ঢাকা মহানগরীতে সিএনজি চলাচলের অনুমতি চেয়ে ও রুট নির্ধারণের দাবিতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সদর দপ্তর গতকাল রোববার ঘেরাও করেন ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশাচালকরা। এ দিন সকাল ১০টা থেকে বিআরটিএ ভবন অবরোধে রাখেন তারা। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে বনানীর বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার একদল চালক। এতে করে সাধারণ যাত্রীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।
চালকরা সড়কে অবস্থান নিলে দুইপাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান। তিনি এ দিন দুপুর ২টায় বলেন, আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অটোরিকশাচালকরা বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সাড়ে ১২টার দিকে তারা সড়কে অবস্থান নিলে দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মহাখালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) দেলোয়ার বলেন, সিএনজিচালকরা কিছুদিন আগেও আন্দোলন করেছিল। তারা আজ (গতকাল) সকাল থেকে আন্দোলন করছে। তাদের অবরোধের কারণে রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি মো. জুয়েল বলেন, আমরা আমাদের অধিকার আদায় করব। আজ (গতকাল) সকাল ১০টা থেকে এখানে অবস্থান করছি। ঢাকা জেলার ২ থেকে ৩ হাজার সিএনজি মহানগরে চালানোর অনুমতি চেয়ে বারবার স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু বিআরটিএ বারবার আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে। আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দাবি না মানা পর্যন্ত বিআরটিএর কোনো কর্মকর্তাকে অফিস থেকে বের হতে দেব না। সিএনজিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে বিআরটি ভবনের রাস্তার ফুটপাতে অবস্থান নিই। দুপুরের দিকে বনানী থেকে ফার্মগেটমুখী সড়ক বন্ধ করে দিয়েছি। এরপর পরে উত্তরামুখী সড়কও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলেও সড়কে অবস্থান করতে থাকে চালকেরা। সে সময় আন্দোলনে নেতারা মাইকে ঘোষণা করেন, আপনারা কেউ সড়ক ছাড়বেন না। সড়ক ছাড়লে তাকে বেঈমান হিসেবে ভাবা হবে। সড়কে অবস্থান করুন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি যা-ই হোক, সড়ক ছেড়ে কেউ যাবেন না।
তবে বৃষ্টি শুরু হলে সড়ক থেকে আন্দোলনকারীরা সরে না গেলেও অনেকেই এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের নিচে ও পাশে থাকা ফুট ওভারব্রিজের ওপরে-নিচে অবস্থান নেন। এতে ফার্মগেটমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে উত্তরাগামী যানবাহনগুলোও পড়ে তীব্র যানজটে। মাইক থেকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়, কেউ বিআরটিএ ভবন থেকে বের না হতে পারে সবাই লক্ষ রাখবেন। একটা মানুষকেও যেন বের হতে দেওয়া না হয়। এখানে সব স্বৈরাচারের দোসর বসে আছে। পুলিশ প্রশাসন বিআরটিএ ভবনের ভেতরে ঢুকেছে, তারাও যেন বের হতে না পারে। বিআরটিএ চেয়ারম্যানও যেন এখান থেকে বের হতে না পারে সবাই লক্ষ রাখুন।
জানা যায়, ‘ঢাকা মেট্রো-থ’ সিরিয়ালের মতো ‘ঢাকা-থ’ সিরিয়ালের ৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশাচালক ঢাকা মহানগরে তাদের অটোরিকশা চালাতে চান। এ বিষয়ে চালক আফজাল হোসেন বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে মাসিক চুক্তিতে টাকার বিনিময়ে আমাদের গাড়িগুলো ঢাকা মহানগরের মধ্যে ঢুকতে দিত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ‘ঢাকা-থ’ সিরিয়ালের গাড়ি মহানগরের মধ্যে ঢুকলে মামলা দেওয়া হয়। আমরা চাই আমাদের গাড়িগুলো ঢাকার ভেতর ঢুকবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালের পর থেকেই অবরোধের কারণে মহাখালীমুখী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। কুর্মিটোলা থেকে বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও হয়ে মগবাজার পর্যন্ত যানজটের প্রভাব পড়ে। একইভাবে বিমানবন্দরমুখী লেনেও দেখা যায় যানবাহনের বাড়তি জটলা। ফলে অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেন। উত্তরার বাসিন্দা জাফর মোল্লা বেলা ১১টায় উত্তরা থেকে বাসে ওঠেন। দুপুর ২টায় তিনি বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী যানজটে আটকা রয়েছেন। এ যাত্রী বলেন, আমি জরুরি কাজে পল্টন যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। তবে এখনো চেয়ারম্যানবাড়ী বসে আছি, বুঝতে পারছি না কখন পৌঁছাতে পারব।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা ৩০ পর্যন্ত রাজধানীর ব্যস্ততম বনানী বিআরটিএ সামনের রাস্তা অবরোধে রাখেন যার ফলে কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা যায় তীব্র যানজটের চিত্র। রামপুরা, গুলশান, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় গাড়ির দীর্ঘ জট।