শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৬:১৫ এএম

সুব্রতর ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজনের ৬ দিন রিমান্ড

আড়াই বছর আয়নাঘরে থাকার দাবি সুব্রতর

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৬:১৫ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীসহ সারা দেশে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যার নীল নকশা তৈরি করেছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার শিষ্য মোল্লা মাসুদ। তাদের তালিকায় ছিল বিএনপি-জামায়াত ও এনপিসির বিভিন্ন শ্রেণির নেতারা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা। বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে  হুন্ডির মাধ্যমে ভারত থেকে টাকা পাঠাচ্ছিল তাদের কাছে। ওই টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় শুটার ও কিলার তৈরিতে কাজ করছিল কুষ্টিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী। গত মঙ্গলবার রাতে তাদের হাতিরঝিল থানায় হস্তান্তরের পর গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে বলে গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন দাবি করেছেন, আড়াই বছর ধরে তাকে আয়না ঘরে রাখা হয়েছিল। সাংবাদিকরা যেন তদন্ত করে সত্যটা লেখে। তিনি বলেন, আমি যা সেটাই লিখবেন। সত্যি কথা লিখবেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলীর (৬১) ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই মামলায় গ্রেপ্তার অপর তিন আসামির ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আসামিরা হলেন- আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ (৫৩), আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শুটার আরাফাত (৪৩) ও এমএএস শরীফ (২৫)।

এদিন বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিটে সুব্রতকে আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়। এরপর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তখন কাঠগড়ার রডের সঙ্গে তার হাত হ্যান্ডকাফ দিয়ে বাঁধা ছিল। এ সময় সুব্রত বলেন, ২০২২ সালের রমজান মাসের ২৬ তারিখ ভারত থেকে আমাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। এরপর আমাকে আড়াই বছর আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। আয়নাঘরে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। পরে ৫ আগস্ট রাত ৩টার সময় আমাকে চোখ বেঁধে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ছেড়ে দেয়। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সাংবাদিকরা যেন তদন্ত করে সত্যিটা লেখেন। আমি যা সেটাই যেন লেখেন। সত্যি কথা লিখবেন। হলুদ সাংবাদিক হবেন না। ১৯৮৯ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে লিখতেছেন। আপনারা কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু লিখবেন না। সাংবাদিকদের বোঝা উচিত তারা কী লিখছে, তার প্রভাবে কী হতে পারে। আমার পরিবার আছে। ৬১ বছর বয়স হয়ে গেছে। এই আধুনিক যুগে যদি আমাকে চাঁদাবাজ বানান? এই আধুনিক যুগে যদি চাঁদাবাজ না ধরতে পারেন, তাহলে কী লাভ সাংবাদিকতা করে। তদন্ত করেন যে, কে আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করল। আপনারা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক। দোয়া করি, আপনাদের জন্য।

পরে এজলাসে বিচারক আসলে কথা বলা বন্ধ করেন সুব্রত বাইন। এরপর শুনানি শেষে হাতিরঝিল থানার অস্ত্র মামলায় তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

সূত্রমতে, ৫ আগস্টের পর থেকে ক্রমাগত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্তি পাওয়া এবং বিদেশে থাকা পলাতক সন্ত্রাসীদের দেশে প্রবেশ করা। এ অবস্থায় দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চলমান সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান জোরদার করা হয়। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর তৎপরতায় এবং যৌথবাহিনীর দেশব্যাপী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রকাশ্যে আসা শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের অনুসারীরা আত্মগোপনে চলে যায়। অনেকে দেশ ছেড়ে পালায়।

গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিয়াদ আহমেদ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
 
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে গত মঙ্গলবার সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামি সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারা সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করত। সুব্রত বাইন সে সময় খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা পেয়ে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে।
 
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, আসামি এস এম শরীফের হাতিরঝিলের এক বাড়িতে তারা নিয়মিত মিটিং করেন এবং সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি ও অপরাধ সংগঠনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রাখা আছে। পরে হাতিরঝিল থানার নতুন রাস্তা এলাকা থেকে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে আসামি এস এম শরীফ ও আসামি মো. আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার আইএসপিআর জানিয়েছিল, দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতা এবং পরিকল্পনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া কুষ্টিয়া ও হাতিরঝিলে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানে ৪৬ স্বতন্ত্র ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের একটি ইউনিট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সফলভাবে দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং তাদের দুজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হত্যা, চাঁদাবাজি এবং নাশকতা চালিয়ে আসছিল। এ অভিযান ছিল দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতা এবং পরিকল্পনার ফসল। অপারেশনটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা সংঘর্ষ ছাড়াই পরিচালিত হয় যা আমাদের বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর দেশে ফেরেন আলোচিত এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এরপর ফের শুরু করেন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড। হয়েছেন সংবাদের শিরোনামও। এরপর নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা। বিষয়টি টের পেয়ে তারা ঢাকা ছেড়ে চলে যান কুষ্টিয়ায়। সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। যৌথ বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়েন আলোচিত এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এরপরই বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়।
 
সূত্রমতে, শুটার আরাফাত ও শরীফের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর তারা বাইন ও মাসুদের মুখোমুখি হন। এর আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ডিবি পুলিশকে তাদের বিষয়ে একটি ধারণা দেওয়া হয়। সেখানে তাদের মিশন কি ছিল তাও উল্লেখ করে দেওয়া হয়। এরপর ওই বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার মিশনে নেমেছে বলে স্বীকার করেন। তাদের টার্গেট ছিল বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপির ওয়ার্ড, থানা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কিছু নেতাকে হত্যা করা। এক কথায় টার্গেট কিলিং।

এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে মামলার পর তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর রাতেই তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে চলে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ। চারজনকে আলাদা আলাদা রুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। 

গোয়েন্দা পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে লোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে অস্ত্র-গুলি ও টাকার উৎসও জানার চেষ্টা চলছে। এলাকাভিত্তিক তাদের সদস্য সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের নেওয়ার পর প্রথমেই চারজনকে আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর প্রথমে শুটার আরাফাত ও শরীফকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলির বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসে। অস্ত্র ও গুলি সীমান্ত থেকে সংগ্রহের পর তারা আরাফাত ও শরীফের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ওই অস্ত্রগুলো মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডা এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। ওইসব সন্ত্রাসীরা ৫ আগস্টের পর সুব্রত ও মাসুদের দলে যোগ দেয়। এলাকাভিত্তিক ওইসব সন্ত্রাসীদের তালিকাও অনেক বড়। তবে তাদের নাম পুলিশের খাতায় নেই। এ কারণে গোয়েন্দারা অনেকেই বিস্মিত হন। তারা সবাই উঠতি বয়সি এবং এলিট শ্রেণির বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!