চিকিৎসাবিজ্ঞানে সংগীত থেরাপির ব্যবহার নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগ, স্ট্রোক-পরবর্তী পুনর্বাসন ও দীর্ঘমেয়াদি গুরুতর অসুস্থ রোগীদের যন্ত্রণা কমাতে সংগীতের ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু অ্যানেসথেসিয়ার যান্ত্রিক ও অত্যন্ত প্রযুক্তিনির্ভর জগতে সংগীতের প্রবেশ একটি নীরব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, যদি সংগীতের ব্যবহারে ওষুধের ব্যবহার অল্প মাত্রা হলেও কমানো যায় এবং অস্ত্রোপচার-পরবর্তী রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার গতি দ্রুত করা যায়, তবে এটি অস্ত্রোপচার-সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে নিশ্চিতভাবেই নতুন রূপ দেবে।
অস্ত্রোপচারের টেবিলের ওপর নিস্তেজ পড়ে থাকা রোগীর কানে হেডফোন পরিয়ে দেওয়া, সেখানে মৃদু সুরে বাঁশি বাজছে। অ্যানেসথেসিয়ায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবে ওই রোগীর মস্তিষ্কের বড় অংশ নিস্তেজ হয়ে পড়লেও তার শ্রবণশক্তি আংশিকভাবে সক্রিয় আছে। ওই নারী রোগী যখন জাগবেন, তখন তার সচেতনতা দ্রুত ও স্পষ্টভাবে ফিরে আসবে। কারণ, তাকে অ্যানেসথেসিয়ায় কম মাত্রায় ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। তার তুলনায় যারা সংগীত শোনেননি, তাদের বেশি মাত্রায় ওষুধ দিতে হয়।
অস্ত্রোপচারের সময় রোগীদের সংগীত শোনানো হলে তাদের অ্যানেসথেসিয়ায় অন্যদের তুলনায় কম মাত্রায় ওষুধ দিলেও চলবে। দিল্লির মাওলানা আজাদ মেডিকেল কলেজের নতুন এক সমীক্ষা এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের সময় রোগীদের সংগীত শোনানো হলে তাদের অ্যানেসথেসিয়ায় অন্যদের তুলনায় কম মাত্রায় ওষুধ দিলেও চলবে। দিল্লির মাওলানা আজাদ মেডিকেল কলেজের নতুন এক সমীক্ষা এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। মিউজিক অ্যান্ড মেডিসিন জার্নালে নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। গবেষণাটি এমন কিছু শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করছে, যেখানে দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে সংগীত শোনানো হলে তা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ায় ওষুধের মাত্রা কমাতে এবং সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে। এই গবেষণা ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটমি করা রোগীদের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। পিত্তথলি অপসারণের জন্য ব্যবহৃত এটি আধুনিক অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় পেট না কেটে বরং ছোট ছিদ্র করে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়, একে ‘কিহোল সার্জারি’ বলে। এ ধরনের অস্ত্রোপচারে খুব বেশি সময় লাগে না, সাধারণ এক ঘণ্টার কম সময়ের প্রয়োজন পড়ে। রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াও দ্রুত হয়। গবেষকেরা কেন সংগীতের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন, তা বোঝার জন্য আধুনিক অ্যানেসথেসিয়ার প্রক্রিয়াটি বোঝা জরুরি। এ নিয়ে অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ফারাহ হুসাইন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া। এ জন্য রোগীদের জাগতে হবে সতেজ মস্তিষ্কে, সতর্ক ও সচেতন অবস্থায় এবং যথাসম্ভব ব্যথামুক্তভাবে। রোগী যত ভালোভাবে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, শরীরের চাপ তত কম পড়বে।’
ফারাহ এ গবেষণায় একজন সনদপ্রাপ্ত ‘মিউজিক থেরাপিস্ট’ হিসেবে কাজ করেছেন। ফারাহ বলেন, অ্যানেসথেসিয়ায় খুবই সতর্কভাবে পাঁচ-ছয়টি ওষুধের সমন্বিত মিশ্রণের প্রয়োজন পড়ে। ওই মিশ্রণ একই সঙ্গে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে, ব্যথার অনুভূতি হতে দেয় না, অস্ত্রোপচারের সময়ের কিছু স্মৃতিতে থাকে না এবং পেশিগুলো শিথিল করে দেয়।

