ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

বগুড়ায় সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জমি বিক্রির অভিযোগ

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
পাঁচদেউলী পলাশ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কেনা জমির উপর নির্মিত বাড়ি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে দানকৃত জমি ব্যক্তিগতভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম মঞ্জু উপজেলার পাঁচদেউলী পলাশ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। তিনি ১৯৮৭ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালে তিনি ও তার ভাই তোফাজ্জল ইসলাম মিলে বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষা তিন শতাংশ জমি স্থানীয় রোকেয়া বেগমের কাছে রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করে দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকের শুরুতে স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পাঁচদেউলী পলাশ মেমোরিয়াল বিদ্যালয়। তখন থেকেই রফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়ের জমির একটি বড় অংশ—প্রায় ২৩ শতাংশ—৯৯৭ সালে তার চাচা, পল্লি চিকিৎসক হেদায়েতুল ইসলাম দানপত্রের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করেন। জমিটি তখনই বিদ্যালয়ের নামে নামজারি হয় এবং সরকারি খতিয়ানভুক্ত হয়।

পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও পাঁচ শতাংশ জমি এর বাইরে থেকে যায়। সেখান থেকেই তিন শতাংশ জমি বিক্রি করা হয় রোকেয়া বেগম নামে এক মহিলার কাছে, যিনি বর্তমানে সেখানে পরিবারসহ বসবাস করছেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১৪ জুন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘বিদ্যালয়ের নামে নামজারি করা এবং নিয়মিত খাজনা প্রদান করা সেই জমি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় রেজিস্ট্রি হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষক প্রাথমিকভাবে জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

তবে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘জমিটি আমার বাবার নামে রেকর্ড ছিল। আমরা ওয়ারিশ হিসেবে বিক্রি করেছি।’

এদিকে জমি কিনে বিপাকে পড়েছেন রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ। কাগজপত্রের জটিলতা বুঝি না। আমরা টাকা দিয়েছি, হেডস্যার নিজেই আমাদের কাছে দলিল করে দিয়েছেন। এখন যদি দলিল বাতিল হয়, তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাব?’

এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্কুলের জমি রক্ষা করা রফিকুল ইসলামের দায়িত্ব ছিল। রেকর্ড যদি তার বাবার নামেও থাকত, তা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও তারই ছিল। কিন্তু তিনি করেননি, বরং তা বিক্রি করেছেন, যা গুরুতর অপরাধ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নিবন্ধন ম্যানুয়াল ২০১৪-এর ৪২(১) ধারা অনুযায়ী, জমির খাজনা, খারিজ বা মালিকানা যাচাই করা আমাদের দায়িত্ব নয়। আমরা কেবল দলিল নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি। তবে কেউ প্রতারণার শিকার হলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ প্রয়োজন অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রারকেও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’