রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

বললেন জিএমপি কমিশনার

হানিট্র্যাপের শিকার ব্যক্তির ভিডিও করায় তুহিন হত্যা, গ্রেপ্তার ৮

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

হানিট্র্যাপের শিকার ব্যক্তির ভিডিও করায় তুহিন হত্যা, গ্রেপ্তার ৮

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, হানিট্র্যাপের শিকার এক ব্যক্তিকে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় ঘাতকেরা সাংবাদিক আসাদ্জ্জুামান তুহিনকে হত্যা করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে এ হত্যা মামলায় সরাসরি বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে। গতকাল শনিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জিএমপি কমিশনার। অন্যদিকে তুহিন হত্যাকা-ের ঘটনায় বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান জানান, আলোচিত এ ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে ছয়জনকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং দুজনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় জিএমপি কমিশনার জানান, এই হত্যাকা-ের দায় আমরা এড়াতে পারি না, আমাদের ব্যর্থতা ও জনবলের স্বল্পতা রয়েছে, যার কারণে ইচ্ছা করলেও পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে তেমন কিছু করতে পারে না।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান (৩৪), তার স্ত্রী গোলাপী বেগম (২৮), তাদের দুজনকে গাজীপুর জেলা সদরের ভাবনীপুর এলাকা থেকে এবং পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার সোনাহার গ্রামের স্বাধীনকে (২৮) জিএমপি শিববাড়ী এলাকা থেকে, খুলনার সোনাডাঙ্গার ময়লাপোঁতা গ্রামের হানিফের ছেলে আল-আমিনকে (২১) ডিএমপির তুরাগ থানা থেকে, শেরপুরের নকলার চিতলিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সুমন ওরফে সাব্বির (২৬), কুমিল্লার হোমনা থানার কাশিপুর অনন্তরপুরের হানিফ ভূইয়ার ছেলে শাহ জালালকে (৩২) ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে এবং কিশোরগঞ্জ থেকে শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জানান, তুহিনকে হত্যা করার কিছু আগে পারুল আক্তার ওরফে গোলাপী নামের নারীকে ব্যবহার করে হ্যানিট্র্যাপের ফাঁদ পেতেছিল সন্ত্রাসীরা। ঘটনার আগে বাদশা নামে এক ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পারুল আক্তার তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে কথা বলা চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বাদশা তাকে ঘুসি মারেন। এরপর আগে থেকে ওত পেতে থাকা গোলাপীর সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাদশাকে কোপ দেয়। আহত বাদশা দৌড় দিলে সন্ত্রাসী দল তাকে ধাওয়া দেয়। আর এ সময় ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ধারণ করেছিলেন সাংবাদিক তুহিন।  পরে সন্ত্রাসীদের চাপ সত্ত্বেও ভিডিও ডিলিট করতে অস্বীকার করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় সাংবাদিক তুহিন দৌড়ে একটি মুদি দোকানে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। 

পুলিশ কমিশনার বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অপরাধীদের ধরতে তৎপর হয়। পরে ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে আটজনকে শনাক্ত এবং সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কেটু মিজানের বিরুদ্ধেই ১৫টি মামলা রয়েছে। 

এ সময় পুলিশ কমিশনার নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেন, সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না। আমাদের ব্যর্থতা ও জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। গাজীপুর মহানগরীতে প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশের জনবল কম। সীমিত জনবল দিয়ে বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন সম্ভব নয়, জনগণের সম্পৃক্ততা দরকার। সুরক্ষার দায়িত্ব আমার ওপর ছিল। আমরা সাধারণত দুটি কাজ করি প্রিভেনশন (অপরাধ প্রতিরোধ) ও ডিটেকশন (অপরাধ উদ্ঘাটন)। প্রিভেনশন আমরা করতে পারিনি। প্রিভেনশন সব সময় করা যায় না।

বিশ্বের কোনো দেশেই ক্রাইম শূন্যে নামানো সম্ভব হয়নি। তাই শত চেষ্টার পরও অপরাধ হয়ে যেতে পারে। যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। দ্রুততম সময়ে মামলার বিচার সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ দমন করা যাবে। আসামিরা যদি না-ও স্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণই অপরাধ প্রমাণ করবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে ক্রাইম বেড়ে যায়। এটা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়া আগের রেজিম এই জেলায় শক্তিশালী। দলটি গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করছে। সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে। এই নজরদারি করতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তবে মানুষের স্বস্তি ফেরাতে কাজ করছে জিএমপি।

সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদ, দোষীদের দ্রুত বিচার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সারা দেশের জেলায় জেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার এসব কর্মসূচিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে অনেক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যদি এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, তাহলে হয়তো সাংবাদিক তুহিনকে আজ প্রাণ দিতে হতো না। এ সময় প্রতিবাদকারী সাংবাদিকেরা তুহিন ছাড়াও সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবি করেন। তারা তুহিন হত্যার বিচারকাজ দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে করার দাবিও জানান। তারা বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে থেকে যারা খুনিদের মদত দেয়, তাদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

জিএমপির বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছেন তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপর একটি মামলার বাদী তুহিন হত্যার আগে সংঘটিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আপাতত আটজন গ্রেপ্তার হলেও বাকিদের ধরার চেষ্টা চলছে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!