শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আনন্দ আড্ডা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

মুক্তির স্মৃতিচারণে চ্যালেঞ্জ ও আক্ষেপ

আনন্দ আড্ডা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

মুক্তির স্মৃতিচারণে চ্যালেঞ্জ ও আক্ষেপ

তাকে বলা হয় গল্পের জাদুকর। গল্প দিয়েই তিনি মানুষের মনকে নানাভাবে আলোড়িত করেছেন। মিসির আলী ও হিমুর লজিক-অ্যান্টি লজিক, মধ্যবিত্তের সুখ-দুঃখ; তার গল্প থেকে বাদ পড়েনি মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ইতিহাসের বাদশা নামদাররা। আর এতেই তিনি পেয়েছেন জনমানুষের সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। আজ তাকে হারানোর দিন।

হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ সালের আজকের দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। শেষ ইচ্ছানুযায়ী নিজ হাতে গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জনপ্রিয় এই লেখক নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

ছাত্র জীবনেই তার লেখালেখি শুরু। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’। এই দুটি বই প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন। সেই থেকে জীবিতকালে তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়। নির্মাণেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।

নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক একাধারে ঔপন্যাসিক, নির্মাতা, গল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। তাকে বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সমাদৃত।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্মক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। লেখক ইমদাদুল হক মিলনের ভাষায়, হুমায়ূন আহমেদ আহমেদ একজন কিংবদন্তি বড় লেখক।

দেশের সাহিত্যাঙ্গনে হুমায়ূন আহমেদ আহমেদ একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মতো এতটা পাঠকপ্রিয় লেখক এই বাংলায় আর জন্মায়নি, ভবিষ্যতে জন্মাবেন কি না, কারো জানা নেই। তিনি পাঠক-দর্শক তথা বাঙালির কাছে এতটাই জনপ্রিয় যে, তার একটি নাটকের কাল্পনিক ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের জন্য ঢাকার রাস্তায় মিছিল হয়েছিল। তার ‘তুই রাজাকার’ গালিটাতে বাঙালি শিখেছিল রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণা করার রূপকবাক্য হিসেবে।

এই কালপর্বে তার গল্প, নির্মাণ ও উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনাহীন। বাংলাদেশের সম্পদ ও বিংশ শতাব্দীতে জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম এই পথিকৃৎ, তার লাখো-কোটি ভক্তকে শোকে নিমজ্জিত করে আজকের এই দিনে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সশরীরে আজ হুমায়ূন আহমেদ না থাকলেও তার ভিন্নধর্মী ও বহুমাত্রিক 

লেখনীর কারণে পাঠকদের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন বহুকাল।
রুমানা ইসলাম মুক্তি

হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাতে জমিদারের নাতনি চরিত্রে অভিনয় করে চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি জয় করেন দর্শকের মন। নামের সঙ্গে যুক্ত হয় জনপ্রিয় তারকা। সে সময় সিনেমাটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এরপর এই নির্মাতার একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ আহমেদের লেখার একজন ভক্ত মুক্তি। বাংলা সাহিত্যের জননন্দিত এই লেখককে নিয়ে স্মৃতিচারণে আনোয়ারাকন্যা বললেন, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করাটা একটা স্বপ্নের মতো ছিল কারণ, তার লেখার বইয়ের পোকা ছিলাম আমি। তার ভৌতিক লেখার মধ্যে ‘দেবী’ আর ‘নিশীথিনী’ আমার খুব পছন্দের ছিল। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটা করার আগে তিনি শাওনকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আম্মার সঙ্গে কথা বলার সময়ই তিনি আমাকে দেখতে চাইলেন। আমি তার সামনে আসার পর শাওনকে বললেন, আমার তো মনে হচ্ছে শাহানা চরিত্রটা মুক্তিকেই মানাবে। আমাকে হাসি মুখে বললেন, আমার সিনেমায় কাজ করবে? কোনো কিছু না ভেবেই বলে দিলাম করব। তিনি আমাকে আরও বললেন, এই চরিত্রে কিন্তু আফসানা মিমি কিছু দিন কাজ করেছে, যেকোনো কারণে কাজটা সে করবে না এতে তোমার কোনো আপত্তি আছে? বললাম না কোনো আপত্তি নেই তবে মিমি আপার সঙ্গে আগে কথা বলে নেব। তারপর মিমি আপাকে কল দিয়ে বললাম সব কিছু। তিনি খুব সুন্দর করে বললেন, আমি চাই তুমি কাজটা করো। কিছুটা শুটিং করেও কাজটা শেষ পর্যন্ত না করার কারণ মিমি আপা আমাকে সব খুলে বললেন। তারপর চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমি কাজটি শুরু করি। শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদ স্যার সব শিল্পীদের নিয়ে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসতেন। এতে কাজের খুব সুবিধা হতো। খুব মজা করে কথা বলতেন সবার সঙ্গে, যা শুনে সবাই হাসত। খেয়াল করলাম গাছের একটা পাতা থেকে শুরু করে আকাশের তারার সম্পর্কেও জানার আগ্রহ ছিল তার। শুটিং শেষে সবাইকে নিয়ে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন, খাবারও খেতেন সবার সঙ্গে বসেই। কাজের সময় অনেক সিরিয়াস থাকতেন, তবে সব কিছুর মধ্যেই একটা নিয়ে ভাবতেন তিনি, সেই ভাবনাতে হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যেতেন কোথাও। কখনো তাকে কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। তবে এতটুকু তো বুঝতে পেরেই ছিলাম যে তার অনেক ধৈর্য ক্ষমতা।

তার চাঁদ খুব পছন্দ ছিল। চাঁদনি রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতাম। তাকে নিয়ে বলতে গেলে গল্পের শেষ হবে না। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় অন্যদিক থেকে কিছুটা ডিস্টার্ব অনুভব করেছিলাম তবে সেই দিকে ফিরেও তাকাইনি। কারণ কাজটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলাম। তার সঙ্গে আমার আরেকটা কাজ হয়েছিল টেলিফিল্ম ‘সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড’।

প্রয়াণ দিনে আজ হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কথা অনেক মনে পড়ে। তিনি আমাকে কল দিয়ে বলেছিলেন, তুমি তো ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছো। কথাটা শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম, যেই খুশির সীমা নেই। তার কিছুদিন পরেই শুনতে পেলাম কেউ একজন তার মাকে দিয়ে চেষ্টা করেছে আমি যেন পুরস্কারটা না পাই এবং শেষ পর্যন্ত আমি সেই পুরস্কারটা পাইনি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমি সেরা অভিনেত্রীর জন্য নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও নামটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ক্ষমতাবলে।

এরপর হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কাছ থেকে অনেক কাজের প্রস্তাব পেলেও আর কখনো করিনি। কষ্ট থেকেই তার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলাম। একজন ভক্ত হিসেবে তার মৃত্যুটা ছিল আমার কাছে অনেক কষ্টের। তার মেধা আর অসাধারণ লেখার জন্য তার প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা থাকবে আজীবন। তিনি নেই তবুও রয়েছেন কর্মের মধ্য দিয়ে। যে কারণে এখনো মানুষ তাকে স্মরণ করে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!