণের কণ্ঠস্বর

প্রথম দিন থেকেই এই পত্রিকা নিজেকে ‘জনমানুষের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। রাজধানীর অভিজাত বৃত্তের খবরের বাইরে গিয়ে তারা তুলে ধরেছে গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা, শ্রমজীবী মানুষের গল্প, কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম।

যখন দেশের দূর-দূরান্তে একটি পরিবার নানা ভাবা-বৈষম্যের শিকার হয়ে কষ্ট পাচ্ছে, কিংবা কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে পারছে নাÑ ‘রূপালী বাংলাদেশ’ তাদের গল্প তুলে ধরেছে জাতির সামনে। এই মানবিক সাংবাদিকতাই পত্রিকার আত্মা। একজন পাঠক যখন সকালে চা হাতে রূপালী বাংলাদেশ খুলে বসেন, তিনি শুধু সংবাদ পড়েন নাÑ তিনি বাংলাদেশের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখেন।

সংস্কৃতি ও সৃজনের পরিসর

এই পত্রিকার একটি অনন্য দিক হলোÑ সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। পত্রিকার সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি ও বিনোদনের পাতাগুলো হয়ে উঠেছে তরুণ কবি, গল্পকার, শিল্পী ও চিন্তকদের প্ল্যাটফর্ম। এখানে স্থান পেয়েছে অজস্র নতুন লেখকের কলম, যাদের অনেকে আজ দেশের মূলধারার লেখালেখিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। এই সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা প্রমাণ করে যে, রূপালী বাংলাদেশ কেবল রাজনীতির বিশ্লেষক নয়, এটি জাতির সাংস্কৃতিক চেতনারও ধারক-বাহক।

ডিজিটাল যুগে অভিযাত্রা

২১শ শতকের সংবাদপত্র কেবল ছাপায় সীমাবদ্ধ নয়। ডিজিটাল মাধ্যমের বিস্তার এখন সাংবাদিকতার সংজ্ঞাকেই বদলে দিয়েছে। ‘রূপালী বাংলাদেশ’ এ পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তাদের অনলাইন সংস্করণ, মোবাইল অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে উপস্থিতিÑ সবই প্রমাণ করে, তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ পাঠকদের কাছে এই পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ এখন তথ্য ও বিশ্লেষণের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। অডিও-ভিজ্যুয়াল রিপোর্টিং, ফিচার ভিডিও ও ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার করে সংবাদ উপস্থাপনÑ সবই ইঙ্গিত দেয়, রূপালী বাংলাদেশ ভবিষ্যতের সাংবাদিকতা কেমন হবে, তার একটি ঝলক ইতোমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে।

সম্পাদকীয় দূরদৃষ্টি

কোনো সংবাদপত্রের মান অনেকাংশে নির্ভর করে তার নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। ‘রূপালী বাংলাদেশ’-এর সম্পাদকীয় বোর্ড সেই জায়গায় প্রশংসনীয়। তাদের প্রতিটি সংখ্যার সম্পাদকীয়তে প্রতিফলিত হয় দেশ ও সমাজ নিয়ে গভীর চিন্তা, নৈতিক সাংবাদিকতা এবং গঠনমূলক সমালোচনার সাহস।

এই সম্পাদকীয় নীতিই পাঠকের মনে আস্থা জাগায়Ñ যে পত্রিকা সত্যের পক্ষে নির্ভীক, ন্যায়বোধে অবিচল এবং জনগণের পাশে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা

সংবাদপত্র কেবল খবর দেয় না, সমাজ গঠনের দায়িত্বও নেয়। এই এক বছরে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ নানা সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত থেকেছেÑ অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বন্যাদুর্গতের পাশে থাকা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সচেতনতামূলক প্রতিবেদনÑ এসব কাজ প্রমাণ করে এটি কেবল একটি সংবাদমাধ্যম নয়, বরং একটি সমাজমুখী আন্দোলন। এমন সাংবাদিকতা সমাজে নৈতিক শক্তি সঞ্চার করে। আজকের সময়ে যখন মুনাফাকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বাড়ছে, তখন ‘রূপালী বাংলাদেশ’-এর মানবিক অবস্থান এক সতেজ বাতাসের মতো।

