রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ১১:০৮ এএম

বিশেষ সাক্ষাৎকার

ইসলামী ব্যাংক ১৭ বছর ধরে প্রবাসী আয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে

রহিম শেখ

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ১১:০৮ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মো. ওমর ফারুক খান। দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে। ১৯৮৬ সালে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটিতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স আহরণে অন্যতম পথিকৃৎ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ১৬ বছর ধরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থাকার সফলতা, আগামীর পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিজনেস এডিটর রহিম শেখ।

প্রশ্ন: প্রবাসী বাংলাদেশিরা চলতি অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সের এ বাজারে ইসলামী ব্যাংকের অংশীদারত্ব কেমন ছিল?

এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১৬.৩২ বিলিয়ন ডলারের অধিক রেমিট্যান্স প্রবাহ অতিক্রম করেছে, যা এখন পর্যন্ত কোনো একক বছরে রেমিট্যান্স আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ইসলামী ব্যাংক বরাবরের মতোই রেমিট্যান্স আহরণে সর্বোচ্চ অবদান রাখছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক ২.৫০ বিলিয়ন ডলারের অধিক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে, যা ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ।

প্রশ্ন: একসময় দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি শীর্ষস্থান ছিল। গত কয়েক বছরে এ স্থান ধরে রাখলেও এ অংশীদারিত্ব কিছুটা কমে এসেছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহে ইসলামী ব্যাংকের অংশীদারিত্বের হার স্থিতিশীল না হলেও সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকে। তেমনি কয়েক বছর ধরে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও এ অংশীদারিত্ব কিছুটা কমে এসেছে। এই হ্রাসের পেছনে কয়েকটি মৌলিক কারণ রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে এটি ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়। এক্সচেঞ্জ রেট এই হ্রাসের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলো উচ্চ হারে ডলার ক্রয় করছে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের জন্য তাদের সেবার পরিধি বাড়াচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা তাদের নিকটস্থ ও সুবিধাজনক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যাপক প্রসার রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করেছে। মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন ব্যাংকিং এবং ফিনটেক প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তবে, এ পরিবর্তনকে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। ব্যাংকিং খাতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মের প্রসারের ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পূর্বে অনেক প্রবাসী হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠালেও এখন বৈধ চ্যানেলের সহজলভ্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতার কারণে তারা ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ সংকেত কারণ বৈধপথে রেমিট্যান্স আহরণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, আমদানি ব্যয় নির্বাহ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।

প্রশ্ন: অংশীদারিত্ব আরও বাড়ানোর জন্য আপনাদের পরিকল্পনা কী?

অংশীদারিত্ব বাড়াতে আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মাঠপর্যায়ে আমরা সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করছি। শাখায় রেমিট্যান্স লাউঞ্জ স্থাপনের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীদের দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী ব্যাংকের রেমিট্যান্স সেবা কার্যক্রম ও প্রমোশনাল প্রোগ্রামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের যেকোনো স্থানে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ- সেলফিনের মাধ্যমে নিজ নামে সঞ্চয়ী/মেয়াদি আমানত/ডিপোজিট স্কিম খোলার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেলফিনে নিত্যনতুন ফিচার সংযুক্ত করা হচ্ছে যাতে প্রবাসীরা সহজেই রেমিট্যান্সের টাকার তাৎক্ষণিক স্থিতি জানতে পারেন। একটি শক্তিশালী গ্রাহক নেটওয়ার্ক তৈরির বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলগুলোকে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নেওয়ার জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: কোন কোন এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে আপনাদের চুক্তি রয়েছে?

বর্তমান বিশ্বে বহুল জনপ্রিয় প্রায় সব এক্সেঞ্জ হাউসগুলোর সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। বিশ্বের ২২ দেশের ১৫৭টি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে ২০০-এর অধিক দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেনিফিসিয়ারীর হিসাবে জমা হয়, যা একক ভাবে দেশের সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া কয়েকটি উচ্চ রেমিট্যান্স উৎসারক দেশ তথা সৌদি আরব, সংয্ক্তু আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, জর্ডান ও সিঙ্গাপুরে আমাদের মোট ২৯ জন প্রতিনিধি কর্মকর্তা নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাসীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন: কোন কোন দেশের প্রবাসীরা আপনাদের ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান?

বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত আয় ইসলামী ব্যাংকে ফরেন রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে সৌদি আরব থেকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, ইতালি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলো, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি রয়েছে।

প্রশ্ন: প্রবাসীদের জন্য আপনার ব্যাংকে কী ধরনের আমানত ও বিনিয়োগ প্রডাক্ট রয়েছে?

দেশের সাধারণ জনগণ যেসব ব্যাংকিং সেবা পায়, প্রবাসীরা সেসব ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থা। আমানত প্রোডাক্ট হিসেবে মুদারাবা এনআরবি সেভিংস বন্ড (এমএনএসবি) অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রবাসীরা ৫ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদি এই বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে বিশেষ সেবা পেতে পারেন। প্রবাসীদের জন্য রয়েছে মুদারাবা এক্সপাট্রিয়েট হাউজিং ডিপোজিট স্কিম, যা ৩ বছর থেকে ১৫ বছর মেয়াদি। একজন প্রবাসী নির্দিষ্ট সময়ের পর বাড়ি করার উদ্দ্যেশ্যে এ বিশেষ ডিপোজিট স্কিমে টাকা জমা করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে প্রবাসী উদ্যোক্তা বিনিয়োগ প্রকল্প। এতে সহজ শর্তে ৫ লাখ টাকা এবং জামানত সাপেক্ষে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন?

সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের অ-আর্থিক প্রণোদনা কিংবা সুবিধা দিতে বিভিন্ন প্রাধিকার সুবিধাসংবলিত রেমিটার স্মার্ট কার্ড চালু করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে রেমিটার বা বেনিফিশিয়ারিরা সরকারের বিভিন্ন সেবা দপ্তর থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ঢাকা বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য উন্নত সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া যেসব প্রবাসী রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে অধিকতর অবদান রাখছেন তাদের প্রাইয়োরিটি কার্ড দেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন: হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার?

হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রথমত, ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো ডলারের বিনিময় হার এবং খোলাবাজারে (হুন্ডি) বিক্রীত ডলারের মূল্যের মধ্যে ব্যবধান কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিযোগিতামূলক বিনিময় হার নিশ্চিত করে এই তারতম্য ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে পারে, যাতে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হন। এ ছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে হুন্ডি নেটওয়ার্ক চিহ্নিত ও নির্মূল করার জন্য নজরদারি বাড়ানো এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। জনসাধারণের মধ্যে হুন্ডির অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং বৈধ চ্যানেলের সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, দূতাবাস এবং ব্যাংকগুলো এ কার্যক্রমে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে।

প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সেমিনার, মিডিয়া ক্যাম্পেইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা এ সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া, প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় স্কিম, উচ্চ মুনাফার বন্ড বা বিনিয়োগ সুবিধা প্রবর্তন করা যেতে পারে, যা তাদের অর্থ বৈধভাবে দেশে পাঠাতে উৎসাহিত করবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!