ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের আলটিমেটাম; ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মোড়

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০২:২৪ এএম

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটনের খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের একাধিক প্রভাবশালী দেশ। রোববার জেনিভায় ইউক্রেনীয় ও মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠকে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ইউক্রেনে সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ ইতি টানার লক্ষ্যে আলোচনায় অংশ নিতে রোববারই সুইজারল্যান্ডে পৌঁছেছেন। এর আগে শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তার ২৮ দফার খসড়া পরিকল্পনায় রাজি হতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির হাতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় আছে। তার ওই পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে ভূখ- ছাড়তে হবে, সেনাবাহিনীর আকার কমিয়ে আনতে হবে, পরিত্যাগ করতে হবে নেটোতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন।

‘খসড়া চুক্তির বাকি খুঁটিনাটি ঠিক করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি, যেটা তাদের (ইউক্রেন) জন্য অনুকূল হবে। দুই প্রেসিডেন্ট একত্রিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়,’ ট্রাম্প ও জেলেনস্কির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। রোববারের বৈঠকের আগেই মার্কিন সেনাসচিব ডেনিয়েল ড্রিসকল জেনেভায় পৌঁছান, ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদলেরও শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শহরটিতে নেমেছেন, বলেছেন এ কর্মকর্তা। ইউক্রেন আগেই বৈঠকে অংশ নেওয়া হবে নিশ্চিত করেছিল।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তাঁর দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের জয়কে ‘মায়াজাল’ বলে মনে করছেন। পুতিন ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত শান্তি পরিকল্পনা না মানে, তবে তারা নিছক কল্পনার ভেতরেই বাস করছে। একই ধরনের কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তাঁর ভাষায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জয় আসলে এক ধরনের ‘অলীক কল্পনা।’ ভøাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপিত শান্তি পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘ইউক্রেন এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। বোঝাই যাচ্ছে, ইউক্রেন আর তার ইউরোপীয় মিত্ররা এখনো মায়াজালে ডুবে আছে, এখনো ভাবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে কৌশলগত পরাজয় দিতে পারবে।’

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। অথচ এ ইস্যুটি ইউরোপের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি বলেন, শান্তি প্রস্তাবে সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। তবে যেকোনো সমাধানে ইউরোপের নিরাপত্তা উদ্বেগকেও বিবেচনায় নিতে হবে।

রাশিয়ার মস্কো অঞ্চলের শাতুরা পাওয়ার স্টেশন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রবিবার (২৩ নভেম্বর) চালানো হামলায় বড় অগ্নিসংযোগ হয় এবং হাজার হাজার বাসিন্দার তাপ সরবরাহের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়, জানিয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ক্রেমলিন থেকে প্রায় ১২০ কিমি পূর্বে অবস্থিত এই স্টেশনটি রাশিয়ার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বর্তমানে প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে চলে। গভর্নর আন্দ্রে ভোরোবিওভ জানান, কিছু ড্রোন বিমান প্রতিরক্ষা দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে, তবে কয়েকটি স্টেশনে আঘাত হানায় তিনটি ট্রান্সফর্মারে আগুন লেগেছে। ইউক্রেনে চলমান সংকট নিরসনে যে ২৮ দফা পরিকল্পনা সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে, সেটির খসড়া প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্রই। এমন কথাই বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তার দাবি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতামত মিলিয়েই তৈরি হয়েছে এই প্রস্তাব। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সিনেটর বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এই শান্তি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের নয়। যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তি প্রস্তাব অন্য কোথাও থেকে পেয়েছে এবং পরে তা ইউক্রেনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

রোববার (২৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এদিকে শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। এটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। ইউক্রেন-রাশিয়ার এই যুদ্ধ কখনোই হওয়া উচিত ছিল না। আমরা চেষ্টা করছি যুদ্ধ শেষ করার। যেভাবেই হোক, এটা শেষ করতেই হবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে ‘চাইলে তিনি তার মতো করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন।’ কথিত ‘ই৩ জোটের’ সদস্য, ইউরোপের তিন প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারাও এ বৈঠকে থাকবেন। ইতালিও এক কর্মকর্তাকে পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। ইউরোপ ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নেতারা শনিবার বলেছেন, রাশিয়ার মূল দাবি মেনে নেওয়া মার্কিন খসড়াটি যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার ভিত্তি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবারের ‘ডেডলাইনের’ আগে কিয়েভের জন্য একটি ভালো চুক্তি নিশ্চিত করতে ওই খসড়ায় ‘আরও কাজ’ করা দরকার। জার্মানির একটি সরকারি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে হওয়া ইউরোপীয়দের একটি খসড়া পরিকল্পনাও ইউক্রেন ও মার্কিন প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘২৮ দফা পরিকল্পনা’ নিয়ে কিয়েভ যে শাঁখের করাতে পড়েছে, তা জেলেনস্কির কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে। ওই পরিকল্পনার জেরে ইউক্রেনকে এখন হয় নিজেদের আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতা খোয়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে, নয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন’, বলেছেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন মার্কিন পরিকল্পনাটিকে সংঘাত নিরসনে প্রাথমিক ভিত্তি বলে অভিহিত করেছেন।