- ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাজনীতি করার সুযোগ দেব না: মির্জা ফখরুল
- নির্বাচনের আগেই ফিরবেন তারেক রহমান
- ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই: রাকিব
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে কোনো দিন রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘ছাত্র সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগেই জনগণ তারেক রহমানের দেশে ফেরার ‘অপেক্ষায় আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচনের আগেই তারেক ফিরবেন, আশাবাদ ফখরুলের। ‘আমরা সবাই তাই চাই। উনি আসবেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, আমাদের পথ দেখাবেন।’ নেতাকর্মীদের বলেন বিএনপি মহাসচিব। সমাবেশ থেকে মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসসহ ৯ দফা ঘোষণা করে ছাত্রদল।
এর আগে কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান।
দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু হয়, তবে বৃষ্টিতে দমে না গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান, মিছিল ও ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন শাহবাগ এলাকায়। বাস বা পিকআপ দূরে থামিয়ে রেখে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছান নেতাকর্মীরা। তাদের প্রায় সবার মাথায় ব্যান্ড, হাতে জাতীয় ও ছাত্রদলের পতাকা। তারা স্লোগান দেন, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই’ প্রভৃতি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের বিভক্ত করার জন্য। আমাদের পাশের দেশ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে মাঝে মাঝে হুমকি দিচ্ছে। দেশ অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে কোনো দিন রাজনীতি করার সুযোগ দেব না।‘
তিনি বলেন, ‘তরুণেরা নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। আমাদের সামনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই বাংলাদেশকে নতুন করে তৈরি করার। সারা দেশ থেকে তরুণেরা এখানে এসেছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের দিন, একই সঙ্গে কষ্টের দিন। গত বছর এই দিনে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করছিল আওয়ামী লীগ।’
গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শত শত, হাজার হাজার ছাত্র প্রাণ দিয়েছে একদিন নয়, দুই দিন নয়, দীর্ঘদিন ধরে। শুধু ৩৬ দিন নয়, তারও আগে ১৫ বছর ধরে আমাদের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকেরা প্রাণ দিয়েছে। শুধু সুন্দর একটা বসবাসযোগ্য আবাসভূমি হিসাবে বাংলাদেশকে দেখার জন্য।’
সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ভারত শুধু খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দেয়নি, বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যারা আমাদের ভাই-বোনদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতেই হবে।’
যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা বারবার দাবি করেছি হাসিনার বিচারের। হাসিনার বিচার না হলে এ দেশের মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না। অনতিবিলম্বে হাসিনার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। জুলাই আন্দোলনের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হলে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসার মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম; ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও রাশেদ ইকবাল খান উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই: রাকিব
ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশে কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। গতকাল রোববার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শাহবাগে ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশ শুরুতেই তিনি এ কথা বলেন। রাকিবুল ইসলাম বলেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায়, ছাত্রদল চাইলে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে পারে। ছাত্রদল সব সময় শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জীবন বাজি রেখে বিগত সময়গুলোতে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা জেল-জুলুম, নির্যাতন-গুম-খুনের শিকার হয়েছে। আজ এখানে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমবেত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যদি নির্দেশনা দেন, নেতাকর্মীরা সারা দেশ অবরোধ করে দিতে পারে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণে ৯ দফা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল শাহবাগে ছাত্র সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এই প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দেন। ছাত্রদলের ৯ দফা হলোÑ ১. শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম নির্যাতন, গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করা এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য চর্চার স্থায়ী বিলোপ সাধন এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকা- প্রতিরোধে ছাত্রদল সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। ২. ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসযোগ্য কক্ষ এবং পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্রদল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ৩. ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি জনকল্যাণমুখী, পরমতসহিষ্ণু, উদার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মী নিবেদিত থাকবেন। শিক্ষার জন্য এবং রাষ্ট্র গঠনের সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং নারীদের জন্য শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্রদল কর্তৃক জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ৪. স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী চিন্তার সন্নিবেশনে রাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশপন্থি সার্বজনীন শিক্ষানীতি ও পাঠক্রম প্রণয়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ছাত্রদল। ৫. বেকারত্ব দূরীকরণের রাষ্ট্র কর্তৃক কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ছাত্রদল জোরাল উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের একাডেমিক এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধ এবং এসব পরীক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত করতে ছাত্রদল সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে। ৬. মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ৭, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯, ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভাবধারার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল। ৮. শিক্ষাঙ্গনসমূহে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো ভূমিকা রাখবে এবং ৯. বাংলাদেশে যেন আর কখনো ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ছাত্রদল সদা সোচ্চার থাকবে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার এবং সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা নিশ্চিত করতে ছাত্রদল আপামর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাবে।