সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইন্দোনেশিয়া। রাজধানী জাকার্তার সীমানা ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত প্রাদেশিক শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে সহিংস আন্দোলন। এমন পরিস্থিতিতে চীন সফর বাতিল করেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। রাজধানী জাকার্তায় পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় এক মোটরসাইকেলচালকের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সদর দপ্তরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনে একটি ভবনে তিনজনের মৃত্যু হওয়ারও তথ্য দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো দেশবাসীকে শান্ত থাকার এবং তার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের এই ভাষণের পরও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গত অক্টোবরে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই প্রেসিডেন্ট প্রাবোওর জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধিকে ঘিরে অসন্তোষ থেকে গত সপ্তাহে জাকার্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন দেশটির শিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভ দ্রুতই জাকার্তার বাইরে অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে শুরু থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করে কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাকার্তায় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিলে এক তরুণ নিহত হন। আরও অর্ধশতাধিক আহত হন। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। পরদিন শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দক্ষিণ সুলাওয়েসি প্রদেশের রাজধানী মাকাসারে প্রাদেশিক সংসদ ভবনে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে।
এই বিক্ষোভ ক্ষমতার এক বছরের মাথায় প্রাবোয়োর সরকারের জন্য প্রথম বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো। শনিবার (৩১ আগস্ট) প্রাবোয়োর মুখপাত্র প্রসেতিও হাদি জানান, ‘প্রেসিডেন্ট ইন্দোনেশিয়ার পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে চাইছেন... এবং সর্বোত্তম সমাধানের সন্ধান করছেন। এ কারণে তিনি চীন সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন যে তিনি আমন্ত্রণে যোগ দিতে পারছেন না।’ চীনের বোহাই সাগরের তীরে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে রোববার (৩১ আগস্ট) শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন।
২০টির বেশি দেশের নেতা এবং ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ায় এই সংঘাতকে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির ৫৮০ জন পার্লামেন্ট সদস্যের জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে ৫০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার) পাওয়ার খবর প্রকাশিত হলে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এই অর্থ জাকার্জায় একজন মানুষের ন্যূনতম মাসিক মজুরির চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। ২৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে পুলিশ ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া একজন আলজাজিরাকে বলেন, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত পার্লামেন্ট সদস্যদের বেতন কমানোর দাবি তুলেছেন। তার অভিযোগ, করের বোঝা ও লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন