সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:০৪ এএম

দেড় দশকেও আতুরঘরে আয়

রহিম শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:০৪ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

সরকার ও ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়ে সুদ আয় ও ডলারের বিনিময়মূল্যের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিপুল মুনাফা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ৩৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তবে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অপরদিকে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ২০১২-২০১৮ সাল পর্যন্ত আট বছরে গড়ে প্রায় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করেছে। ২০১৮ সালে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী তৎকালীন বিআইএর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের চাপে ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দোহাই দিয়ে’ নিবন্ধন ফি কমিয়ে শতকরা ১০ পয়সা বা হাজারে ১ টাকা করা হয়। ফলে ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে এ আয় কমে গড়ে ১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় নেমে আসে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আইডিআরের প্রস্তাবিত আয় ছিল ৩৭ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা এবং ব্যয় ৩৭ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ছিল।

জানা গেছে, অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চাঙা ছিল। রাজস্ব আয় কম হওয়ায় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশি টাকা ধার করেছে। আবার ব্যাংকগুলোও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের চেয়ে বেশি টাকা ধার করেছে। ফলে বেশি সুদ আয় হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আবার রিজার্ভের অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ থাকায় সেখান থেকেও ভালো মুনাফা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ৩৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তবে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মুনাফার ৮ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে সরকারের হিসাবে জমা করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী বুধবার হিসাব বিবরণীতে নিরীক্ষক ও গভর্নরের স্বাক্ষরের পর বাকি টাকাও সরকারের হিসাবে জমা করা হবে।

এদিকে ২০১২ সালে ‘বিমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা’ করে আইডিআরএ। বিমা কোম্পানির নিবন্ধন নবায়নের জন্য প্রতি ১ হাজার টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে শতকরা শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ হারে ৩ টাকা ৫০ পয়সা ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরে গড়ে প্রায় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করেছে। ২০১৮ সালে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী তৎকালীন বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের চাপে ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দোহাই দিয়ে’ নিবন্ধন ফি কমিয়ে শতকরা ১০ পয়সা বা হাজারে ১ টাকা করা হয়। ফলে ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে এ আয় কমে গড়ে ১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় নেমে আসে। এতে আয় কমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আইডিআরের প্রস্তাবিত আয় ছিল ৩৭ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা এবং ব্যয় ৩৭ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা।

এ হিসাবে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ছিল। ফলে ‘বিমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা, ২০১২’ সংশোধন করে নিবন্ধন ফি প্রস্তাব আনা হয়েছে। যাতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ব্যয় সামাল দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী জানা গেছে, বর্তমানে বিমা কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন নবায়ন ফি দিতে হয় গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ওপর প্রতি হাজারে এক টাকা, যা খসড়া প্রজ্ঞাপনে পাঁচ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে খসড়া প্রজ্ঞাপন অনুসারে বিমা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়বে হাজারে চার টাকা। এর আগে ২০১২ সালে ‘বিমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা, ২০১২’-এ নিবন্ধন নবায়ন ফি প্রতি হাজারে গৃহীত গ্রস প্রিমিয়ামের বিপরীতে সাড়ে ৩ টাকা নির্ধারণ করা ছিল। পরে ২০১৮ সালে এই নিবন্ধন নবায়ন ফি ভারতের সঙ্গে তুলনাক্রমে কমিয়ে এক টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ বলছে, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতের মোট গ্রস প্রিমিয়াম প্রায় ৬ লাখ কোটি রুপি এবং বাংলাদেশের মোট গ্রস প্রিমিয়াম ছিল প্রায় ১৮ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। ভারতে নিবন্ধন নবায়ন ফি কম হলেও গ্রস প্রিমিয়াম আয় বেশি হওয়ায় ইন্সুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার বার্ষিক আয় ৬০০ কোটি রুপি এবং এতে দেশটির ব্যয়ভার সংকুলান সম্ভব। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষের আয়ও তুলনামূলক অনেক কম।

তথ্যমতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতেই নিবন্ধন ফি পাঁচ টাকা করতে চায় আইডিআর, যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫০ টাকা ছিল। ৮২টি বিমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর অনুমোদনকৃত মোট ১৫৫ জনবলের মধ্যে ১০২ জন কর্মরত আছেন, যেখানে ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ হাজার জনবল নিয়ে ৬৩টি ব্যাংক দেখভাল করছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, নিবন্ধন নবায়ন ফি বর্তমানে এক টাকা হিসাবে কর্তৃপক্ষের ব্যয় কোনো রকমে নির্বাহ করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো সঞ্চয় করা সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষের এই ব্যয় চার গুণ বা তারও বেশি বাড়বে। কারণ কর্তৃপক্ষ বিমাকারীদের আইআইএমএসের সেবা বিনা মূল্যে দেওয়া, জনবল বাড়ানো, জনবলের পেনশন-গ্র্যাচুইটি, নিজস্ব ভবন নির্মাণ, শাখা কার্যালয় স্থাপন, বিমাশিল্পে পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় বিসিআইআই, বিআইআইএম, অ্যাকচুয়ারিয়াল সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বর্ধিত টাকার প্রয়োজন।

এ ছাড়া সংস্থাটি বিমা খাতের মানোন্নয়নে বাংলাদেশ চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্স্যুরেন্স ম্যানেজম্যান্ট, অ্যাকচুরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আর এসব ব্যয় মেটাতেই আইডিআরএ সময়োপযোগী ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করছে। এসব কার্যক্রম করতে কর্তৃপক্ষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে নিবন্ধন নবায়ন ফি এক টাকার স্থলে পাঁচ টাকায় উন্নীত করা প্রয়োজন।

নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়ানো হলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি হবে কি না- এমন প্রশ্নোত্তরে আইডিআরএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। লোকবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লোকবল বাড়লে তখন আইডিআরএর খরচ বাড়বে। সবকিছু বিবেচনা করেই নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে বিমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করতে পারছে না।’

তিনি বলেন, আস্থার সংকট বিমা খাতের প্রধান সমস্যা। দীর্ঘদিনের সুশাসনের অভাবে এটি তৈরি হয়েছে। রাতারাতি এটা থেকে উত্তরণ করা যাবে না। এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য আইনগত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বিগত সময়ে আইডিআরএ যথাযথভাবে বিমা কোম্পানিগুলোকে তদারকি বা সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কারণ বিমা আইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ক্ষমতায়িত করা হয়নি। নিয়ন্ত্রক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে জরিমানা করা ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। জরিমানার টাকাটাও খুব সামান্য। 

সূত্র বলছে, ২০১২ সালে প্রণীত বিধিমালাকে ভিত্তি ধরে প্রায় দেড় দশকের বিমা খাতের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফিতি এবং বিমা খাতের উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই ফি হালনাগাদ করা হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টদের স্বার্থ ও মতামত নিয়েই দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায় আইডিআরএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সিদ্ধান্তে কোম্পানির ব্যয় বাড়বে বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন। তবে প্রায় ১১ বছর পর নিবন্ধন ফি সময়োপযোগী করাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, বিমায় শৃঙ্খলা আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। সে জন্য সংস্থাটির আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিমায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের বিমা খাতই লাভবান হবে। 

দেশের বিমা খাতে ব্যবসা পরিচালনা করা বিদেশি লাইফ বিমা কোম্পানির নিট প্রিমিয়াম আয়ের সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ খরচ করতে পারবে প্রধান কার্যালয়। এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে সম্প্রতি মতামত চেয়েছে আইডিআরএ। গত মাসে কর্তৃপক্ষ এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে মতামত চেয়ে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আইডিআরএ বলছে, বিদেশি বিমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের ব্যয়ের সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০২০’-এর প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, বিমাকারীর মূল ব্যবসাস্থল বাংলাদেশের বাইরে থাকলে সে ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের ব্যয় বিমাকারীর লাইফ ইনস্যুরেন্স ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বছরের নিট প্রিমিয়াম আয়ের সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধান কার্যালয়ের এই ব্যয়ের সীমা বিধি ৩-এ নির্ধারিত ব্যয়সীমার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং তা কোনো অবস্থাতেই বিধি ৩-এ বর্ণিত সীমার অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে না। আরও শর্ত উল্লেখ করা হয়, এই বিধিতে নির্ধারিত প্রধান কার্যালয়ের ব্যয় বিদেশে পাঠানোর আগে ব্যয়ের যৌক্তিকতাসহ পূর্ণাঙ্গ বিবরণী দাখিল করে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

২০২২ সালের ১৯ মে লাইফ বিমা  কোম্পানির বিদেশে প্রধান কার্যালয়ের ব্যয় কমিয়ে ১ শতাংশ ও নবায়নে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল আইডিআরএ। তখন মার্কিন বিমা প্রতিষ্ঠান মেটলাইফের বাংলাদেশ শাখার প্রধান কার্যালয়ের ব্যয় ৯ শতাংশ কমাতে হয়। এর আগে ১৯৫৮ সালের বিমা বিধিমালা অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশ এবং নবায়নের ২ শতাংশ খরচ প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। এবার তা আরও ২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

Link copied!