ব্রিটিশ মূলধারায় বাঙালি কমিউনিটির আজকের সম্মানজনক অবস্থানের পেছনে রয়েছে আমাদের বাঙালির সেই পূর্বপুরুষদের অনেক অবদান। যাদের অনেকই যুগ যুগ ধরে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন তাদের মধ্যে বিশেষ করে এশিয়ান এসব ব্যবসায়ীদের একজন হলেন ইকবাল আহমেদ ওবিই (ঙইঊ) যেন জীবন্ত একজন কিংবদন্তি। ব্রিটেনের অন্যতম শীর্ষ ধনীদের তালিকার মধ্যে একজন সফল উদ্যোক্তা তিনি। বিশ^জুড়ে তিনি সফলতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে ব্রিটেনসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে তিনি ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন।
ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী সংগঠন ইউকেবিসিসিআই (The UK Bangladesh Catalysts of Commerce & Industry (UKBCCI) এর সভাপতি ও ডাইরেক্টর, ফাউন্ডার এবং প্রথম চেয়ারম্যান এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড এ ছাড়াও সীমার্ক গ্রুপ অফ কোম্পানিজ এবং আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অবদান প্রশংসনীয় তার গুণগান করেছেন ব্রিটিশ এমপি মন্ত্রিরাও। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ইকবাল আহমেদ ওবিই সম্মাননার পাশাপাশি পেয়েছেন ডিবিএ সম্মাননাও। এক সময়ের পারিবারিক ব্যবসা থেকে আজকের ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ গড়ে তুলেছেন বিশাল শিল্প প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে বাংলাদেশেই প্রায় ৬ হাজারের মতো মানুষকে কর্ম সংস্থান গড়ে দিয়েছেন। সফল, মেধাবী দেশপ্রমিক ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সবকটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের কাজে লাগিয়ে নিজ জন্মভূমিকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।
ব্রিটেনের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন। এক কথায় বিশ^ অর্থনীতিতে তিনি অবদান রাখছেন। সততা ও পরিশ্রম মানুষকে যে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে তার উদাহরণ হলো ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ। বিদেশে থাকলেও দেশের প্রতি আর দেশের মানুষের প্রতি তার দরদ । তাইতো এই জীবন্ত কিংবদন্তি চট্টগ্রামের সাগরিকায় গড়ে তুলেছেন ঐতিহাসিক এক ফ্যাক্টরি যাকে অনেকই ‘রানির বাড়ি’ হিসেবে বলে ডাকেন।
১৯৭৬ সালে ইকবাল ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি (বর্তমান আইবিসিও লিমিটেড) তৈরি করেন, যা হিমাহিত সামুদ্রিক খাবার এবং সকল ধরনের হিমায়িত খাদ্য পণ্য আমদামি ও বিতরণ করেন পুরো ইউরোপজুড়ে। ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ তিনিই সর্বপ্রথম ব্লাক টাইগার চিংড়ি আমদানি করেন বাংলাদেশ থেকে। ইকবাল ব্রাদার্স থেকে গড়ে উঠে সীমার্ক (Seafood Marketing International- Seamark), খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেন একজন সফল ব্যবসায়ী।
২০০১ সালে ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ ব্রিটেনের রানি কর্তৃক ওবিই (Officer of the Order of the British Empire) (OBE) উপাধি লাভ করেন। নিজস্ব মেধা আর চেষ্টায় তার ব্যবসা দিন দিন হতে থাকে সম্প্রসারিত। ধীরে ধীরে এক সময় বিশ^খ্যাত সীমার্ক গ্রুপের কারণে সফলতা ফিরে পান নিজের মধ্যে, ফলে উঠে আসেন ব্রিটেনের প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিদের কাতারে। ২০০৬ সালে সর্বপ্রথম ব্রিটেনের স্বনামধন্য গণমাধ্যম সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বাংরাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে উঠে আসে ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ এর নাম। সেই থেকে বিশ^জুড়ে আলোকিত হতে থাকেন তিনি। সীমার্ক পিএলসি ১৯৯৮ সালে কুইনস অ্যাওয়ার্ড এবং ১৯৯৯ সালে এশিয়ান বিজনেস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। ইউরোপের ব্যবসা জগতের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার ও তিনি অর্জন করেছেন। সীমার্ক বাংলাদেশে পর পর বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশ সরকার প্রধানের কাছ থেকে গোল্ড ট্রফি লাভ করেছে।
ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ এর জন্ম ১৯৫৬ সালে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার ওসমানী নগরের বুরুঙ্গা গ্রামে।
ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ বলেন- বাংলাদেশ এবং ব্রিটেনের মধ্যকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত সম্ভব। বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনাময় একটি দেশ। আর এই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্রিটেনের ব্যবসায়ীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পারলে দুই দেশের সম্পর্ক আর দৃঢ হবে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। ইতোমধ্যে তার নিজের মেধা, মননশীলতা আর অধ্যবসায় দ্বারা ইংল্যান্ডের মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন খুবই অল্প সময়ের মধ্যে। সততা আর কঠোর পরিশ্রম মানুষকে যে সত্যিই তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় এর জীবন্ত উদহরণ আমাদের কমিউনিটির আজকের অগ্রজদের একজন ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ। তার মত গুণী অগ্রজের জীবনের গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের কমিউনিটির আগামী পথ চলা আরও সহজ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
লেখক : সভাপতি, লিভারপুল বাংলা প্রেসক্লাব ইউ.কে