ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত রাখতে সারা দেশে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছে পুলিশ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে সারা দেশে এই সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেখানে সম্ভাব্য প্রার্থীর অপরাধনামা বা পুলিশ রেকর্ড ও জীবনবৃত্তান্তসহ ১১টি বিষয়ের তথ্য ছক আকারে প্রত্যেক থানা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অপরাধমূলক কার্যক্রম, পুলিশের রেকর্ড ও সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনি এলাকা, প্রার্থীর ধরন চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে নিরাপত্তার কৌশল নির্ধারণ করার জন্য এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এমন এলাকা চিহ্নিত করা যাবে, যেখানে বাড়তি নিরাপত্তা দরকার এবং কোনো প্রার্থী বা কোনো প্রার্থীর সমর্থকরা সহিংসতা উসকে দিতে পারেÑ সেটাও মূল্যায়ন করা হবে। এর লক্ষ্য সম্পর্কে সূত্র জানায়, সহিংসতা বা অনিয়ম হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিতে অসামঞ্জস্য থাকলে পুলিশের এই উদ্যোগের অপব্যবহারও হতে পারে।
দেশের প্রতিটি থানায় পাঠানো এক চিঠিতে পুলিশ সদর দপ্তর একটি টেবিল ফরমেটে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রতিটি প্রার্থীর দলীয় পরিচয়, রাজনৈতিক অবস্থান, অপরাধ ও পুলিশ রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য পরিচিতি সম্পর্কে তথ্য নিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাই করে সেগুলোও যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, এই কার্যক্রম নির্বাচনের দিন পর্যন্ত চলবে। সেখানে শুধু প্রার্থীদের নয়, তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দলীয় কর্মীদেরও তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। প্রতিটি থানার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) মাধ্যমে সংকলিত এসব তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হবে। যেমন: কোন এলাকায় অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন প্রয়োজন, কোথায় মোবাইল টহল বাড়ানো দরকার, কোথায় পুলিশ বা র্যাবের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা দরকার। এমনকি প্রার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও এই তথ্য সহায়তা করবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ সদর দপ্তর দেশজুড়ে পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই প্রশিক্ষণ নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন, আমরা না। কিন্তু, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ করতে চাই।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ঢাকা এবং সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমাদের বাহিনীকে প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দফায় দফায় এসব তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হয়। সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহযোগী বা দলীয় কর্মীদের অপরাধ কর্মকা-ের তথ্যও তালিকাভুক্ত করা হয়ে থাকে। এসব তথ্য থানা পুলিশ এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়ে থাকে।
সূত্রমতে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই নির্বাচনের সময় কোথায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করতে হবে, কোন এলাকায় মোবাইল টিম বা র্যাব-পুলিশের টহল জোরদার করতে হবে তা নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া প্রার্থীদের নিরাপত্তায় কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি নাÑ কাকে কতটুকু নিরাপত্তা দিতে হবে, মাঠপুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দপ্তর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই ও অন্যান্য সংস্থাও নির্বাচনি এলাকার প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহের শুরু করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।