সমালোচনার মুখেও দৃঢ়তা

প্রতিটি নতুন যাত্রাই নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। ‘রূপালী বাংলাদেশ’-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কখনো প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, কখনো সংবাদ সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা, আবার কখনো রাজনৈতিক চাপÑ সবই এসেছে। কিন্তু এই পত্রিকা প্রমাণ করেছেÑ সত্য ও পেশাদারিত্বে বিশ্বাস থাকলে কোনো বাধাই অতিক্রম অযোগ্য নয়। সমালোচনা এসেছে, কিন্তু তা সহ্য করার মতো মানসিক শক্তিও ছিল তাদের। বরং সেই সমালোচনাকেই তারা রূপান্তর করেছে আত্মসমালোচনায়, যা একটি প্রতিষ্ঠানের পরিপক্বতার লক্ষণ।

ভবিষ্যতের দিগন্তে

এক বছরের এই যাত্রা কেবল শুরু। এখন ‘রূপালী বাংলাদেশ’-এর সামনে বড় চ্যালেঞ্জÑ সততা ও মান ধরে রেখে আরও এগিয়ে যাওয়া। দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা, সুশাসন, মানবাধিকার ও টেকসই উন্নয়নের যে লড়াই চলছে, সেখানে এই পত্রিকাটির ভূমিকা আরও বড় হতে পারে।

বিশেষত, গণতন্ত্রের পথে দেশের শুভ যাত্রার প্রক্কালে জনমানুষের পক্ষে কথা বলা, বৈশ্বিক পরিসরে জলবায়ু পরিবর্তন, যুব উন্নয়ন, শিক্ষা, নারী নেতৃত্ব, ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিÑ এই বিষয়গুলোতে নিয়মিত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ হয়ে উঠতে পারে আগামী বাংলাদেশের রূপকারদের কণ্ঠস্বর।

পাঠক সবচেয়ে বড় শক্তি

শেষ পর্যন্ত একটি পত্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি তার পাঠক। এই এক বছরে যারা প্রতিদিন রূপালী বাংলাদেশ পড়েছেন, মন্তব্য দিয়েছেন, পরামর্শ পাঠিয়েছেনÑ তাদের প্রতি এই পত্রিকার কৃতজ্ঞতা অপরিসীম। কারণ পাঠকই আসলে সংবাদপত্রের প্রাণ। তাদের ভালোবাসাই আগামী দিনের প্রেরণা, তাদের আস্থা ও সমর্থনই এই যাত্রার জ্বালানি। এক বছর মানে সময়ের হিসাবে ছোট, কিন্তু বিশ্বাসের হিসাবে বিশাল। এই সময়ে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ প্রমাণ করেছেÑ একটি পত্রিকা কেবল খবরের কাগজ নয়, এটি একটি জীবন্ত প্রতিষ্ঠান, একটি সামাজিক শক্তি, একটি আন্দোলন। আজ বর্ষপূর্তির এই দিনে আমরা শুধু অতীতের সাফল্য উদ্যাপন করছি নাÑ আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখছি।

স্বপ্ন, যেখানে ‘রূপালী বাংলাদেশ’ থাকবে প্রতিটি মানুষের আশার প্রতীক হয়ে,  যেখানে প্রতিটি সংবাদ হবে সত্যের আলোকরেখা, প্রতিটি সম্পাদকীয় হবে নৈতিকতার আহ্বান এবং প্রতিটি পাঠক হবে একেকটি জাগ্রত নাগরিক।

রূপালী বাংলাদেশের যাত্রা হোক দীর্ঘ, আলোকিত, অনন্য। রূপালী বংলাদেশের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আকাশ ভালোবাসা ও শুভ কামনা।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও পরিবেশকর্মী

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!