ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

অর্ধহাজার বছরের স্মৃতি ধরে রেখেছে যেই গাছ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

বরেন্দ্র ভূমির প্রাণকেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়লা গ্রামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি সোয়া ৫০০ বছরের পুরোনো তেঁতুলগাছ, যা কেবল প্রাকৃতিক নয়, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী। গাছটির বয়স ৫৫০ বছরের বেশি বলে ২০০৩ সালে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় জানা যায়। তখন থেকেই এটি প্রশাসনিকভাবে ‘প্রাচীন বৃক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার দূরের নেজামপুর ইউনিয়নের শুড়লা গ্রামে অবস্থিত এ রাজকীয় গাছটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘পুরোনো তেঁতুলগাছ’ নামে। উচ্চতায় বিশাল, ডালপালা ছড়ানো এ বৃক্ষে আজও তেঁতুল ধরে, বাসা বাঁধে বকপাখিরা।
এই নেজামপুর ইউনিয়নেই ঘটেছিল ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৭-৫০)। সেই ইতিহাসের শরিক হয়ে, ঠিক একই মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছটি। আশপাশের মানুষ বলেন, গাছটির নিচেই নাকি কৃষক আন্দোলনের সময় সভা বসত, মিছিল হতো। যদিও এসব কথার প্রামাণ্য দলিল পাওয়া না গেলেও মানুষের মুখে মুখে সেই ইতিহাস আজও বেঁচে আছে।
২০০৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল হক বিশেষজ্ঞ ডেকে গাছটির বয়স নির্ধারণে উদ্যোগী হন। তখন থেকেই বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের আগ্রহ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে দেখে যান এই প্রাচীন বৃক্ষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে।
সাবেক ইউএনও নীলুফা সরকার বলেন, ‘তেঁতুলগাছটি প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আছে। তবে নতুন কোনো পরিকল্পনা বা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি।’
প্রশাসন বসার ছাউনি নির্মাণ করলেও পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সীমিত। গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক সুবাস চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘শুধু একটি অকেজো শৌচাগার আছে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, বসার স্থান পর্যাপ্ত না, মন্দির নেই, এমনকি গাছের গোড়াও ঠিকভাবে বাঁধানো হয়নি।’
স্থানীয় জসেদা বালা বলেন, ‘গাছের গোড়া ফেটে গেছে। মেরামত দরকার। আমরা গাছটিকে মানুষের চোখে দেখি, কেউ ক্ষতি করতে সাহস পায় না।’
অন্যদিকে লেখক ও গবেষক আলাউদ্দিন আহমেদ বটু বলেন, ‘গাছটির চারপাশে একটি সীমানাপ্রাচীর, শৌচাগার, বসার স্থান ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা জরুরি। এগুলো হলেই পর্যটক দ্বিগুণ হবে।’
স্থানীয় কিছু হিন্দু পরিবার আজও গাছটিকে ঘিরে পূজা দেন। তাদের বিশ্বাস, গাছটি রক্ষা করলে ভালো ফল বয়ে আনে। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার প্রতীক হিসেবেও দেখছেন অনেকে। গাছটি শুধু অক্সিজেন দেয় না, এলাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অংশ হয়ে উঠেছে।
নাচোলের এই প্রাচীন তেঁতুলগাছ ঘিরে যদি পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে তা স্থানীয় পর্যটন শিল্পেরও বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। শুড়লা গ্রাম হয়ে উঠতে পারে ইতিহাস, শিক্ষা ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা।