আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাই ও মাদুরাইয়ে হবে জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ (অনূর্ধ্ব-২১)। এই বিশ^কাপে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দল। টুর্নামেন্টে মোট ২৪টি দল অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ পড়েছে ‘এফ’ গ্রুপে। তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়া। এরই মধ্যে বিশ^কাপ সামনে রেখে ক্যাম্প শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ। নতুন কোচও নিয়োগ দিয়েছে হকি ফেডারেশন। নেদারল্যান্ডসের সিগফ্রাইড আইকম্যানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এই নতুন কোচকে নিয়ে গতকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে হকি ফেডারেশন। আইকম্যান বলেছেন, আসন্ন হকি বিশ^কাপে বাংলাদেশ চমক দেখাতে চায়।
ইউরোপের কোচ হলেও আইকম্যান এশিয়ায় বেশি পরিচিত। প্রায় দেড় যুগ ধরে ওমান, জাপান, পাকিস্তানসহ নানা দেশের সিনিয়র হকি দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আইকম্যান এশিয়ান হকি ফেডারশেনের অন্যতম কোচিং এডুকেটরও। এবার স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের দায়িত্ব নিলেন এই ডাচ কোচ। বিশ^কাপে বাংলাদেশ কঠিন গ্রুপে পড়ায় বাস্তবিক অর্থে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা দেখছেন না আইকম্যান। তবে বেশ ইতিবাচক তিনি। এই কোচ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স বিশ^মানের দল। তাদের বিশ^কাপের মতো পর্যায়ে ফাইনাল খেলা ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। আমরা তাদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ লড়াই ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে চমক দেখাতে চাই।’
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.) জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ^কাপ পর্যন্ত কোচের দায়িত্ব পালন করবেন আইকম্যান। অল্প সময়ে ডাচ কোচের প্রতি চাহিদা প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিশ^কাপ ও আমাদের লেবেল আমরা বুঝি। তাই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার বা ওই পর্যায় খেলব এমন ঘোষণা দেব না। ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াকে ভয় না পাওয়া এবং তাদের বিপক্ষে লড়ে বিশ^কাপে আমাদের র্যাঙ্কিং অবস্থান উন্নতি করাই মূল লক্ষ্য।’ বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য মাত্র তিন মাস সময় পাবেন নতুন কোচ আইকম্যান। এই সময়সীমা পর্যাপ্ত কি না? ডাচ কোচ জানালেন, ‘কোচদের কাছে যত সময় পাওয়া যায় ততই ভালো। তিন মাস সময় মোটামুটি অর্থে যথেষ্ট। দীর্ঘ সময় অনুশীলন ও ক্যাম্প করানো বাংলাদেশের পক্ষে কষ্টসাধ্য। আমি এই সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ দলের ফিটনেস লেভেল উন্নতি করে খেলার মান উন্নয়ন করতে চাই।’ আগে কখনো বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই আইকম্যানের। তবে বাংলাদেশের হকির সম্পর্কে বেশ ধারণা রয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি জাপানের কোচ হই। এরপর থেকে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলকে মোকাবিলা করেছি। ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে প্রথম বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিলাম। বাংলাদেশের এই দলে (অনূর্ধ্ব-২১) বিকেএসপির অনেক খেলোয়াড় আছে। তারা মেধাবি।’ বাংলাদেশ জুনিয়র হকি দলের দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে আইকম্যান বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ ও হকি উন্নয়ন দুটোই আমার পছন্দ। অনূর্ধ্ব-২১ দল মূলত হকির উন্নয়নের জায়গা। তারাই আগামীর ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ প্রথমবার বিশ^ পর্যায়ে খেলবে, তাই এখানে এলাম। হকি এখন অনেক আধুনিক। গত বছর আমি যা কোচিং করিয়েছি, এখন সেটা পুরোনো মনে হয়। নিজেকে প্রতিনিয়ত বদলাতে হচ্ছে আধুনিকতার সঙ্গে।’ বর্তমানে দুই দেশীয় কোচ আশিকুজ্জামান ও মশিউর রহমান বিপ্লবের অধীনে চলছে হকি ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের পর পাকিস্তান ও ইউরোপে জুনিয়র দলের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করছে হকি ফেডারেশন। লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব) বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে চারটা ম্যাচ আর অক্টোবরের শেষ দিকে জার্মানি ও হল্যান্ডে ১০ দিনে ছয়টি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা করছি। ইউরোপে সূচি আগেই নির্ধারিত থাকে। আমাদের কোচের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে, সেই যোগাযোগের ভিত্তিতে আমরা ইউরোপে দল পাঠানোর ব্যাপারে আশাবাদী।’ জুনিয়র হকি বিশ^কাপের জন্য ৫ কোটি টাকার বাজেট করেছে ফেডারেশন। এ প্রসঙ্গে লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব) বলেন, ‘ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও যমুনা ব্যাংককে ধন্যবাদ। তারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সংস্থান হয়েছে। এতে দুই মাসের ক্যাম্প চলবে। আমরা মন্ত্রণালয়ে সভা করেছি, তারাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।’