ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

৩২ বছর পর্যন্ত চলতে পারে কৈশোর, বার্ধক্য শুরু ৬৬ থেকে

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৩:০৯ এএম

শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য আর বার্ধক্য। আমরা ভাবি, ১৮ পার হলেই বুঝি বড় হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক তা মনে করে না। বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা বলছে, আমাদের মস্তিষ্কের তারুণ্য আসলে ফুরোয় না ১৮ বছরেই, বরং তা টিকে থাকে ৩০-এর কোঠা পর্যন্ত। মানুষের মস্তিষ্কের জীবনচক্র মূলত পাঁচটি ধাপে বিভক্ত। আর জীবনের চারটি বয়সে এসে মস্তিষ্কে ঘটে বড় ধরনের পরিবর্তন। বয়সগুলো হলোÑ ৯, ৩২, ৬৬ এবং ৮৩ বছর। সম্প্রতি ক্যামব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় এই চমকপ্রদ তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকেরা প্রায় ৪ হাজার মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান করেছেন, যাদের মধ্যে ৯০ বছর বয়সিরাও ছিলেন। এই স্ক্যানের মাধ্যমে তারা দেখেছেন মস্তিষ্কের কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ বা সংযোগ স্থাপন করে।

ফলাফলে দেখা গেছে, আমাদের মস্তিষ্ক তারুণ্যের ধাপে বা ‘অ্যাডোলেসেন্স’ পর্যায়ে থাকে ৩০-এর কোঠার শুরু পর্যন্ত। সহজ কথায়, প্রায় ৩২ বছর বয়সে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্ক তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই ফলাফলে। জীবনের কোন বয়সে কেন মানসিক রোগ বা ডিমেনশিয়ার (স্মৃতিভ্রম) ঝুঁকি বাড়ে কিংবা কমে, এই গবেষণা তা বুঝতে সাহায্য করবে। আমাদের মস্তিষ্ক সব সময় নতুন অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়। তবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই পরিবর্তনটা একভাবে বা মসৃণ গতিতে চলে না বরং এটি ঘটে পাঁচটি আলাদা ধাপে। মস্তিষ্কের সেই পাঁচটি ধাপÑ ১. শৈশব: জন্ম থেকে ৯ বছর। ২. কৈশোর বা তারুণ্য: ৯ থেকে ৩২ বছর। ৩. প্রাপ্তবয়স্ক: ৩২ থেকে ৬৬ বছর। ৪. বার্ধক্যের শুরু: ৬৬ থেকে ৮৩ বছর।

৫. শেষ বার্ধক্য: ৮৩ বছর এবং তার পর। গবেষক ড. অ্যালেক্সা মাউসলি বিবিসিকে বলেন, ‘সারা জীবন ধরেই মস্তিষ্কের সংযোগগুলো নতুন করে সাজানো হতে থাকে। এটি কখনো শক্তিশালী হয় আবার কখনো দুর্বল হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি একটানা চলে না বরং ঢেউয়ের মতো ধাপে ধাপে ওঠানামা করে।’ সবার ক্ষেত্রে যে ঠিক এই বয়সেই পরিবর্তন ঘটবে, তা নয়। কারও একটু আগে বা পরে হতে পারে। তবে গবেষকেরা বলছেন, হাজার হাজার মানুষের স্ক্যান রিপোর্টে এই নির্দিষ্ট বয়সগুলোর ছাপ খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বিখ্যাত জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এ এই গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। ড. মাউসলি অবাক হয়ে লক্ষ করেছেন, মস্তিষ্কের এই ধাপগুলোর সঙ্গে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অদ্ভুত মিল রয়েছে। যেমনÑ বয়ঃসন্ধি, ৩০-এর কোঠায় গিয়ে সংসারী হওয়া বা শেষ বয়সের স্বাস্থ্য সমস্যা। যদিও এই গবেষণায় নারী ও পুরুষকে আলাদা করে দেখা হয়নি, তবু বিশেষজ্ঞরা একে স্বাগত জানিয়েছেন।

কেমব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ের নিউরোইনফরমেটিকসের অধ্যাপক ডানকান অ্যাস্টল বলেন, ‘আমাদের মনোযোগ, ভাষা বা স্মৃতিশক্তি কেমন হবে, তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের এই সংযোগ বা গঠনের ওপর। অনেক মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যার মূলে রয়েছে এ বিষয়গুলো।’এডিনবরা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারা স্পায়ার্স-জোনস বলেন, ‘এটি একটি দারুণ গবেষণা। সারা জীবন আমাদের মস্তিষ্ক কতটা বদলায়, তা এই গবেষণায় চমৎকারভাবে উঠে এসেছে।’ তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, সবার জীবনে ঠিক এই বয়সেই যে পরিবর্তনগুলো হবে, এমন কোনো কথা নেই।

শৈশব: জীবনের এই প্রথম ধাপে মস্তিষ্কের আকার হু হু করে বাড়ে। এ সময় মস্তিষ্কের কোষের সংযোগগুলো কখনো বাড়ে, আবার অপ্রয়োজনীয় হলে কমেও যায়। তবে এই বয়সে মস্তিষ্ক খুব একটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে না। বিষয়টি অনেকটা পার্কে ঘুরে বেড়ানো ছোট বাচ্চার মতো, যে সোজা পথে গন্তব্যে না গিয়ে খেয়ালখুশিমতো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। কৈশোর বা তারুণ্য: ৯ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর হঠাৎ করেই বড়সড় পরিবর্তন আসে। মস্তিষ্কের সংযোগগুলো অপ্রয়োজনীয় জিনিস ঝেড়ে ফেলে দিয়ে অসম্ভব দক্ষ হতে শুরু করে। ড. মাউসলি একে ‘বিশাল পরিবর্তন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে এই সময়েই মানসিক রোগ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের সঙ্গে এই ধাপ শুরু হয়। আগে আমরা ভাবতাম কৈশোর বুঝি টিনএজ বা ১৯-২০ বছরেই শেষ। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের এই তারুণ্য টিকে থাকে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত। এই সময়েই মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে শক্তিশালী ও শাণিত হয়।