আমরা যখন প্রতিদিন সকালে আয়নায় নিজের মুখটা দেখি। কখনো উজ্জ্বল, কখনো নিস্তেজ, কখনো বা হঠাৎই এক-দুটো ব্রণ দেখা দেয়। অথচ কারো ত্বক সারা বছরই থাকে মসৃণ, ঝলমলে। এর কারণ একটাই ত্বকের ধরন। অনেকে জানেন নিজের ত্বকের প্রকৃতি, তাই যতœও নেন সেই অনুযায়ী; আবার অনেকেই জানেন না, তাই একই প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও কাক্সিক্ষত ফল পান না। ত্বক মূলত পাঁচ ধরনের লক্ষ্য করা যায় স্বাভাবিক, মিশ্র, শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল। প্রতিটি ত্বকের ধরন আলাদা, তাই যতœও আলাদা হওয়া প্রয়োজন।
স্বাভাবিক ত্বক- সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ
স্বাভাবিক ত্বক মানেই নিখুঁত ভারসাম্য। না বেশি তৈলাক্ত, না বেশি শুষ্ক। এই ত্বকে দাগ বা ব্রণ খুব একটা দেখা যায় না, ছিদ্রও সূক্ষ্ম হয়। মুখে সবসময় একটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল উজ্জ্বলতা থাকে। ত্বক সংবেদনশীলও নয়, তাই যতœ নেওয়াটা তুলনামূলক সহজ।
স্বাভাবিক ত্বকের জন্য দরকার হালকা ক্লেনজার ও ময়েশ্চারাইজার। রোদে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি এবং প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার রাখা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
মিশ্র ত্বক- দুটি জগতের মিশেল
এই ত্বক যেন একসঙ্গে দুই ধরনের গল্প বলে। মুখের টি-জোন কপাল, নাক আর থুতনির অংশ সাধারণত তৈলাক্ত, আর গাল ও মুখের পাশের অংশ শুষ্ক বা স্বাভাবিক। তাই এক জায়গায় ব্রণ হয়, অন্য জায়গায় খোসা ওঠে। মিশ্র ত্বকে ছিদ্র বড় হয় এবং ব্ল্যাকহেডের প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। এ ধরনের ত্বকের যতেœ ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন পণ্য ব্যবহার করাই ভালো। হালকা ফোমিং ক্লেনজার, আর নন-কোমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার এই ত্বকের জন্য আদর্শ।
শুষ্ক ত্বক- আর্দ্রতার অভাবের গল্প
শুষ্ক ত্বক মানেই ত্বকের আর্দ্রতার অভাব। এ ত্বক টান টান, খসখসে এবং রুক্ষ হয়। ক্ষুদ্র ছিদ্রের কারণে এটি দেখতে নিস্তেজ লাগে, কখনো লালচে দাগ পড়ে, খোসা ওঠে বা চুলকায়।
এ ত্বকের যতেœ দীর্ঘ সময় গোসল করা ঠিক নয়, কারণ তা ত্বককে আরও শুষ্ক করে। অ্যালকোহলমুক্ত, ময়েশ্চারাইজিং ক্লেনজার ব্যবহার করতে হবে। গোসলের পর সঙ্গে সঙ্গে ঘন ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। প্রয়োজনে ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করাও উপকারী।
তৈলাক্ত ত্বক- উজ্জ্বল কিন্তু চ্যালেঞ্জিং
তৈলাক্ত ত্বক সবসময় একটু চকচকে, উজ্জ্বল। কারণ এই ত্বক অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে। ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেড, এমনকি বড় ছিদ্রের সমস্যা দেখা দেয় ঘন ঘন। অনেকেই এই তেল কমাতে দিনে বারবার মুখ ধুয়ে ফেলেন, কিন্তু সেটিই আসলে ত্বকের ক্ষতি করে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে দিনে দুইবার হালকা ক্লেনজার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। ব্রণ হলে তা চেপে না ফাটিয়ে শান্তভাবে চিকিৎসা নিতে হবে। নন-কোমেডোজেনিক পণ্যই এই ত্বকের জন্য সেরা, কারণ তা ছিদ্র বন্ধ করে না।
সংবেদনশীল ত্বক- একটু বাড়তি যত্নের দাবি
সংবেদনশীল ত্বক যেন একটুখানি অভিমানী। নতুন কোনো পণ্য ব্যবহার করলেই লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে বা চুলকায়। অল্পতেই প্রতিক্রিয়া দেখানোই এই ত্বকের বৈশিষ্ট্য।
এ ত্বকের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ কোন উপাদানে সমস্যা হচ্ছে তা বুঝে নেওয়া। সব পণ্য সবার জন্য নয়। সংবেদনশীল ত্বকে হাইপোঅ্যালার্জেনিক ও প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই নিরাপদ।
পরিশেষে
ত্বকের ধরন জানা মানে নিজের প্রতি সচেতন হওয়া। কারণ, ত্বকের যত্ন মানে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রতীক। বয়স, খাদ্যাভ্যাস, আবহাওয়া বা হরমোন- সবকিছুর প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর। তাই নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্ন নিন, নিয়মিত পানি পান করুন, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, আর মেকআপ নিয়ে কখনো ঘুমাতে যাবেন না। কারণ সুন্দর ত্বক কোনো কসমেটিক নয়, এটি আসে ভালো অভ্যাস ও ভালোবাসা থেকে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন