ইউক্রেনের ওপর রাতভর শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ক্রেমলিনের আক্রমণ থামানোর জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মস্কোর সবচেয়ে বড় আক্রমণ এটি। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী ৫৭৪টি ড্রোন এবং ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এতে কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে। এ সময় জাপোরিঝিয়া ও এলভিভসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় হামলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে, ঠিক তখনই ইউক্রেনের ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে মস্কো। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, রুশ বাহিনী বুধবার রাতে ৫৭০টি ড্রোন ও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলাটি চালায়। তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো সফলভাবে ৫৪৬টি ড্রোন ও ৩১টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।
ঝাপোরিজিয়া, দোনেৎস্ক ও লাভিভে হামলা করা হয়। লাভিভে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেছেন, ‘এই হামলা প্রমাণ করে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা জরুরি।’ সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্য সামনে রেখে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। চলতি মাসেই তিনি আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পর তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং কয়েকজন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে ওয়াশিংটনে পৃথক বৈঠক করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার স্থান হিসেবে সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া বা তুরস্কের নাম প্রস্তাব করেছেন। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ‘যেকোনো ফরম্যাটে’ পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে রাজি আছেন। এর মধ্যেই এ হামলার ঘটনা ঘটল।
রাশিয়ার রাতভর হামলায় পশ্চিম ইউক্রেনে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন, পাশাপাশি একটি মার্কিন ইলেকট্রনিকস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ। খবর রয়টার্সের। স্থানীয় জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, জাকারপাট্টিয়া অঞ্চলের মোকাচেভো শহরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং উৎপাদনসংক্রান্ত গুদামঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
জাতীয় টেলিভিশনে অঞ্চলটির গভর্নর মাইরোস্লাভ বিলেটস্কি ধোঁয়ায় ঘেরা ভবনের কাছে দাঁড়িয়ে বলেন, এই প্লান্টে কেবল ভোক্তা ইলেকট্রনিকস উৎপাদন করা হতো। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এক্সে লিখেছেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ বেসামরিক প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বা সামরিক কোনো সম্পর্ক নেই।
এটি মার্কিন ব্যবসার ওপর রাশিয়ার প্রথম হামলা নয়, এর আগে কিয়েভে বোয়িং অফিসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে।’ এদিকে উশ হামলায় পশ্চিমের লভিভ শহরে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তিনজন আহত হয়েছেন এবং ২৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জানিয়েছেন গভর্নর ম্যাক্সিম কোজিটস্কি।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া এই হামলায় ৫৭৪টি ড্রোন এবং ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা আগস্ট মাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ হামলা। হামলা এমন সময় সংঘটিত হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য তীব্র প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। রাশিয়া দাবি করেছে, তারা বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করছে না, তবে যুদ্ধের সামনের লাইনের অনেক দূরের শহর ও গ্রামে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এখনো স্থান চূড়ান্ত হয়নি। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সংবাদমাধ্যম পলিটিকো গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টকে বিবেচনা করছে হোয়াইট হাউস।
তিন নেতার শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস। এর প্রতিক্রিয়ায় আয়োজক হতে আগ্রহ ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে হাঙ্গেরি। আজ বৃহস্পতিবার এক পডকাস্টে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেতের সিজিয়ার্তো বলেন, ‘যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, আমরা ন্যায়সংগত ও নিরাপদ পরিবেশে শান্তি আলোচনার সুযোগ করে দিতে প্রস্তুত। শান্তি প্রচেষ্টার সাফল্যে আমরা যদি কোনোভাবে অবদান রাখতে পারি, এতে আমরা আনন্দিত হব।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে রাজি না হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘কড়া প্রতিক্রিয়া’ চান তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবসান বা শান্তি আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনের তিনটি গ্রাম দখল করেছে রাশিয়া। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রুশ বাহিনীর দখল করা তিনটি গ্রামের নাম সুখেৎস্কি, প্যানকিভকা এবং নোভোগিওরগিভকা।
এগুলোর মধ্যে সুখেৎস্কি এবং প্যানকিভকা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দোনেৎস্কের এবং নোভোগিওরগিভকা গ্রামটি মধ্যপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দিনিপ্রোপেত্রোভস্কের। টেলিগ্রাম পোস্টে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধ ছিন্নভিন্ন সম্প্রতি এই তিনটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা।’ ইউক্রেনীয় বাহিনী থেকে এখনো এ ঘটনার কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
কৃষ্ণ সাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখ- হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের আবেদনকে ঘিরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী।