রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০২:২২ এএম

পাচার অর্থ আদৌ ফিরবে?

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০২:২২ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

গত বছরের ৫ আগস্টের আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা পাচারের টাকায় বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। দলটি পতনের পর বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরাতে চ্যালেঞ্জ দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, বিদেশে পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরানো একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার এবং জটিল প্রক্রিয়া। সেই সঙ্গে বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং।

সূত্র জানায়, আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা অর্থ পাচার করে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। সেখানে তারা বিলাসী জীবন যাপন করছেন। শুধু তাই নয়, সেখানে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিদেশে বিলাসী জীবনযাপনে জনসাধারণের মাঝে ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে।

আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরানো একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া হলেও বর্তমান সরকার এসব ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, আমরা প্রথম ধাপে পাচার হওয়া সম্পদকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে চেষ্টা করছি। অ্যাসেটগুলো ফ্রিজ করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ল ফার্মের সঙ্গে কথা হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসবে। তা ছাড়া অ্যাসেট ট্রেসিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। পাচার হওয়া কার সম্পদ কোথায় আছে, সেটা খুঁজে বের করে আইনগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও আমরা কিছু তথ্য জানি, তবে সেগুলো ভাসা ভাসা। স্পেসিফিক, এক্সাক্ট ডকুমেন্টেশন ছাড়া কোনো তথ্য কোর্টে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইডি) এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিলেও পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা আসলেই চ্যালেঞ্জ। বিদেশ থেকে সম্পদ দেশে ফেরানো একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া, সেটা এই সরকার পারবে কি না, বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, তবে আওয়ামী লীগের যেসব মন্ত্রী-এমপি ও নেতা বিদেশে পাচারের টাকায় বিলাসী জীবন যাপন করছেন এবং বিদেশে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন, তাদের ধরতে আমরা কাজ করছি। এসব বিষয়ে সরকারের বিদেশি ল ফার্ম নিয়োগ আছে, তারাও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।  

সরকারি তথ্য ও সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত পাচারকারী ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কোম্পানি বা সম্পদের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য শনাক্ত করা হয়নি। শুধু ডাটা সংগ্রহের কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তবে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, বিগত সরকারের সময় সব মিলিয়ে আড়াই থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে প্রথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের সাধারণ মানুষ যখন অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিপর্যস্ত, তখন আওয়ামী লীগের এই সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের বিলাসী জীবনযাত্রা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল তাদের শাসনামল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এই নেতারা ক্ষমতায় থাকার সময় অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এসব টাকা দিয়ে বিদেশে বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাদের অনেকেই কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ পরিবারসহ আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সাধারণ মানুষ বলছেন, সম্পদ লুট করে এরা বিলাসী জীবন যাপন করছেন, অথচ দেশের সাধারণ জনগণ প্রতিদিন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এটি চরম অন্যায়। পাচার করা অর্থ ও ব্যক্তিদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনাতে সরকারের কাছে দাবি তাদের।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একাধিক নেতা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, আমাদের নেতারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে আয়েশ করছেন। আমরা সামান্য আওয়ামী লীগের সর্মথক হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিÑ এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। 

সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, আওয়ামী লীগের এই দুর্নীতিবাজ নেতাদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা উচিত। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনীতিতে পুনর্বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি এই নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অর্থ পাচারের ঘটনা আরও বাড়বে। তাই অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠেছে সর্বমহলে।

বিদেশে পাচার বিপুল সম্পদ দেশে ফেরাতে তৎপর অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য টাস্কফোর্স গঠনের পর মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। বিদেশে কার কত অবৈধ সম্পদ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত, হস্তান্তর রোধের পাশাপাশি এসব সম্পদ করা হচ্ছে অবরুদ্ধ (ফ্রিজ)। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর অনেকেই বলছেন, সম্পদ ও পাচার করা অর্থ জব্দের আদেশ শুধু কাগজে-কলমে। বেশ কয়েক মাস হলো সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে না।  

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুদকের আবেদনে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীদের সম্পদ ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার বিচারিক আদালত। জব্দের আদেশ নিয়ে অভিযুক্তদের সজাগ করতে বাইরের বিভিন্ন দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) চিঠি দিয়েছে সরকার। জবাব মিলেছে অনেক দেশ থেকেও। তবে দেশে সম্পদ জব্দের আদেশ হলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। লন্ডনে মাত্র দুজন প্রভাবশালীর সম্পদ জব্দের কথা জানা গেলেও আর কারও কোনো সম্পদ জব্দ বা অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। 

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি তাদের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সম্পদ পাচারের এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব ববি, ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় শতাধিক মন্ত্রী-এমপি-আমলা ও ব্যবসায়ী গ্রুপ।

এদিকে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সম্প্রতি ১২-১৫টি দেশের সঙ্গে চুক্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই পাচার করা কিছু সম্পদ দেশে ফেরানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক বলছে, ‘বিদেশের সম্পদ জব্দের আদেশ বাস্তবায়নে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের আদালতে সম্পদ জব্দের আদেশ হলেই বিদেশে জব্দ করা যায় না। কারণ বিদেশেও মামলা জিততে হবে। তারপর সম্পদ জব্দ বা দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এ বিষয়ে দুদকের ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব জানান, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা কোম্পানিতে শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিদেশে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা সম্পদের মূল্য ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৪১২ ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। 

এর আগে ২০১২ সালে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা পাচার হওয়া সম্পদ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনে দুদক। আদালতের আদেশের পর বিদেশে মামলা শেষে পাচার করা অর্থ দুদকের মাধ্যমে ফেরত আনা এটিই দেশের প্রথম ঘটনা। ওই ঘটনার মতোই দেশে ফেরানো হবে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পদ, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দুদক সূত্র জানায়, গত ১ অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে ৭১টি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ২৭টি দেশ থেকে এমএলএআর জবাব পেয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া চলতি বছর বিদেশের অনেকের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো তেমন কিছু হয়নি।  

জানতে চাইলে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিদেশের সম্পদ দেশে ফেরানো একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। কাজটি করা হয়ে থাকে এমএলএআরের মাধ্যমে।  

বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স নতুন করে সাজানো হয়েছে। এতদিন টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তবে প্রথমবারের মতো এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, দুদক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন।

এই টাস্কফোর্সের কাজগুলো হলো বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা; পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে হওয়া মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া; বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া; জব্দ বা উদ্ধার সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য আহরণ এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী টাস্কফোর্সের কাজ সমন্বয় করবেন। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে বিএফআইইউ।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানান, বিদেশে থাকা অর্থ-সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দের আদেশ বাস্তবায়নে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অবরুদ্ধ ও জব্দের আদেশ দুদকে এলে দুদকের অনুসন্ধানকারী বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দেশে এমএলএআর পাঠান। এমএলএআর একটি রাষ্ট্রের কাছে আরেকটি রাষ্ট্রের আইনি সহায়তা চাওয়ার প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে এটি প্রথমে আমাদের দেশের এমএলএআরের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। এই কর্তৃপক্ষ বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগে ছিল অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।

তবে বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমএলএআরের বিষয়ে মতামত চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠায়। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এমএলএআরের যৌক্তিকতা বিবেচনার পক্ষে মতামত দিলে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমএলএআর সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠায়। দূতাবাস সেটি সংশ্লিষ্ট দেশের এমএলএআরের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। পরে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি সেই দেশের উপযুক্ত আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই আদালত সে দেশের আইন ও বিধিবিধান অনুসারে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। সবকিছু ইতিবাচক থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশের দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্থ-সম্পদ অবরুদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মুখে রয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আর্থিক খাতের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। এ জন্য অর্থনৈতিক বেশ কিছু কারণ থাকলেও সবচেয়ে বড় ভূমিকায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। দেশের ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের জন্য যারা দায়ী, মানুষ তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখতে চায়। তা ছাড়া পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনাও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যেটা দেশের সর্বমহলের দাবি।’

Shera Lather
Link copied!