বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা।  ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তিন মাস আগে ঘোষিত প্রাথমিক হারের চেয়ে এটি ২ শতাংশ কম হলেও, তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি।

সম্প্রতি ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যার আওতায় তাদের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অ্যাকাউন্টে এই বহু প্রতীক্ষিত ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ২টা ৩৬ মিনিটে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে লেখা গত ৭ জুলাইয়ের একটি চিঠি প্রকাশ করেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি নিজ নিজ দেশের শুল্কহার উল্লেখ করে একই ধরনের চিঠি দিয়েছেন। নতুন এই হার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এই বিষয়ে আলোচনার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং জাতীয় নিরাপত্তা খলিলুর রহমান এখন ওয়াশিংটনেই রয়েছেন। শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির আশা করা হচ্ছে, যাতে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে।

জানা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৪০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় এক লাখ এক হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে শুধু পোশাক পাঠিয়েও আয় হয়েছিল ৮৮ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

রপ্তানির দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্প ফেরার তিন মাস পর গত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।

তখন বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নির্ধারিত হয়েছিল। আগে থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় দুই মিলিয়ে শুল্কের হার ৫২ শতাংশে ওঠে। তবে পরে ট্রাম্প তার বর্ধিত শুল্ক হার কার্যকরের সময় বাড়িয়ে দেন। এই সময়ে বিভিন্ন দেশকে তার সঙ্গে সমঝোতায় আসার সুযোগ দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শতাধিক দেশের পণ্যে শুল্ক হার বাড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ আলোচনার সেই সুযোগ নেয়, এই ফাঁকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদেশি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের নানা পদক্ষেপ নেয়।

এদিকে ৯০ দিনের সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার দুদিন আগে গত সোমবার বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক হারের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন হার কার্যকর হবে।

গত সোমবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এ ছাড়া মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করে ১৪টি দেশের নেতাদের চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প।

চিঠিতে ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা যেন এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপ না করে। তেমন কিছু করা হলে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্কের হার আরও বাড়িয়ে দেবে।

ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, যদি কোনো কারণে আপনারা আপনাদের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনারা যে হারেই বাড়ান না কেন, তা আমরা যে ৩৫% শুল্ক আরোপ করছি, তার সঙ্গে যুক্ত হবে।

এদিকে, একটি বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল এখনো ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের আলোচনার জন্য অবস্থান করছে। তবে ট্রাম্পের ঘোষণাই আপাতত চূড়ান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য চিঠিতে তিনি আলোচনার একটি রাস্তাও খোলা রেখেছেন।

তিনি লিখেছেন, আপনারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিজেদের এতদিনকার বন্ধ বাণিজ্য বাজার খুলে দেন এবং আপনাদের শুল্ক ও অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য বাধাগুলো দূর করেন, তাহলে আমরা হয়তো এই চিঠিতে দেওয়া হারের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারি।

ইউনূসকে দেওয়া ট্রাম্পের চিঠি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে।

এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দয়া করে বুঝুন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়Ñ এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশের জন্য অন্যতম প্রতিযোগী হবে ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ লাভজনক পোশাকের বাজারে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের সরাসরি প্রতিযোগী। ট্রাম্প গত বুধবার জানিয়েছেন, নতুন চুক্তির আওতায় ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করা হবে। পূর্বে এই হার ৪৬% করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সেই তুলনায় এই হার অনেক কম। তবে ৪৬% থেকে শুল্ক কমিয়ে ২০% করতে ভিয়েতনাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক তুলে নিতে সম্মত হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছিল। বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের একক বড় বাজার। সে জন্য আমরা শুরু থেকে সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির অনুরোধ জানিয়েছি। এ জন্য আমরা আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছিলাম। তবে পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

সরকারের তরফ থেকে আমাদের শুধু আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ আমরা জিজ্ঞাসা করেছি, দেশের কোন স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার কথা বলা হচ্ছে। তবে সে বিষয়ে কোনো উত্তর আমাদের দেওয়া হয়নি।

ট্রাম্পের শুল্কের ‘ন্যায্যতা’ দেখছেন না অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ‘তুলনামূলক কম’ দাবি করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এরপরও ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শূল্ক আরোপের ‘ন্যায্যতা’ থাকে না। গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিষয়টির সুরাহা করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলার কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ওদের সঙ্গে আরেকটা মিটিং আছে।

ইউএসটিআরের সঙ্গে যখন আনুষ্ঠানিক আলাপ করবে, তখন আমরা বুঝতে পারব। মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্তই আসুক, সেটার প্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এখন বৈঠকটা কিন্তু মোটামুটি পজিটিভ হবে। চিঠি একটা প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এখন ওয়ান টু ওয়ান নেগোশিয়েশন হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, এ নিয়ে আলোচনার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও এখন ওয়াশিংটনে রয়েছেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!