এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ নামের একটি এলাকা। এ নিয়ে বেশ কয়েক দশক ধরে দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে পান্না ত্রিভুজে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাসমৃদ্ধ পান্না ত্রিভুজকে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া উভয়েই নিজেদের ভূখ- হিসেবে দাবি করে। কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত মে মাসে কম্বোডিয়ার এক সেনা থাই সীমান্তের কাছে নিহত হওয়ার পর ফের উসকে ওঠে উত্তেজনা। এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তের বিরোধপূর্ণ থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী দুটি কম্বোডিয়ান প্রদেশ- ওদ্দার মিঞ্চে এবং প্রিয়াহ ভিহিয়ারে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী গুলি করেছে। এলাকাটিতে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গত বুধবার কম্বোডিয়া সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে এক থাই সেনা গুরুতর আহত হন। তারপর বৃহস্পতিবার সকালে কম্বোডিয়ার দুই সেনা স্থাপনায় বিমান অভিযান চালায় থাইল্যান্ড। সেই হামলার জবাবে কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী থাই প্রদেশ বান নাম ইয়েনে রকেট হামলা চালায় কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। এর আগে বুধবার সীমান্তে এক থাই সেনা স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে ডান পা হারান। এ জন্য থাই কর্তৃপক্ষ কম্বোডিয়াকে দায়ী করেছে। এ ঘটনার আগে গত ১৬ জুলাই বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় টহল দেওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরণে তিন থাই সেনা আহত হয়েছিলেন। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় দু’দেশের সেনা সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত বেড়ে ১২ জন হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সংঘাতে নিহতদের মধ্যে ১১ জন বেসামরিক। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিনের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এদিকে, এই সংঘাত আরও বড় আকার ধারণ করেছে। কারণ, এরই মধ্যে কম্বোডিয়ায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। রয়টার্স বলছে, সীমান্ত নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক বিরোধের পর গোলাগুলিতে হতাহত নিয়ে উভয় দেশই একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে। এখনো ওই অঞ্চলে মুখোমুখি অবস্থানে উভয় দেশের সেনারা। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে কম্বোডিয়া যুদ্ধাপরাধ করেছে। এদিকে, কম্বোডিয়ায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়। এই হামলায় কম্বোডিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি থাই কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তও বন্ধ করেছে তারা। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার সেনারা উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার ওডার মিঞ্চে প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত বিতর্কিত তা মোয়ান থম মন্দিরের কাছে একটি এলাকায় গুলি চালিয়েছে। কম্বোডিয়া ওই এলাকায় সেনা পাঠানোর আগে একটি নজরদারি ড্রোন মোতায়েন করে। কম্বোডিয়ান সেনারা দূরপাল্লার রকেটসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের জেলা প্রধান সুথিরোট চারোয়েন্থানাসাক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে কম্বোডিয়ার সেনাদের গুলির পর সীমান্তবর্তী ৮৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার থাই নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ এবং এশিয়ার প্রভাবশালী আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে চীন এবং বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়া। দুই প্রতিবেশীকে সংঘাত পরিহার করে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে আহ্বানও জানিয়েছে চীন-মালয়েশিয়া।
আপনার মতামত লিখুন :