ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

দিলদার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম

বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যাদের অল্প-বিস্তর যোগাযোগ রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিঃসন্দেহে তাকে চেনেন। কারণ তিনি নিজের সাবলীল অভিনয়ে এতটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, সেটার রেশ এখনো রয়ে গেছে ঢালিউডের রূপালী ভুবনে। তার হাস্যরস ভরা কৌতুক অভিনয় এখনো অনেকের জন্য আদর্শ হয়ে আছে। বলছি অভিনেতা দিলদারের কথা। ঢাকাই সিনেমায় কমেডি চরিত্রের তুমুল জনপ্রিয় তারকা তিনি। ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন চাঁদপুরে।
পড়াশোনায় বেশিদূর যেতে পারেননি দিলদার। এসএসসি পাশ করার পর পাঠ্য জীবনের ইতি টানেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর চলচ্চিত্রে নাম লেখান দিলদার। ১৯৭২ সালে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা মুক্তি পায়। যেটির নাম ছিল ‘কেন এমন হয়’।
প্রথম সিনেমাতেই নিজের অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন দিলদার। এরপর একে একে নিজেকে কৌতুক চরিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। উপহার দেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘শুধু তুমি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘অজান্তে’, ‘প্রিয়জন’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘বিচার হবে’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ও ‘আব্দুল্লাহ’-এর মতো দর্শকপ্রিয় সফল সিনেমা।
দীর্ঘ সিনে ক্যারিয়ারে দিলদারের প্রাপ্তি দর্শকদের ভালোবাসা। এছাড়া তিনি ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ সিনেমার জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। জাতীয় পুরস্কার লাভের বছরেই চলে যান দিলদার।
২০০৩ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয়তার আকাশ ছোঁয়া এই কমেডি তারকা। দিলদার নেই ২২ বছর। তবে চলে গেলেও এখনো তিনি সবার মনে অসামান্য এক ভালোবাসার জায়গা দখল করে আছেন। সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা এখনো তাকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করেন।
এই অভিনেতা মৃত্যুর সময় স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রেখে গিয়েছিলেন। দিলদারের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা এবং ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ সোমা।
কেমন আছেন তারা। যোগাযোগ করা হলে দিলদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘২২ বছর পরও এখনো তাকে মানুষ ভুলেনি, মনে রেখেছেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত শুক্রবার মিলাদের আয়োজন করা হয়েছিল। পাশাপাশি গরীবদের খাওয়ানো হয়েছে। শুক্রবার ভালো একটি দিন, জুম্মার নামাজের পর তার জন্য দোয়া করা হয়েছে। ডেমরা ও গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর এই আয়োজন করা হয়। আমি ডেমরাতেই থাকছি। সন্তানরাও ভালো আছে।’
দিলদারের স্ত্রী জানালেন, প্রতিবার ঘরোয়া মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে এই অভিনেতার জন্য দোয়া করা হয়। আগে এফডিসিতে স্মরণ করা হলেও এখন হয় কি না, সেটা বলতে পারলেন না তিনি।
শিল্পী সমিতির কেউ খোঁজ নেয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আনোয়ারার মেয়ে নায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি খোঁজ নেয়। গতকাল ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। এছাড়া কেউ মনে রাখেনি। সমিতির কেউ খোঁজ নেয় না। মানুষটা যেহেতু নেই তাই কেউ-ই মনে রাখেনি। কিন্তু জনগণ ভুলেনি। আজও তাদের প্রিয় অভিনেতাকে মনে রেখেছে। এটাই বড় প্রাপ্তি।’
জনগণ ভুলেনি সেই উদাহরণ টেনে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে কর্ণফুলী টানেলের পর কিছু সরকারি কোয়াটার আছে। সেগুলোর ভেতরে প্রবেশ করতে চাই। তবে দায়িত্বরত যে ছিলেন তিনি অন্য জায়গা থেকে অনুমতি নিয়ে আসার কথা বলেন। তখন আমার ড্রাইভার তার স্যারের পরিচয় দিলে সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। জানায় তিনি একজন তার বড় ভক্ত। এটাই তো বড় পাওয়া। মানুষটি নেই ২২ বছর অথচ আজও মানুষ তাকে ভালোবাসে।’
জানা গেছে, ২০ বছর বয়সে তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এর পর থেকেই নিজের জগৎ চেনাতে থাকেন এই অভিনেতা।