দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ২৬টি বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। শেয়ার হিসেবে এসব অ্যাকাউন্টে ৫৭৬ কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩০ টাকা রয়েছে। গত বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ এ তথ্য জানান। ওই দিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান এসব বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন।
অবরুদ্ধ অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ইউসিবিলের অন্য যেসব পরিচালক রয়েছেন, তারা হলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের স্ত্রী ও ইউসিবিএলের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান, বশির আহমেদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এম এ সবুর, বজল আহমেদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, ইমরানা জামান চৌধুরী ও রুক্সানা জামান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এসব অ্যাকাউন্টে মোট ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৭টি শেয়ার রয়েছে, বর্তমান বাজারে যার আনুমানিক দাম ৫৭৬ কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এর আগে দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মশিউর রহমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭-এর ১৮(১) ধারা অনুযায়ী একাউন্ট জব্দ করার আদেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন।
জানা গেছে, ২৬টি অবরুদ্ধ অ্যাকাউন্টের মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামানের ৩১ লাখ ৯৩০টি শেয়ার, বশির আহমেদের ৩১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৫,
সাবেক মন্ত্রীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরীর ৪৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭৩টি, তার স্ত্রী রুক্সানা জামানের ৩১ লাখ ৩ হাজার ৮৯, এম এ সবুরের ৩৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৮, বজল আহমেদের ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪২, নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ৩১ লাখ ১ হাজার ৩৭৬, আসিফুজ্জামান চৌধুরীর ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৬৬টি শেয়ার রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট সাতটি কোম্পানির বিও অ্যাকাউন্টও আদালতের আদেশের আওতায় এসেছে। এই কোম্পানিগুলো হলো ভলকার্ট ট্রেডিং লি., লিজেন্ডারি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লি., স্পেলেন্ডেড ট্রেডিং লি., আরামিট থাই এলমিনিয়াম, অর্ডেন্ট অ্যাসেট মেনেজমেন্ট লি., নাহার মেটালস লি. ও এরোমেটিক প্রোপার্টিস লি.। এই প্রতিটি কোম্পানিই সাইফুজ্জামান চৌধুরী বা তার পরিবারের মালিকানাধীন অথবা ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে পরিচালিত বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় ফিরে এলে ২০১৪ সালের পরই ইউসিবিএলের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার। ২০১৮ সালে পুরোপুরিভাবে ব্যাংকের দায়িত্ব নেয় তার পরিবার। নিজে মন্ত্রী হওয়ার পর স্ত্রী রুকমিলা চৌধুরীকে বানান ব্যাংকের চেয়ারম্যান। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার যে ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে, তার মধ্যে একটি ইউসিবিএল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আর্থিক সহায়তা ছাড়াই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ব্যাংকটি। মাত্র দেড় মাসেই ১ লাখেরও বেশি নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করে তারা, বাড়ে আমানতের পরিমাণও। এরই মধ্যে পুঁজিবাজারেও বাড়ে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম। অন্যদিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার স্বজনেরা পালিয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। যেমন ওঠে অপর পরিচালক বশির আহমেদের বিরুদ্ধেও। আত্মগোপনে থাকায় অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আদালতের আদেশ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।
রপ্তানিতে নগদ সহায়তা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ, পাবে ৪৩ পণ্য
রূপালী প্রতিবেদক
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ৪৩ ধরনের পণ্য ও খাতে রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা পাবে। শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা পাবেন রপ্তানিকারকেরা। গতবারও একই হারে এই ৪৩টি পণ্য সহায়তা পেয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪৩টি পণ্য রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা পাবে। নগদ সহায়তা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরাবরের ন্যায় চলতি অর্থ বছরের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে নগদ সহায়তা পরিশোধ বিষয়ে এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে। রপ্তানিতে নগদ সহায়তার হার কমানোর পর গত বছর সর্বশেষ যে হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, সেই হার এবারও বহাল রাখা হয়েছে। রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা ছাড়ের আগে বহির্নিরীক্ষক বা অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করাতে হয়। ব্যাংকে নিয়োজিত বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই নিরীক্ষা করানো যাবে।