এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রচ- জ্বর হয়। পাশাপাশি মাথা, জয়েন্ট ও পেশিতে ব্যথা, রক্তের প্লাটিলেট খুব কম সময়ে কমে যায়। প্লাটিলেট না বাড়ানো গেলে রোগী মারাও যায়। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও বর্ধিত আর্দ্রতা এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজনন পরিস্থিতি তৈরি করছে। এমনকি এমন এলাকাগুলোয় যেখানে আগে সংক্রমণের জন্য অনুপযুক্ত ছিল। জলবায়ু সংকটের জেরে প্যাসিফিক দ্বীপরাষ্ট্রগুলোয় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত এক দশকের মধ্যে প্যাসিফিক দ্বীপরাষ্ট্রগুলোয় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী দেখা গেছে। এমনকি কিছু রাষ্ট্রে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। প্যাসিফিক সিনড্রোমিক সার্ভেলাইন্স সিস্টেমের (পিএসএসএস) তথ্যমতে, অঞ্চলটিতে চলতি বছরে ১৬ হাজার ৫০২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১৭ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে আলোচনা করেই এ তথ্য উপাত্ত দিয়েছে পিএসএসএস। সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালের পর এ বছরই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ডব্লিউএইচও বলছে, সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ফিজি, সামোয়া ও টঙ্গোতে।
প্যাসিফিক কমিউনিটি (এসপিসি) উপ-পরিচালক ডা. পাউলা ভিভিলি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় ডেঙ্গু মৌসুমি রোগ। কিন্তু জলবায়ু সংকটের জেরে এখন বছরের সব সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। প্যাসিফিক অঞ্চলের কিছু জায়গায় সারা বছরই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর এক্সপোজার, ডিজিজেস, জিনোমিক্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. জোয়েল কাউফম্যান বলেন, ‘ডেঙ্গু হলো প্রথম বাস্তব রোগসম্পর্কিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি, যা আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে পাচ্ছি।
বৃষ্টিপাত বাড়ায় অনেক স্থানে পানি জমে যাচ্ছে। ওই সব পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ছে। আর এতে মশার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে।’ জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি হুমকি বলে সতর্ক করেছেন কাউফম্যান। গত এপ্রিলে প্যাসিফিক অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জেরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এরপর সামোয়ায় ডেঙ্গু সম্পর্কিত ছয়টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে দুই ভাইও রয়েছে। এরপর থেকে ৫ হাজার ৬০০ রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ফিজিতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া ১০ হাজার ৯৬৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর টোঙ্গাতে ৮০০ রোগী শনাক্তের পাশাপাশি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব জলবায়ু সংবেদনশীল রোগের প্রতি এ অঞ্চলের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।ইন্টারগর্ভমেন্টাল প্যানেল অন ক্লায়মেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) তথ্যমতে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ উৎপাদন করে।
কিন্তু তারা জলবায়ু সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে কয়েকটির মুখোমুখি রয়েছে। নিউজিল্যান্ড ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাটমোসফেয়ার রিসার্চের (এনআইডব্লিউএ) তথ্যমতে, সবশেষ কয়েক মাসে প্যাফিসিক রাষ্ট্রগুলো যেমন পালাউ, পাপুয়া নিউগিনি ও সোলোমোন আইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।