রাজধানী ঢাকায় যানজট আর গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তির এক দিন পার করল নগরবাসী। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান। পাশাপাশি সকালে ছিল বিসিএস ও এইচএসসির পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা। ফলে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা দেয়। বেলা গড়াতেই যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। পাশাপাশি বাসস্টপগুলোয় দিনভর গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। ফলে প্রায় সারা দিনই ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
এদিকে এসব আয়োজন ঘিরে আগের দিনই সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ফলে রাজধানীর সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। তাই নিত্য ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসীকে হিমশিম খেতে হয়। তাদের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলো যেন এমন বড় সমাবেশ ছুটির দিনে আয়োজন করে।
গতকাল এনসিপি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে, ছাত্রদল শাহবাগে সমাবেশ করে।
এদিন, যাত্রীর চাপ বাড়ায় গণপরিবহনের সংকটে অনেককে প্রচ- ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে দেখা গেছে। কর্মজীবী মানুষ, অফিসগামী যাত্রী ও পরীক্ষার্থীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেয়েছেন। গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর ফার্মগেট কাওরান বাজার, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর রোডের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তানের দিকেও যানজট ছিল।
আসাদগেটে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করা যাত্রী জারিফ আলী বলেন, কয়েকটা বাস সামনে দিয়ে গেল। ভেতরের ওঠার মতো পরিস্থিতি দেখলাম না। গুলিস্তান যাব। না পেলে হেঁটে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।
এদিকে, সড়কে প্রচ- চাপের প্রভাব পড়ে মেট্রোরেলেও। ফার্মগেট, পল্লবী, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ফার্মগেট স্টেশনে টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী তালেক খান বলেন, রাস্তায় জ্যাম দেখে মেট্রো ধরলাম। কিন্তু এখানে এসেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন কম, ভোগান্তিতে নগরবাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মহাখালীতে রওনা করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী অনিকা ফেরদৌস। বেলা ৩টার দিকে বিজয় সরণি পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘বেলা ২টায় মহাখালীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। প্রথমত, কোনো গাড়িই পাইনি। তারপরও যা পেলাম, সেটা নিয়মিত চলাচলের পথ না ধরে এদিক-ওদিক করে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু শাহবাগ বন্ধ, গাড়ি নীলক্ষেত দিয়ে ধানমন্ডি দিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে বিজয় সরণি দিয়ে এখন মহাখালী যাচ্ছে। যে পথেই যাচ্ছে, ওখানেই জ্যাম। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তো আছেই।’ তিনি বলেন, দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন কম ও ভোগান্তিতে নগরবাসী, যা দেখার কেউ নেই।
এদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপরিবহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। শহরের কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, বনানী সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া এদিন সড়কে কম ছিল ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও।
বিজয় সরণি সিগন্যালে কথা হয় এয়ারপোর্ট পরিবহনের চালক আলিম মিয়া ও তার সহকারী মো. রাকিবের সঙ্গে। তারা জানান, ফুলবাড়িয়া থেকে তারা পল্টন-প্রেসক্লাব ও শাহবাগ হয়ে নিয়মিত চলাচল করেন। কিন্তু সমাবেশের কারণে গতকাল তাদের মৎস্য ভবন-কাকরাইল-মালিবাগ-মগবাজার হয়ে ঘুরে আসতে হয়। কিছু জায়গায় অন্য দিনের তুলনায় বেশি সময় থাকতে হয়। তবে সমাবেশ ঘিরে রাস্তায় গাড়ি কম বলে জানান তারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হানের সঙ্গে। উত্তরার বিএনএস সেন্টারে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘অন্য দিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি পেয়ে যাই। আজ (গতকাল) কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আধা ঘণ্টার ওপর অপেক্ষা করছি।’
মালিবাগ থেকে শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাছেক আলী। কিন্তু সমাবেশের কারণে শাহবাগ ও আশপাশের সড়ক বন্ধ থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে। পরে তিনি শিশুকে কোলে নিয়ে হেঁটে বাসার পথ চলতে থাকেন। বাছেক বলেন, ‘আমার বাসা মালিবাগে। রাস্তা বন্ধ থাকায় বাচ্চাকে নিয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে ঘুরপথে হাসপাতালে গেছি। ফেরার পথেও মৎস্য ভবন পর্যন্ত হেঁটে বাসায় যায়।’