মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান 

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৫:১২ এএম

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় 

জুনিয়র কর্মকর্তা সিনিয়রদের বস!

শাওন সোলায়মান 

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৫:১২ এএম

জুনিয়র কর্মকর্তা সিনিয়রদের বস!

ছবি: সংগৃহীত

সদ্যঃসাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের অবসরে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরেও পূর্ণকালীন সচিব পায়নি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ (পিটিডি)। উলটো জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে জুনিয়র কর্মকর্তা বসানো হয়েছে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ‘বস’ করে। রুটিন দায়িত্বে এই বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব জহিরুল ইসলাম। এ নিয়ে বিতর্ক এবং স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং এর অধীনস্থ অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

গত ৩০ এপ্রিল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জারীকৃত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, অতিরিক্ত সচিব জহিরুল ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে অবসরে যান মুশফিকুর রহমান। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত সচিব পদে পূর্ণকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি নতুন কাউকে। মুশফিকুর রহমানের স্থলে অতিরিক্ত রুটিন দায়িত্ব পান জহিরুল ইসলাম। কিন্তু রুটিন দায়িত্বে কার্যক্ষমতা খুব সীমিত হওয়ায় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল এই মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম। মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন একদিকে ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে। কারণ এই মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকারবলে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। ফলে একজন পূর্ণকালীন সচিবের অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল না; নেওয়া যাচ্ছিল না গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই অচলাবস্থা কাটাতে তড়িঘড়ি করেই রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত জহিরুল ইসলামকে অধীনস্থ সংস্থাগুলোর চেয়ারম্যান ঘোষণা করে ১৫ মে অফিস আদেশ জারি করা হয়।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল), টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরি কেবলস কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেড, টেলিফোন শিল্প সংস্থা লিমিটেড (টেশিস) এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড। 

এই অফিস আদেশ জারির পর জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ইস্যুতে সৃষ্টি হয়েছে আরেক বিতর্ক। জানা যায়, জ্যেষ্ঠতার তালিকায় জহিরুলের চেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানে-আলমকে ডিঙিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জহিরুলকে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম থেকে ১৭তম ব্যাচ পর্যন্ত শুধু অতিরিক্ত সচিব পদেই দুই শতাধিক কর্মকর্তা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন। কর্মরত অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে অনেকেই পদোন্নতির জন্য যোগ্য হলেও তাদের উপেক্ষা করে ১৮তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকে সচিব পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল রাখায় সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। শুধু বহাল রাখাই নয়, দীর্ঘ সময় তাকে এই পদে রাখার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান হিসেবে করা অফিস আদেশ নিয়েও উঠেছে তীব্র আপত্তি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে জহিরুল ইসলামের চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে দাপ্তরিকভাবে সেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘রিপোর্টিং বস’-এ পরিণত হয়েছেন, তাদের থেকে জুনিয়র কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। যেমন ডাক ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ তিনজনই বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। অথচ সচিব এবং বিটিসিএল, টেলিটকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের প্রধান বনেছেন ১৮তম ব্যাচের জহিরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগে দেখা যাচ্ছে জহিরুল ইসলামের ছবি। এমন প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তাদের মাঝে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না তারা। তবে পরিচয় গোপনের শর্তে জহিরুল ইসলামের ঊর্ধ্বতন ব্যাচের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জুনিয়র অফিসার এখন আমাদের বস। আমাদের অবস্থা তো বুঝতেই পারছেন। কিন্তু তারা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’ 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে জহিরুল ইসলামের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১, (তৎকালীন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকল্প থাকাকালীন এর উপপরিচালক (ডিপিডি) ছিলেন তৎকালীন উপসচিব জহিরুল ইসলাম। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদের সাথে ঘনিষ্ঠতায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডে পান পরিচালকের পদও। 

সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পূর্বে ড. শাহজাহান মাহমুদের আশীর্বাদেই উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিও পান তিনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়ে রাতারাতি বনে যান বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা। এরপর সে মাসেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পান। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জহিরুল আলম। 

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘কে কী বলেছে জানি না। আমাদের পদোন্নতি পদায়ন, সব হয় জনপ্রশাসন থেকে। যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা আমার থেকে অনেক সিনিয়র, আমার থেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী। গত ১৭ বছর আমার ওপর লোকজন প্রভাব খাটিয়েছে। শাহজাহান মাহমুদ বিদেশি ছিলেন। বাংলাদেশে এসে দেখলেন যে, কাকে দিয়ে তার কাজ হবে। পিএস হিসেবে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছিল আমার, আমি মোটামুটি বুঝি যে, কীভাবে কোন কাজটা করতে হয়। এ বিষয়টা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।’ এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Link copied!