ঢাকা রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি

স্বপ্নবাজ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৩:১১ এএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরু হবে। যারা এই বছরের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান, তাদের হাতে সময় সীমিত। তাই এখনই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। অনেকেই মনে করেন প্রস্তুতির জন্য শুধু বই পড়াই যথেষ্ট। অবশ্যই বই পড়া জরুরি, তবে তার পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়, কী ধরনের প্রশ্ন আসে এবং কীভাবে মেধা তালিকায় ভালো স্থান নিশ্চিত করা যায়, এসব জানাও জরুরি। চলুন বিস্তারিতভাবে বিষয়গুলো জেনে নিই।

গত বছরের মতো, এ বছরও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি কিন্তু জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন নিয়ম নয়। এর আগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাছাই করা হত। তবে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি প্রক্রিয়ার নয়ম পালটে যায়। তখন থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরিক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে পরিচালিত হতো ভর্তি প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন পর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবারও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষেও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই পরীক্ষা হবে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন পদ্ধতিতে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি হবে মোট ১০০ নম্বরের। ১০০টি প্রশ্নের উত্তরের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ ঘণ্টা। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে। আরেকটি কথা বলে নেওয়া ভালো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য কোনো নেগেটিভ মার্ক নেই। ফলে অতিরিক্ত চিন্তা ছাড়া শিক্ষার্থীরা দ্রুত উত্তর দিতে পারবে এবং নিজের দক্ষতা অনুযায়ী নম্বর অর্জন করতে পারবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র চারটি অংশে বিভক্ত। যার প্রথমেই বাংলা অংশ। বাংলার জন্য থাকবে ২০ নম্বর। বাংলা অংশে সাধারণত ব্যাকরণ, শব্দার্থ, প্রবন্ধ, ছোট গল্প বা কবিতা থেকে প্রশ্ন আসে। দ্বিতীয় অংশ হলো ইংরেজি। আর এই অংশেও থাকবে ২০ নম্বর। এখানে ভোকাবুলারি, গ্রামার এবং সংক্ষিপ্ত পাঠভিত্তিক প্রশ্ন থাকে। তৃতীয় অংশ সাধারণ জ্ঞানের জন্য থাকবে ২০ নম্বর। এখানে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইতিহাস, ভূগোল, সাম্প্রতিক ঘটনা, বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিসংক্রান্ত প্রশ্নাবলি থাকবে। বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান মিলিয়ে মোট নম্বর হলো ৬০। আর বাকি অংশে থাকবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন। এই অংশে থাকবে ৪০ নম্বর, যা প্রতিটি শাখার নিজস্ব বিষয় অনুযায়ী দেওয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক প্রশ্ন থাকবে। মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আসবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পাশ নম্বর হলো ৩৫। তবে মেধা তালিকায় স্থান নিশ্চিত করতে কেবল পাশ করাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। মেধা তালিকা তৈরি হয় মোট ২০০ নম্বরে, যা আবার তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যার মধ্যে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার জিপিএর ৪০ শতাংশ (চতুর্থ বিষয়সহ) নিয়ে ৪০ নম্বর, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার জিপিএর ৬০ শতাংশ (চতুর্থ বিষয়সহ) নিয়ে ৬০ নম্বর এবং ভর্তি পরীক্ষার নম্বর ১০০ নম্বর যুক্ত হয়ে মেধা তালিকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ পূর্বের শিক্ষাগত অর্জন এবং ভর্তি পরীক্ষার ফল উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের দ্রুত এবং সঠিক উত্তর দেওয়ার দক্ষতা প্রয়োজন। তাই পড়াশোনার প্রস্তুতি যথাযথভাবে করা জরুরি। বাংলা ও ইংরেজির জন্য নিয়মিত ব্যাকরণ এবং সাহিত্য পড়া, সাধারণ জ্ঞান ও হালনাগাদ তথ্য রাখা এবং বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়গুলোর সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করে প্র্যাকটিস করা ভালো ফলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয় সময় ভাগ করে পড়াশোনা করলে। একবারে সব বিষয় পড়লে বিষয়গুলো মনে রাখা কঠিন হয়ে যায়। প্রতিদিন বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান এবং বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়গুলো ভাগ করে পড়া উচিত। বিশেষ করে দুর্বল বিষয়গুলোর ওপর বেশি মনোযোগ দিন। নিয়মিত মক টেস্ট এবং পুরোনো প্রশ্নপত্র দেখে প্রশ্নের ধরন বোঝা যায় এবং সময়সীমার মধ্যে পরীক্ষার দক্ষতা বাড়ে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ রাখতে হবে, নিয়মিত রিভিশন করতে হবে এবং হালনাগাদ তথ্য রাখার চেষ্টা করতে হবে। গঈছ পরীক্ষায় দ্রুত এবং সঠিক উত্তর দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অপরিহার্য। এটি কেবল তথ্য বা বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে না, সময় ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পিত পড়াশোনার ওপরও নির্ভর করে।