ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

নির্বাচন টার্গেট করে ঘর গোছাচ্ছে বিএনপি

রুবেল রহমান
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ০৫:৩০ এএম
নির্বাচন টার্গেট করে ঘর গোছাচ্ছে বিএনপি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আগামী নির্বাচন ঘিরে দলীয় পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। ঘরে-বাইরে সবখানেই এখন নির্বাচনি ব্যস্ততা দলটির। টানা দেড় দশকেরও বেশি সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ঠিকমতো সভা-সমাবেশ করাই যখন চ্যালেঞ্জ ছিল বিএনপির জন্য, তখন কাউন্সিল ছিল স্বপ্নের মতো।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জেল খেটেই কূল পাইনি, কমিটি করব কখন? জুলাই অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পর থেকে দল গোছানোয় মন দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে কমিটি গঠনসহ জনসম্পৃক্ত সব কর্মসূচি পালনে নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। জোরদার করা হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। তথ্য সংগ্রহের জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের।

দলীয় কার্যক্রম সাজানো হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সংগতি রেখে। নির্বাচনের আগে নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় বিএনপি। ওদিকে নির্বাচন এককভাবে, জোটগতভাবে নাকি সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করা হবে, তা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই মীমাংসা করতে চাইছে বিএনপি।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে নানা মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা চলছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নবায়ন এবং দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে বিএনপি। গত ১৫ মে থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হবে ১৫ জুলাই।

এ বিষয়ে বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গঠন করা হচ্ছে নতুন কমিটি। বিএনপির দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সারা দেশে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৩৯টি আর আহ্বায়ক কমিটি আছে ৪২টিতে। মোট ৮২টি ইউনিটের মধ্যে ৮১টি ইউনিটে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুধু বরগুনা জেলায় কমিটি নেই। তবে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে মাত্র ১৪টি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে নতুন কমিটি।

এই পুনর্গঠনের মাধ্যমে গত ১০ মাসে যারা দলের কর্মসূচিতে একাত্ম না থেকে জোরজবরদস্তি দখল, চাঁদাবাজি এবং অবৈধভাবে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন, তাদের দল থেকে ঝেড়ে ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কালোমেঘ জমেছিল, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমানের বৈঠকে তা কেটেছে অনেকটাই। ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেÑ এমনটা ধরেই মাঠে নেমেছে বিএনপি।

নির্বাচনি নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ঘর গোছাতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতারা। ভোটের তপশিল ঘোষণার আগেই তৃণমূলের যেসব কমিটি ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সেখানে নতুন কমিটি দেওয়ার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঢাকা ছাড়া ৯ সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।

দলটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণতান্ত্রিক উপায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশের ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলা কমিটি করা হবে। তবে কমিটি গঠন নিয়ে অন্তর্বিরোধও নতুন করে সামনে আসছে। কয়েকটি উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আবার কমিটি দিয়ে নানা বিতর্কের মুখে সেই কমিটি বাতিলের ঘটনা আছে।

সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় দলটির নেতারা বিএনপিকে টার্গেট করে দলে প্রবেশের চেষ্টা করছে সমানতালে। কোন কোন জেলায় পদ বাগিয়ে নিয়েছে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করেই। সেই সব খবরে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের পদ বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, নির্যাতিত, ক্লিন ইমেজ ও দলের প্রতি আনুগত্য এমন নেতাকর্মীদের কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন করার বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি উপজেলা কমিটি গঠনে হাইকমান্ডের নির্দেশনা মানা হয়নি। কাউন্সিল না করেও কমিটি দেওয়া হয়েছে।

আবার আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে যাদের দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় দেখা যায়নি, হামলা-মামলার শিকার হননি, তারাও কোনো কোনো কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। এ নিয়ে দুর্দিনে মাঠে থাকা নেতাকর্মীদের অনেকে হতাশাও প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তুলে ধরেছেন। যে তিন মাপকাঠিতে দলের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু না করলেও ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে বিএনপি। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন ঘিরে নেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের বিভিন্ন তথ্য। প্রত্যেক আসনে বিএনপির প্রায় ২ থেকে ৫ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এর বাইরে প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি, চরিত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, এবার দলীয় মনোনয়নে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে তরুণ প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে বেশি। এ ছাড়া সরকার পরিচালনায় যারা দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবেন, নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন এমন প্রার্থীদেরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দল গোছানোর কাজ রাজনৈতিক দলগুলো সারা বছরই করে। তার জন্য আলাদা প্রস্তুতি লাগে না। আর বিএনপির মতো বড় দলের প্রার্থী নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। প্রত্যেক আসনেই আমাদের একাধিক নেতা আছে, যাদের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা আছে। কোনো কোনো আসনে ১০ জন প্রার্থী দেওয়ার মতো নেতাও আছে আমাদের।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বিএনপির বড় ভূমিকা ছিল। এই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের বিএনপির প্রতি ব্যাপক আগ্রহও রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ জুলাই থেকে দুই মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে চাঙ্গা রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি।

বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলও এ নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনটি জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নিজেদের অংশগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের কৌশল বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন।

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে রাজনীতি করে গেছে আওয়ামী লীগ, আর এখন জুলাই অভ্যুত্থান বিক্রি করে খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কেউ কেউ। ছাত্রদল কী ভূমিকা রেখেছে তা সবাই দেখেছে।

উত্তরাঞ্চলের একটি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘কমিটি গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। সেপ্টেম্বরের আগেই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। বিএনপি বড় দল, নেতা অনেক, সবাই দলের নেতৃত্ব দিতে চান। কিন্তু সবাই তো আহ্বায়ক-সদস্যসচিব হবেন না। কেউ বাদ পড়ে গেলেই তাদের অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। যদিও পরে আবার তা সমাধানও করা হচ্ছে।

কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়নের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি কোথাও সম্মেলন করতে পারেনি, কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এবার ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কমিটি গঠনে বিভাগীয় পর্যায়ে যারা তত্ত্বাবধান করছেন, তারা কাজ করছেন। তৃণমূলে গিয়ে বৈঠক করছেন। কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া।’

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করেছে বিএনপি। জেলখানা আর আদালতে ঘুরে ঘুরেই দিন কেটেছে বিএনপি নেতাদের। ঘর-সংসার কিংবা দল করার সময় পাননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। অভ্যুত্থানের পর দলকে আরও শক্তিশালী করতে পুরোপুরি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ফেরে দলটি।

গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা বাদে ৯ সাংগঠনিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌর, থানা কমিটি থেকে শুরু করে মহানগর ও জেলা কমিটি সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করতে ৯ সিনিয়র নেতাকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩ মাসের মধ্যে এসব কমিটি শেষ করারও নির্দেশনা ছিল ওই চিঠিতে।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে, সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বরিশাল বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, রংপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, ফরিদপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানকে।

দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদকদ্বয় এবং মহানগর ও জেলার সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্যসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করারও নির্দেশনা ছিল। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর নেতারা এরই মধ্যে ৭ মাস পার করেছেন। একটি জেলা ছাড়া বাকি সব জেলায় কমিটি কিংবা আহ্বায়ক কমিটি করেছে বিএনপি। বাকি ১টি দ্রুত সম্পন্ন করতে পারবে বলেও জানিয়েছে বিএনপির দপ্তর।

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, বান্দরবান ও নোয়াখালী জেলার নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। তারা আবার তাদের অধীনে থাকা সব কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে শুরু করছে। বিভাগে বাকি যেগুলো আছে অন্তত ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সব কমিটি গঠনের কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, সামনে যেহেতু নির্বাচন তাই দ্রুত নির্বাচনি প্রস্তুতিও নিতে হবে।

ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ৫ আগস্টের আগে সাড়ে ১৫ বছর ধরে আমরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করতে পারিনি। ঘরে বসে করতে হয়েছে, প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করতে হয়েছে। তখন এক অন্য ধরনের বাস্তবতা ছিল। এখন আমরা কর্মীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই কমিটি করছি।

জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক উপায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটিগুলো হচ্ছে। সংগঠনকে প্রাণবন্ত রাখতে হলে একটা গণতান্ত্রিক ধারায় কর্মীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং তাদের আকাক্সক্ষা ও ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে কমিটিতে। তাদের ভোটে কমিটি হতে হবে। এটিই হচ্ছে আমাদের স্পিরিট। সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।

এদিকে জেলার নতুন কমিটি নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও তৃণমূলের বেশ কয়েকটি কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

অনুমোদনের পর আলোচনা ও সমালোচনার মুখে ৯ দিনের মাথায় বাতিল করা হয় পাবনার ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলা বিতর্কিত নেতাদের পদ দেওয়ায় সেখানকার নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার স্থানীয় নেতারা। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনেও দুপক্ষের মধ্যে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নভেম্বরের পর থেকে মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, মাগুরা, নাটোর, বান্দরবান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা মহানগর, নরসিংদী, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আরও কয়েকটি জেলার নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীর কমিটি হয়েছে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে। তৃণমূলের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা, পৌর, থানারও অনেক কমিটি দেওয়া হয়েছে। বাকি কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ও পৌরসভা, মুকসুদপুর উপজেলা ও পৌরসভা এবং কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অবিলম্বে কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের দিয়ে নতুন করে কমিটি করার দাবি জানানো হয়। ১৯ জুন বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এমন অভিযোগ করে চিঠি দিয়েছেন গোপালগঞ্জের বিএনপি নেতারা।