ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

গুলশানে চাঁদাবাজি

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক অপু গ্রেপ্তার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে সাবেক এমপির বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপুকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান। তিনি বলেন, ‘অপু ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন। তিনি দুই নামই ব্যবহার করতেন। সংবাদ সম্মেলন করে আমরা বিস্তারিত জানাব।’


চাঁদাবাজির ওই ঘটনায় এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


এই পাঁচজনের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। গত শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান ২ নম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ওই পাঁচজন। পরে ‘সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকা-ে জড়িত’ থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। পাশপাশি কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা রিয়াদের একটি বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকার চারটি চেক উদ্ধারের তথ্য দিয়েছিলেন তালেবুর রহমান।


এই চেকগুলো ‘ট্রেড জোন’ নামের একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া। প্রাপকের নাম ও তারিখবিহীন চেকগুলোর দুটি ১ কোটি করে এবং একটি ১০ লাখ, অপরটি ১৫ লাখ টাকার। ওই বাসা পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় এবং ট্রেড জোনের অফিস কলাবাগান এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার রিয়াদের বাড্ডার আরেকটি বাসা থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে গুলশান থানার পুলিশ। এই অর্থ সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ‘চাঁদা নেওয়া’ ১০ লাখ টাকার একটি অংশ বলে গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে রিমান্ডের সময় সে স্বীকার করে, বাড্ডায় তার একটি ভাড়া করা বাসা রয়েছে। এরপর ভোরে সেখানে গিয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।’


রিয়াদের সঙ্গে নাম আসা অপু গুলশান থানায় মামলার ২ নম্বর আসামি। তাকে ঢাকার ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তারের কথা শুক্রবার জানানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বাড্ডার তিন কক্ষের ওই বাসার একটি কক্ষে থাকতেন রিয়াদ। অন্যান্য রুমে চার-পাঁচজন করে থাকেন। রিয়াদের রুমটি ‘আধুনিক জিনিসপত্র’ দিয়ে সাজানো। রিয়াদ যেসব দামি পোশাক পরতেন, এ ধরনের পোশাক তার আগের বাসায় পাওয়া না যাওয়ায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন পরের বাসার সন্ধান পায় পুলিশ। রিয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি বলেছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্যের বাসা থেকে তারা যে ১০ লাখ টাকা ‘চাঁদা নিয়েছিলেন’ তার মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগে পেয়েছিলেন রিয়াদ। এ কাজে তার মূল অংশীদার কাজী গৌরব অপুসহ অন্যরা বাকি টাকা নেন।


ওসির ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিয়াদ ও অপু মিলে একটি ‘গ্রুপ’ করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন। তারা জমি দখলের পাশাপাশি ‘মব সন্ত্রাসের’ ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন। এটাই তাদের ‘পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল’।