ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

বললেন তারেক রহমান

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুখ দেখাদেখি যাতে বন্ধ না হয়

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০১:২২ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ থাকবে। কিন্তু সেই ভিন্নমত নিরসনে আলোচনা হবে।

তবে জাতীয় ইস্যুতে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়; সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন, প্রয়োজন এবং প্রয়োজন।  কারণ আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম, দর্শন, মত যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার।

গতকাল বুধবার জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র‌্যালির পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়। কর্মসূচি ঘিরে দুপুর থেকেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
মাথায় নানা রঙের ক্যাপ পরে, হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে নয়াপল্টন থেকে বিজয় র‌্যালিতে যোগ দেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও বিজয় মিছিলে অংশ নেন অনেক নেতাকর্মী।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির এমন নেতাও রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও রয়েছে। এমনকি চার শতাধিক মামলা রয়েছে। গুম-অপরণের শিকার হয়েছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মী। শুধু ২৪-এর এক মাসে গণঅভ্যুত্থানে বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের বন্দুকের নল থেকে মায়ের কোলে থাকা চার বছরের শিশুও রেহাই পায়নি। ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্টের কারণে আমাদের অনেক সাহসী সেনা কর্মকর্তা হত্যাযজ্ঞের শিকার। শেখ হাসিনার আমলে দেশে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। 

আজকের এই মিছিল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তবে এ যাত্রা কিন্তু খুব সহজ নয়। ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা যাতে আলোর পথে অন্ধকারের রেখা টেনে যেতে না পারে। এ ব্যাপারে গণতান্ত্রিক জনগণকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের সামনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে না। দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের ভাইবোন, সন্তান-স্বজনদের জীবনের বিনিময়ে আমাদেরকে অর্জিত ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে আর কখনো ২৪-এর মতন রক্ত দেখতে হবে না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একজন নাগরিক হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে। তারেক রহমান বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বিজয়ের শুরুতে আমি স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রপ্রিয় দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, যিনি যেই দলেরই সদস্য, রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হোন না কেন। আমাদের অবশ্যই সবার একটি কথা মনে রাখা দরকার। ফ্যাসিট শাসন আমলে আমরা কেউই নিরাপদ ছিলাম না। আমাদের সন্তানেরা কেউ নিরাপদ থাকতে পারেনি। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতান্ত্রিক জনগণের জন্য সমগ্র বাংলাদেশটাকেই বরাবর বন্দিখানা, আয়নাঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। সুতরাং দেশে যদি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকে তাহলে নারী কিংবা পুরুষ,  সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু কেউই নিরাপদ নই। একমাত্র গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। সেজন্যই আসুন, দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য, হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারগুলোর সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং চর্চা করি। 

বিজয় র‌্যালিতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিজয় র‌্যালি উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিজয় র‌্যালির নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন মহিলা দলের নেতাকর্মী। বিজয় র‌্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, জহুরুল হক শাহজাদা মিয়া, ড. এনামুল হক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল আলম বাবুলসহ ঢাকা বিভাগের আওতাধীন জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা যে সফলতা উদযাপন করছি সেটি শুধু ৩৬ দিনের নয়। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগ সংগ্রামের কথা ভোলা যাবে না। বুঝতে হবে, এই সফলতা একদিনের নয়। এই সফলতা ৩৬ দিনের নয়। এই সফলতা ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ এক-এগারোর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন, কেউ গতকালকের ঘোষণাপত্রের বক্তব্যকে অপোজ করেছেন। কালকে ঘোষণাপত্র ঘোষণা হয়েছে, বৃষ্টির মধ্যে ভিজে আমরা সেখানে ছিলাম। দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমিও এটাকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, তবে শুধু একটি কথা বলতে চাই। সেখানে ২৩ বছরের সংগ্রামের পর যে স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম রাখা হয়নি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ২০২৫-এর ৫ আগস্ট বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি হয়েছে। আমাদের প্রতিশ্রুতি, এই বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে কার্যকর গণতন্ত্রের। তিনি বলেন, আমরা সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই বাংলাদেশ হবে এক নীতির বাংলাদেশ। সবার আগে বাংলাদেশ, আমাদের কোনো প্রভু থাকবে না, বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে। এই বাংলাদেশ তাঁবেদারমুক্ত থাকবে। এই বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলব। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের জনমানুষের প্রত্যাশা, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কার্যকর হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্রের সাংবিধানে গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্র কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে, আমাদের প্রত্যাশিত সমাজ বিনির্মাণ হবে। প্রত্যাশিত সমাজ বিনির্মাণ হবে। প্রত্যাশিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হবে।

এটাই হবে আজকের দিনের অঙ্গীকার। এটাই হবে আজকের দিনে আমাদের শপথ। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আগামী দিনের যেসব সংস্কার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হবে, সনদ স্বাক্ষরিত হবে। প্রত্যেকটি সংস্কার পরবর্তীতে মতামত নেবে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। বাস্তবায়িত হবে একমাত্র বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়, বাংলাদেশের সব সাংবিধানিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য।
২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিজয় অর্জনের জন্য সহযোগিতা করায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে, ছাত্রদেরকে এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সহযোগিতায় আমরা এই বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি আমাদের নেতা তারেক রহমানকে সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং পরে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা কারাভোগ করেছি, নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছি কিন্তু কখনো মাথা নত করিনি। আমরা লড়াই করেছি, সামনের দিকে গিয়েছি। এ সময় তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।