থাইল্যান্ড বুধবার কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের’ অভিযোগ এনেছে। কম্বোডিয়ান সেনারা রাতভর সীমান্তে থাই বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটি।
পাঁচ দিন ধরে চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছিল দুই দেশ। ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে থাকা একটি প্রাচীন মন্দিরকে কেন্দ্র করে পুরোনো বিরোধ থেকেই এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দেশটির সিসাকেট প্রদেশে থাই সেনারা বুধবার সকাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার ছোট অস্ত্রের গুলি ও গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। থাই সরকারের মুখপাত্র জিরাইউ হুয়াংসাবও রাতভর সংঘর্ষের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘থাই বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ও স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’ অন্যদিকে কম্বোডিয়া এর আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত অঞ্চলে চলমান সংঘর্ষ বন্ধ করা, যার ফলে উভয় দেশ মিলে ইতিমধ্যে ৩ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের থাইল্যান্ডের সুরিন শহরের একটি মন্দির বর্তমানে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও ফিল্ড কিচেন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক থানিন কিট্টিওরানুন জানান, সরিয়ে নেওয়া মানুষ এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
৬৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি রক্ষা করবে। এএফপির একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষের সময় কামানের গোলার শব্দ শুনলেও যুদ্ধবিরতির শুরু থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কোনো বিস্ফোরণের শব্দ পাননি। যুদ্ধবিরতি শুরু হয় মঙ্গলবার ভোরে। কিন্তু থাইল্যান্ড অভিযোগ করে, কম্বোডিয়ার অব্যাহত হামলা শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং ‘পারস্পরিক আস্থার ওপর আঘাত হানছে।’ চুক্তির আওতায় সীমান্তে উভয় পক্ষের কমান্ডারদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। থাই সেনাবাহিনী জানায়, উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে তারা সৈন্য চলাচল ও পুনর্বহাল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নড়বড়ে শুরুর পর থেকে বহাল রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন যে যুদ্ধবিরতি এখনো ক্ষীণ এবং থাই সরকার যদি মার্কিন শুল্ক কমাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা স্থায়ী না-ও হতে পারে।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে থাইল্যান্ড সেনাবাহিনী। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিসাকেত প্রদেশে কম্বোডিয়ার বাহিনী তিনটি পৃথক স্থানে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে বলে বুধবার (৩০ জুলাই) জানানো হয়। এ ধরনের আক্রমণ অব্যাহত থাকলে তারা পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। কেবল দুই দিন আগে মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী সংঘর্ষ বন্ধের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে ভয়াবহ সামরিক হানাহানির অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। চলমান দ্বন্দ্বে অন্তত ৪৩ জন নিহত এবং দুই দেশের প্রায় ৩ লাখ সাধারণ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ট্রাম্প আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, যদি সংঘর্ষ থামানো না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
যুদ্ধবিরতির পর তিনি দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরকে শুল্কসংক্রান্ত আলোচনা দ্রুততর করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে বুধবার থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী দাবি করে, কম্বোডিয়ার বাহিনী সিসাকেতের সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে আক্রমণ চালিয়েছে, যার জবাবে তারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :