ফরিদপুরের সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সাড়ে চার বছরেও চালু হয়নি ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা। ভর্তি না হতে পারায় অধিকাংশ রোগীদের যেতে হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে স্থানীয় বাসীন্দাদের একদিকে সেবা পেতে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে অন্যদিকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এ কারণে দ্রুত ইনডোর চালু করে কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা ফিরে দেওয়ার দাবি স্থানীয়রা।
জানা যায়, জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে উপজেলার বালিয়াগট্টি এলাকায় ১ একর জায়গার ওপর তিনটি প্যাকেজে মোট ১৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যয়ে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাঁচটি ভবনের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৫০ শয্যা এ হাসপাতালের কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়ার হয়। এরপর প্রায় দুই বছর কোনো ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু ছিল না। তবে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ করোনাকালীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম চালু হয়। বহির্বিভাগে সেবা চালু হলেও এখনো অন্তঃবিভাগে সেবা চালু হয়নি। বর্তমানে সালথার আটটি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসার স্থল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যন্ত্রপাতি ঠিকমতো থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবলসংকট রয়েছে। ফলে ইনডোর চালু না হওয়ায় সব যন্ত্রপাতি পড়ে আছে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তা ছাড়া সেবা কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অন্তঃবিভাগ জনবলের পদ সৃষ্টির প্রয়োজন। এর মধ্যে শুধু বহির্বিভাগ জনবলের পদ থাকলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটছে মানুষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ চারজন মেডিকেল কর্মকর্তা থাকলেও কনসালটেন্ট হিসেবে কোন পদ সৃষ্টি হয়নি। ২৫ জনের মধ্যে ২১ জন নার্স থাকলেও নেই আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ওয়ার্ডবয় পদে কোনো জনবল।
রোগী ও স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইনডোর চালু হলে রোগীদের ভোগান্তি থাকবে না। দ্রুত ইনডোর চালু করার জন্য তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
স্থানীয় মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা হাসপাতাল থেকে আউটডোর সেবা পেলেও ইনডোর বা রোগী ভর্তি করার কোনো কার্যক্রম চালু নেই। ফলে রোগী ভর্তির মতো সেবা নিতে গেলে আমাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। বিশেষ করে রাতে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জেলা হাসপাতালে নিতে যানবাহন পেতে খুবই কষ্ট হয়। এতে সেবা পেতে বাড়তি অর্থ খরচ হচ্ছে। এর সঙ্গে ভোগান্তী বাড়ে কয়েকগুণ।
আজাদ খন্দকার বলেন, ‘হাসপতালে পরিপূর্ণ সেবা না পাওয়ায় খুবই ভুগান্তিতে রয়েছে উপজেলাবাসী। শিশু ও গাইনি কনসালটেন্ট এবং সার্জিক্যাল চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিয়ে ইনডোর চালু করলেই রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাবে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, দ্রুত হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করার জন্য।’
জানতে চাইলে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জনবলসংকট রয়েছে। ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা চালু করতে আরও অনেক জনবল প্রয়োজন। ধীরে ধীরে আমরা উন্নতি করছি। প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগীকে আউটডোরে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা চালু রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এক্স-রে করার ব্যবস্থা রয়েছে। চালু রয়েছে এনসিডি কর্ণার, যেখানে ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের চিকিৎসাসেবা ও বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। জনবল নিয়োগ দিয়ে ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু হলে সালথাবাসী কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা পাবে। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করি, শিগগিরই ইনডোর সেবা চালু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :