বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা ফেরত এলে বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ঋণ নেওয়া দরকার হতো না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিগত সরকার দেশের ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইনশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক ব্যবস্থাসহ সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছিল, যা বর্তমান সরকার পুনরুদ্ধার করছে। মূলত দেশকে আইসিইউতে রেখে গিয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাইজুল কবির, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মুনসুরসহ সরকারের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংসদ না থাকায় গত সোমবার জাতির সামনে বাজেট পেশ করা হয়েছে। অর্থ বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে নতুন কিছু যদি আসে, সেটাও বিবেচনায় নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সহজ নয়। পাচারের টাকা পেলে বাজেট সাপোর্টের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যেতে হতো না। পাচারের টাকা ফেরত আনতে সময় লাগবে। আমরা বলেছি, এক-আধ বছর লাগতে পারে, সেই প্রোসেস শুরু হয়েছে।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পাচার হওয়া কালো টাকা দেশে আনার বিষয়ের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কাজ হচ্ছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সহজ না। যারা টাকা পাচার করে, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক, লেয়ারিং করে করে টাকা পাচার করে। এমন না যে ধপ করে টাকা পাঠিয়ে দিলাম। আপনি কোথায় টাকা পাঠাবেন, সেটা সরাসরি না, ঘুরে ঘুরে টাকা যায়।
তিনি বলেন, এগুলো ট্রেস করা হচ্ছে। সময় লাগবে, তবু প্রোগ্রেস হচ্ছে। নাইজেরিয়ায় ২০ বছর লেগেছে। আমরা বলেছি, এক-আধ বছর তো লাগতে পারে, সেই প্রোসেস শুরু হয়েছে। এটা সত্য, পাচার হওয়া কালোটাকা পেলে আমার বাজেট সাপোর্ট কম লাগত। আইএমএফের কাছে আর যেতে হতো না। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেটা পারি নাই।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেছেন, কালোটাকা সাদা করে দেওয়া হোক ঢালাওভাবে। কালোটাকা কিন্তু ঠিক কালো টাকা না, আমরা বলছি অপ্রদর্শিত আয়। অপ্রদর্শিত আয় যদি থাকে, শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা কালোটাকা না।
তিনি আরও বলেন, কালোটাকা সাদা করার দুটি দিক আছেÑ একটা হলো নৈতিক দিক, আরেকটা হলো প্রেক্টিক্যাল দিক। আমরা ট্যাক্স পাব কি না। দুই দিকে যাতে কালোটাকাটা সাদা কারা যায়, সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখব। আমরা বলছি না কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে খুব ভালো কিছু করে ফেলেছি।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেনব, বাজেটে বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপ একেবারে নেই তা কিন্তু না। বাজেটে নারীদের জন্য ফান্ড আছে, স্ট্যার্টআপের জন্য অর্থ বরাদ্দ আছে, যুবকদের জন্য টাকা দিচ্ছি। বাকি অনেক খাতের জন্যও আছে। তবে একেবারে বৈষম্যবিরোধী, কর্মসংস্থানের জন্য নাই সেটা কিন্তু না। ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক কিছুর ট্যারিফ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেট গত বছরের তুলনায় ছোট হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন খুব বেশি কঠিন না। বাজেট ছয় মাসের জন্য না, তিন মাস বা ছয় মাসে বাজেট করা যায় না। বাজেট করতে হয় এক বছরের জন্য, মুদ্রানীতি করতে পারে ছয় মাসে। কিন্তু আমরা বাজেট ৯ মাস ৬ মাসে করতে পারব না।
ফুটপ্রিন্টে নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, আমরা কি ফুটপ্রিন্ট দিয়ে যাচ্ছি, আমরা যে ভালো কাজটা করে যাচ্ছি সেটা পরবর্তী সরকার যদি কন্টিনিউ করে। যদি সেটা না করে, তাহলে আপনারা তাদের প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা যদি খারাপ কাজ করে থাকি, তাহলে বলতে পারে এটা ভালো না, বাদ দিয়ে দাও। কিন্তু আমরা সে ধরনের কাজ করছি না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য আগের মতো কোনো বিশেষ সুযোগ নেই। তবে দুটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করে ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর একটি হলোÑ কেউ নিজের জমিতে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে যদি বাড়ি তৈরি করেন, তাহলে দ্বিগুণ কর দিয়ে তা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না, বিষয়টা কিন্তু তা নয়। অন্যান্য সংস্থার প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে।
দ্বিতীয় সুযোগটি হলো ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে আমরা কর পাঁচগুণ করে দিয়েছি। এটা খুব ব্যয়বহুল হয়েছে। তারপরও অনেকেই যেহেতু এটা নিয়ে কথা বলতেছে, আমার মনে হয় স্যার (অর্থ উপদেষ্টা) সবাই আলোচনা করে চিন্তা করতে পারেন কী করবেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা তিন বছরের জন্য বাজেট দিয়েছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেকে বলেছেন, আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আসলে আমরা এসব অনুসরণ না করে চট করে বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ একটা রেভিনিউ আনব সেটা সম্ভব না। আসলে হুট করে একটা বিপ্লবী বাজেট দেওয়া যায় না। আমরা কতগুলো ফ্রেমওয়ার্ক বা পদাঙ্ক অনুসরণ করে সামনে যাচ্ছি ঠিক। এবার যে ইনোভেশন নাই, সেটা কিন্তু না। কিছু পদক্ষেপও আছে। বাজেট তিন বছর হওয়াতে বাজেট চলমান থাকাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতা নিইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে নিয়েছি। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে, অনেকেই বলেছেন দেশ আইসিইউতে ছিল, খাদের কিনারে চলে আসছিল। বিশেষ করে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। সে সময় যদি আমরা দাযিত্ব না নিতাম তাহলে কী হতো। যা-ই হোক, আমরা চেষ্টা করে সবাই মিলে দেশটাকে একটা স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে বাইরের সম্পদ না আনার জন্য অনেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তবে আমরা বাইরের নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করেছি। আমরা তিন বছরের বাজেট পরিকল্পনা দিয়েছি। অনেকে বলছেন, আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আসলে আমরা এসব অনুসরণ না করে চট করে বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ একটা রেভিনিউ আনব, সেটা সম্ভব নয়। আমরা কতগুলো ফ্রেমওয়ার্ক বা পদাঙ্ক অনুসরণ করে সামনে যাচ্ছি ঠিক। এবার যে ইনোভেশন নেই সেটা কিন্তু নয়। কিছু পদক্ষেপও আছে। বাজেট তিন বছর হওয়ায় বাজেট চলমান থাকায় ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
তিনি বলেন, যে সংস্কারগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেটা চলমান। আমরা যতটুকু পারি করব। আমরা যে পদচিহ্ন রেখে যাব (ফুটপ্রিন্ট), আশা করছি পরবর্তি সময়ে যারা আসবে তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটের পরিপ্রেক্ষিত আপনারা জানেন যে আমাদের সম্পদ সীমিত, চাহিদা অনেক বেশি। বাইরে থেকে সম্পদ আনা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, পুঁজিবারের অবস্থা, ব্যাংকের অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার অবস্থাÑ সব মিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা। এর ভেতরেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে কিন্তু আমরা বাজেট করিনি। আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল, যেমন মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাত, জ্বালানি খাত, রাজস্ব আদায়Ñ এ সব কিছুর মধ্যেই বাজেট করতে হয়েছে। তারপরও প্রথমবারের মতো আমাদের বাজেটের আকার বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, এত দিন তো আপনারা প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির ন্যারেটিভ শুনেছেন। গ্রোথ হয়েছে অনেক বেশি, কিন্তু সেটার সুবিধা কে পেয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমরা মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়, ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালিয়ে যেতে পাওে, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাজেট সাজিয়েছি।
সালেহউদ্দিন বলেন, জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা রাজস্ব আদায় বাড়ানো, এনবিআর সংস্কার করছি। আমরা বাইরের ঋণের ওপর যে নির্ভর করব সেটা না। আমি প্রাথমিকভাবে মনে করি জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব বাজেট হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এত চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমাদের প্রতি একটু সমবেদনা নিয়ে কাজ করেন, একবারেই একপেশে কিছুই হয় নাই, গুণগান গাইব সেটাও আমরা চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। মোট কথা, আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ও বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বাজেট দিয়েছি। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিকৃল অবস্থা থেকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মাঝখানে থমকে গিয়েছিল, এখন আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা, সামাজিক নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাইরের প্রতিটা দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক রয়েছে। প্রত্যেকের পজিটিভ মনোভাব রয়েছে, সেটা আরও একটু সুসংহত করতে দেশের ভেতরের মানুষের যেন একটু ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। যদি আমরা নিজেরাই বলি খারাপ, তাহলে অন্যরা তো করবেই। কাজেই দেশের ভেতরের মানুষের যদি দেশের প্রতি দরদ ও সরকারে প্রতি সহযোগিতার মনোভাব থাকে আমরা সেই প্রত্যাশাই করছি।‘
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘একসময় দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছিলেন দেশে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা ছিল। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমরা সিন্ডিকেট ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটপ্লেস তৈরি করেছি, যা অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়েছে।’
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট-নির্ভর বাজার ভেঙে একটি মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ফেরানো সম্ভব হয়েছে। এতে ভোক্তা স্বার্থ যেমন রক্ষা পেয়েছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনায় এসেছে জবাবদিহি ও ভারসাম্য। বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ নয়, বরং নীতি সহায়তা ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা বজায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন গতি পেয়েছে, তেমনি মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার একটি বাস্তবমুখী বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই বাজেটে কোনো বিশেষ শ্রেণিকে কর সুবিধা দিয়ে বৈষম্য তৈরি করা হয়নি। কর কাঠামো সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য রাখা হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘একসময় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেখান থেকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছি। এখন এসব প্রতিষ্ঠান সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করছে।’
অর্থনৈতিক নীতির পরবর্তী ধাপ হিসেবে ঋণ পরিশোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার বলে জানান শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ধরনের ঋণ দ্রুত পরিশোধে অঙ্গীকারবদ্ধ। এতে দেশের সার্বভৌম আর্থিক সক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে।
তিনি মনে করেন, এখন থেকে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি হবে, যেখানে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও বাজার সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে যত কথা বলি, ততটা কৃষকের অধিকার নিয়ে বলি না। এবার অনেক আলু উৎপাদন হয়েছে। ভোক্তারা অল্প দামে আলু পেলেও কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এবার আদা, পেঁয়াজ, ভুট্টার উৎপাদনও বাম্পার হয়েছে। আর সবজির জন্য আমরা ১০০টির মতো কোল্ড স্টোরেজ করে রাখছি। আমরা খাবার আলু এবং বীজের আলু রাখার জন্য আলাদা করে কোল্ড স্টোরেজ করে দিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে সবজি ওঠার আগেই আমরা এসব কোল্ড স্টোরেজ বানাব। প্রায় ৫০০টির মতো ঘর করে দিচ্ছি যাতে চার-পাঁচ মাস এটি সংরক্ষণ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি ঈদ বা রোজার বাজার তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করেন, তাহলে দেখবেন বর্তমানে আমরা স্বস্তির মধ্যে আছি। গতবারের চেয়ে এবার আমাদের সব ফসল বেশি উৎপাদন হয়েছে। আমাদের কোল্ড স্টোরেজগুলো আলুতে ভরে গেছে। কৃষকের ঘরেও আলু রয়েছে।’
জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘এটা অসংগতি কমানোর বাজেট, অপচয় কমানোর বাজেট। আমরা জ্বালানি বিভাগ থেকে এলপিজি গ্যাসের দাম কমানোকে সমর্থন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সড়ক বিভাগ থেকে চাঁদাবাজিকে সীমিত করার চেষ্টা করছি। আজকেই খবর পেয়েছি, যারা গ্রামে বাড়ি যাচ্ছেন, তাদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ নেমে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এক্সচেঞ্জ রেট। এটা কমাতে না পারলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ত। এখন এটা স্বস্তিতে এসেছে। এক্সচেঞ্জ রেট বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও তেমন পরিবর্তন হয়নি। এতে আস্থা এসেছে, মূল্যস্ফীতি একটি ভালো জায়গায় যাচ্ছে।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ ছিল, এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি একটু বেশি আছে, এটি কমছে, এখন ১০ শতাংশের নিচে আছে। বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।’