সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ব্যাংক খাতের গোপন খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, পুঁজি ঘাটতিÑ সব সংকট একে একে সামনে আসছে। বিনিয়োগ স্থবির, নীতিগত স্বচ্ছতা কম এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার না থাকায় অর্থনীতি চাপে রয়েছে। অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার জ্ঞানচর্চা আরও এগিয়ে নিতে ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আয়োজন করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক।
দীর্ঘদিন ঢেকে রাখা খেলাপি ঋণের পাহাড়, প্রভিশনের গর্ত আর তারল্যসংকটÑ সব অসুখ এখন একে একে প্রকাশ্যে। এই বাস্তবতা তুলে ধরে দেশের নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা ও সংস্কারহীনতার সমালোচনা করেন তিনি। একসঙ্গে ধরা পড়া এসব দুর্বলতা বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তার অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া হঠাৎ বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণা ও নীতিগত অস্পষ্টতা বিনিয়োগ পরিবেশ আরও দুর্বল করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতির পথ রুদ্ধ করছে। একই সঙ্গে সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আনা স্বপ্নের মতো বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করা, প্রশাসক নিয়োগ বা কিছু নিয়ম আগের অবস্থায় ফেরানোÑ এসবের বাইরে সুশাসন নিশ্চিত করতে কী করা হয়েছে? বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশ অত্যন্ত দুর্বল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বহু বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। সুদের হারসহ নীতিগত দিকনির্দেশনাও এখনো পরিষ্কার নয়।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন জরুরিÑ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণায় তাড়াহুড়োর সমালোচনাও করেন। বলেন, কোনো সংস্কার ছাড়াই মাত্র ১৩ দিনে বিশাল বিদেশি বিনিয়োগ আনার ঘোষণা বাস্তবসম্মত নয়। নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের আড়ালে এমন সিদ্ধান্ত স্বচ্ছতার ঘাটতি তৈরি করে। তার মতে, অংশীজনের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা ছাড়া বড় সিদ্ধান্ত টেকে না। আগের সরকারের সময় যেসব বৈষম্যমূলক চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর স্বচ্ছতা না থাকায় মানুষের সন্দেহ আরও বেড়েছে।
পলিসি রেট কমানো প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, তবে সংকোচনমূলক নীতি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমিয়েছে। এখন স্থিতিশীলতা থেকে প্রবৃদ্ধির দিকে যাওয়ার সময় হলেও জ¦ালানি, গ্যাস, ব্যাংক খাতের তারল্য ও ব্যাবসায়িক প্রতিবন্ধকতাÑ এসব বড় সংস্কার পিছিয়ে আছে। কেবল চাহিদা ব্যবস্থাপনা নয়, সরবরাহের দিকেও সমর্থন দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পায়নি। তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন অর্থনৈতিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত না করে। তিনি সামাজিক-রাজনৈতিক ‘ভূমিকম্প’ আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করেন, যা বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

